প্রতীকী ছবি।
শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে রেলের একটি ডিভিশনাল সদর দফতর তৈরির দাবি নিয়ে টালবাহানা অনেক দিনের। উত্তর-পূর্বের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়ি উত্তরের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র। আন্তর্জাতিক সীমান্ত-বাণিজ্যের দিক থেকেও শিলিগুড়ির গুরুত্ব যথেষ্ট। তার পরেও সদর দফতর করার ব্যাপারে রেলের বিবেচনায় কোনও দিনই স্থান পায়নি শিলিগুড়ি। ব্যবসায়ীমহল তো বটেই, রাজনৈতিক মহলও এই নিয়ে বহু বার বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে।
প্রাক-স্বাধীনতা আমল পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছিল শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন। বাংলাদেশের উপর দিয়ে সরাসরি কলকাতায় যাতায়াত, বাণিজ্য চলত। শোনা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নেতাজিও এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেছেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা এবং দেশভাগের পরে ছবিটা হঠাৎই বদলে যায়। স্বাধীনতার ১১ বছরের মাথায় কাটিহার এবং আলিপুরদুয়ারকে আলাদা দু’টি ডিভিশন করা হয় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের অধীনে। শিলিগুড়ি জংশন হয়। ষাটের দশকে তৈরি হয় এনজেপি স্টেশন। তার পর থেকে আর কিছু বদল হয়নি। এই কয়েক দশকে শিলিগুড়ির গুরুত্ব বেড়েছে বই কমেনি। এনজেপি এ-১ স্টেশনের মর্যাদা পেয়েছে। কাটিহার ডিভিশনের মধ্যেই বিহারের থেকে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের অধীনে থাকা এ রাজ্যের ট্রেন লাইনের দৈর্ঘ্য অনেক বেশি। ব্যবসায়িক লেনদেন বিপুল। তা ছাড়াও, রাজ্যেই আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যবাহী দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের টয় ট্রেন পরিষেবাও রয়েছে। যার সংরক্ষণ নিয়ে মাঝেমধ্যেই নানা চিন্তা শুরু হয়। সেই সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ হয় কাটিহার ডিভিশন থেকে। কেন শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে একটি আলাদা ডিভিশন তৈরি করা হবে না, তা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই সরব হয়েছেন এলাকার মানুষ। উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের নেতা সুরজিৎ পাল বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। তখন যা হয়েছে, হয়েছে। এখন কিন্তু এনজেপি বা শিলিগুড়িতে ডিভিশন সদর তৈরির কথা ভাবার সময় এসেছে।’’
রেলকর্তাদের যুক্তি, কোনও একটি এলাকার সুযোগ-সুবিধা এবং গতিবিধি বাড়াতে হলে সেটিকে ডিভিশন সদর তৈরি করতে হবে— তার কোনও মানে নেই। এখানে আলাদা গুরুত্ব দিতে আগে একটি এরিয়া ম্যানেজারের পদ ছিল। তা তুলে দিয়ে এডিআরএম এবং স্টেশন অধিকর্তার পদ তৈরি করা হয়েছে। চারটি শ্রেণিতে ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ারদের দফতর এনজেপিতেই। রেল বৈদ্যুতিকীকরণের একটি দফতর রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আবার এনজেপি থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমার্শিয়াল ম্যানেজারের দফতর সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ।
এ সবের পরেও কিন্তু রেলের কোনও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, কোনও ব্যবসায়িক কাজের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় কাটিহারের দিকেই। এমনকি, এনজেপি-তে রেলের একরের পর একর জমি বেহাত হয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তাই নিয়েও কোনও সিদ্ধান্তের জন্য কাটিহারেরই মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। এর আগে রাজ্যের শাসক দল এমনও অভিযোগ তুলেছিল যে, কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসকদলের প্রতীক এক নয় বলেই শিলিগুড়িকে দীর্ঘদিন থেকেই গুরুত্বহীন করে রাখা হয়েছে। সরাসরি সে কথা না বলেও স্থানীয় মানুষের দাবি, সময়ের চাহিদা বিচার করে শিলিগুড়িতে হোক আর একটি ডিভিশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy