সিকিম হয়ে শিলিগুড়িতে ফেরা পর্যটকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। সিকিম থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছনোর পরও তাঁরা অদ্ভুত ভাবে চুপচাপ। কী ভাবে ফিরলেন সিকিম থেকে, অনেকে সেই কথা মনেই করতে চাইছেন না আর। শিলিগুড়ি থেকে তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরতে ব্যস্ত সবাই। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, আদৌ আর বাড়ি ফিরতে পারবেন কি না, সে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তাঁরা। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন বাড়ি ফিরতে পারলেই শান্তি।
মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ বিপর্যয়ের কথা জানতে পারেন সিকিমে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকেরা। তখন থেকে পরিবার পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু তত ক্ষণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে মোবাইল পরিষেবা। কান পাতলেই খালি অশান্ত তিস্তার শোঁ-শোঁ শব্দ। সেই জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছে মানুষ। ভেসেছে ঘরবাড়ি, সেতু, রাস্তা— সব। সেই থেকে শুরু আতঙ্কের প্রহর। দু’দিন বাদে শুক্রবার দুপুরে শিলিগুড়ি নেমে হাঁফ ছাড়ছেন সিকিম থেকে ফেরা ওই পর্যটকেরা। আবহাওয়ার খানিকটা উন্নতি হওয়ায় সকাল থেকেই রংপো, কালিম্পং, পেডং, আলগাড়া থেকে লাভা, গরুবাথান হয়ে সমতলে নামতে শুরু করেছেন তাঁরা। কয়েক দিন পর আবার পাহাড়ি পথে বাঁক কাটাতে দেখা গেল সিকিমের নম্বর প্লেট সংবলিত ভাড়াগাড়িগুলোকে। আপাতত এই রুটকেই ‘লাইফ লাইন’ বলে মনে করছেন পর্যটকেরা।
সংখ্যাটা কম হলেও গাড়ির চাকা যে গড়াতে শুরু করেছে, সেটাই অনেক বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে গাড়িভাড়া এতটাই বেশি যে চোখ কপালে উঠেছে তাঁদের। বর্ধমানের বাসিন্দা উৎপল পাল বেড়াতে গিয়েছিলেন সিকিম। শিলিগুড়িতে একটি ভাড়াগাড়িতে বসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক বলা যায় না। এখন তো বড় সমস্যা পেট্রল পাম্পগুলোতে পেট্রল, ডিজেল না থাকার জন্য সেগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বহু পণ্যবাহী গাড়ি আটকে রয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তবে পরপরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সেনা-সহ সিকিম প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’’ উৎপলের সংযোজন, ‘‘মঙ্গলবার আমাদের ফেরার কথা ছিল। সে দিন থেকেই আটকে ছিলাম।’’ কৃষ্ণকান্ত মুখোপাধ্যায় নামে আর এক জন পর্যটকের কথায়, ‘‘খুব ভয়ানক পরিস্থিতি ওখানে। বাড়ি-গাড়ি, রাস্তা— সব ভেসে চলে গিয়েছে। বহু মানুষের কোনও খোঁজ নেই। দু’দিন ধরে হোটেলে জেগে কাটিয়েছি। সব মিলিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ।’’
অনামিকা কর থেকে পল্লবী মুখোপাধ্যায়, সিকিম থেকে ফেরা সমস্ত পর্যটক স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অনামিকার কথায়, ‘‘মঙ্গলবার রাত থেকেই প্রশাসন কাজ করছে। যার জেরে আজ আমরা শিলিগুড়ি নেমে স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছতে পারছি।’’ কেমন ছিল দু’দিনের অভিজ্ঞতা? তিনি বলেন, ‘‘চোখের সামনে সব কিছু ভেসে যতে দেখেছি। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি ঠিক হচ্ছে।’’ পল্লবী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাত থেকেই জানতে পেরেছি অবস্থার কথা। বুধবার জানতে পারলাম, কোথাও গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না। তখন থেকেই আতঙ্কে ছিলাম। আজ অনেক চেষ্টা করে অন্য রাস্তা দিয়ে এলাম। বাড়ির লোকের সঙ্গে এ ক’দিন কোনও যোগাযোগ নেই। আমরা যেখানে ছিলাম, হড়পা বানের পর দোকানপাট সব বন্ধ। শুকনো খাবার খেয়ে দু’দিন কাটিয়েছি।’’ অন্য দিকে, সুযোগ বুঝে গাড়িভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণ। পর্যটকেরা জানাচ্ছেন, যেখানে মাথাপিছু দেড় হাজার টাকা ভাড়া দিয়েছিলেন, ফেরার পথে এক এক জনকে গুণতে হয়েছে চার হাজার টাকা।
পড়াশোনার সূত্রে সিকিমে ছিলেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা রূপম সেন। রংপো পার করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতেন। থাকতেন সেখানকার একটি হস্টেলে। শুক্রবার বাড়ি ফেরার পথে ওই ছাত্র বলেন, ‘‘মঙ্গলবার থেকে প্রতিটা মুহূর্ত ভয়ে ভয়ে কাটিয়েছি। আজ রাস্তা খানিকটা ঠিক হওয়ার কালিম্পং হয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছোলাম।’’ হিমালয়ান ফার্মাসির পড়ুয়া অরিত্র মিস্ত্রির কথায়, ‘‘হস্টেলে তো খাবারও কমে আসছিল। বুধবার থেকে আমাদের চিন্তা ছিল কী খেয়ে বাঁচব! তাই চেষ্টা করছিলাম, কী ভাবে তাড়াতাড়ি সমতলের দিকে আসা যায়। কিন্তু কোনও উপায় ছিল না। রাস্তাঘাট বন্ধ। বড় গাড়ি নেই, ছোটা গাড়ির সংখ্যা হাতে গোনা। তার পরও ভাড়াও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যে দিন কাটিয়েছি, তা বলার নয়।’’
অন্য দিকে, জংশনের সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্টের গাড়ির চাকা কবে চলবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। শিলিগুড়ির জংশনে এসএনটি টার্মিনাসে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একের পর এক বাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy