প্রতীকী ছবি
কেউ সরকারি ঋণের টাকায় ধান কিনে গরম বালিতে ভেজে খই ফুটিয়ে বাজারে বিক্রি করেছেন। কেউ আবার ওই টাকায় পাট বুনে তৈরি করেছেন ঘর সাজানোর জিনিস। বেশ কয়েক বছরের চেষ্টায় তাঁরা স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন প্রত্যন্ত গ্রামের ওই মেয়েরা। এত দিন পরে লকডাউনে সেই ‘ঋণ’ই যেন শোধ করলেন তাঁরা, সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে।
জলপাইগুড়ি জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির কাছে প্রশাসনের অনুরোধ ছিল, লকডাউনের সময়ে রোজগারহীন মানুষের পাশে যদি কোনওভাবে দাঁড়ানো যায়। এই ডাকে এমন সাড়া মিলবে, ভাবতে পারেননি অনেকে। লকডাউনের সময়ে জলপাইগুড়ির বিভিন্ন গ্রামের মেয়েরা জেলা জুড়ে ২৭ হাজার পরিবারকে কিছু না কিছু সাহায্য পৌঁছে দিয়েছেন। এবং এর জন্য এক টাকাও প্রশাসনের কাছ থেকে দাবি করেননি তাঁরা। স্বনির্ভর হওয়ার সময় যে টাকা তাঁরা জমিয়েছিলেন, সেই লাভের কড়িই দিয়েছেন সাহায্যে। যাকে জেলার লোকজন ‘অন্নপূর্ণার ভাণ্ডার’ বলেই উল্লেখ করছেন।
প্রশাসনের রিপোর্টে উঠে এসেছে নানান তথ্য। যেমন, জেলার সাতটি ব্লকেই অসহায়দের চাল, ডাল, সয়াবিন, আলু, তেল, আনাজপাতি দিয়ে সাহায্য করেছে মেয়েদের দল। মোট ২২৫০ জন মেয়ে নিজেদের টাকা দিয়ে প্রায় ১৭ হাজার পরিবারকে আনাজপাতি দিয়েছেন। মোট কত চাল, আনাজ বিলি হয়েছে, সে তথ্যও জোগাড় করেছে প্রশাসন। লকডাউনের সময়ে ৭টি গোষ্ঠীর ১৪ জন মেয়ে গোষ্ঠী রান্নাঘর বা কমিউনিটি কিচেনে ১২০ জন বাসিন্দাকে খাইয়েছেন। বিভিন্ন গোষ্ঠীর ৫৫ জন মহিলা মিলে হাজার হাজার মাস্ক তৈরি করে দশ হাজার পরিবারের কাছে পৌঁছেছেন। গোষ্ঠীগুলি দেখভালের দায়িত্বে থাকা জলপাইগুড়ির জেলা গ্রাম উন্নয়ন সংস্থার প্রকল্প আধিকারিক দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই রিপোর্টের পাতা যত উল্টেছি, মন ভাল হয়ে গিয়েছে। যে মেয়েরা নিজেরা এত কষ্ট করে স্বাবলম্বী হয়েছেন, তাঁরা যে ভাবে অন্যের কষ্ট বুঝে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা অভূতপূর্ব। অনেক অন্ধকারের মাঝেও এ যেন আলোর দিশা।’’
কী বলছেন মেয়েরা? জলপাইগুড়ি শহর ছোঁয়া খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গোষ্ঠীর মেয়েরা ৫৫৬টি পরিবারকে চাল, ডাল, সয়াবিন, সাবান, তেল বিলি করেছিলেন। ৫০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। স্বনির্ভর সঙ্ঘের সদস্য রেবা দে বললেন, “স্কুলের পড়ুয়াদের ইউনিফর্ম তৈরির বরাত পেয়ে লাভ করেছিলাম। সেই লাভের টাকা। লকডাউনের সময়ে সবাই মিলে দিনরাত পরিশ্রম করে প্রায় ৩৫ হাজার মাস্কও তৈরি করলাম। সেগুলি সরকারি অফিসে দিয়ে টাকা পেয়েছি। এই পুরো টাকাটাই সাহায্যের জন্য দিয়েছি।” ঝাড়আলতার একটি গোষ্ঠী ৪০০ পরিবারকে চাল-আনাজ দিতে খরচ করেছে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। গোষ্ঠীর সদস্য তপতী রায় বললেন, “গোষ্ঠীর লাভের অ্যাকাউন্টে এত টাকা ছিল না। তাই বিভিন্ন প্রশিক্ষণে ভাতা বাবাদ নিজেদের পাওয়া টাকা সকলে দিয়ে দিয়েছি।’’
অনেকেই বলছেন, এ ভাবেই যেন ভাণ্ডার ভরে থাকে এই অন্নপূর্ণাদের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy