Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সেচের অভাবে বোরোচাষ শিকেয় বালুরঘাটে

তীব্র দাবদাহে শুকিয়ে গিয়েছে এলাকার সমস্ত পুকুর। জমিতে জলসেচের জন্য ভরসা ছিল বিদ্যুত চালিত সেচ-পাম্প। কিন্তু শর্ত পূরণ করেও বিদ্যুত বন্টন কোম্পানি চাষিদের সাব মার্সিবল পাম্পে বিদ্যুতের-সংযোগ দেয়নি বলে অভিযোগ। ফলে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট ব্লকের অযোধ্যা এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকার জমিতে বোরো ধানের চাষ মার খেয়েছে।

(বাঁ দিকে) শুকিয়ে গিয়েছে বোরোচাষের জমি। (ডান দিকে) অযোধ্যা গ্রামে ধানের চারার হাল দেখাচ্ছেন চাষি। ছবি: অমিত মোহান্ত

(বাঁ দিকে) শুকিয়ে গিয়েছে বোরোচাষের জমি। (ডান দিকে) অযোধ্যা গ্রামে ধানের চারার হাল দেখাচ্ছেন চাষি। ছবি: অমিত মোহান্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪৭
Share: Save:

তীব্র দাবদাহে শুকিয়ে গিয়েছে এলাকার সমস্ত পুকুর। জমিতে জলসেচের জন্য ভরসা ছিল বিদ্যুত চালিত সেচ-পাম্প। কিন্তু শর্ত পূরণ করেও বিদ্যুত বন্টন কোম্পানি চাষিদের সাব মার্সিবল পাম্পে বিদ্যুতের-সংযোগ দেয়নি বলে অভিযোগ। ফলে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট ব্লকের অযোধ্যা এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকার জমিতে বোরো ধানের চাষ মার খেয়েছে।

চাষের মরসুম শেষ হতে চলেছে। চাষিরা বোরোর আবাদ করতে না পারায় চরম বিপাকে পড়েছেন। ইতিমধ্যে জলের অভাবে বীজতলা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেচহীন ওই এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে সাব-মার্সিবল পাম্পের উপর নির্ভর করে প্রতিবার অন্তত ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমিতে এলাকার চাষিরা গ্রীষ্মকালে বোরোর চাষ করেন। এবার হাল বলদ দিয়ে জমি চষে, বীজতলা তৈরি করে জলের অভাবে ধান বুনতে না পেরে চরম ক্ষতির মুখে পড়ে মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের।

অযোধ্যা গ্রামের চাষি পলাশ মন্ডলের উদ্যোগে বসানো সাব মার্সিবল পাম্পের উপর নির্ভর করে গত দু বছর এলাকার অন্তত ৩০ জন ছোট চাষি বোরো ধানের চাষ করেন। বিদ্যুত বন্টন কোম্পানির বালুরঘাট জেলা দফতরে আবেদন করে বোরো মরসুমে তিন মাসের জন্য সাবমার্সিবল পাম্পে বিদ্যুত সংযোগের অনুমতি পান পলাশবাবুরা। সাবমার্সিবল চালিয়ে বিস্তৃর্ণ এলাকার জমিতেও সেচের ব্যবস্থা হয়। জলের যোগান পেয়ে এলাকার চাষিরাও প্রতিবছর বোরোর চাষ করেন। পলাশবাবুর অভিযোগ, গত বছর মরসুমের মাঝপথে শিলাবৃষ্টির ফলে মিটারটি খারাপ হয়ে যায়। নতুন মিটার সংযোগের জন্য আবেদন করেও বিদ্যুত দফতর থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। পরিদর্শনেও যাননি সংশ্লিষ্ট দফতরের কোনও কর্মী। এরফলে মিটার রিডিংও হয়নি বলে তার অভিযোগ। এরপর বিদ্যুতের বিল বাবদ ৬৮ হাজার টাকা মেটানোর জন্য তিনি চিঠি পান। অথচ ওই তিনমাস বোরো চাষের মরসুমের জন্য বিদ্যুতের বিল বাবদ প্রতিবছর ২২ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা বিল দিয়ে আসছেন বলে পলাশবাবুদের দাবি।

তিনি জানান, বিদ্যুত দফতরে গিয়ে কিভাবে এত টাকার বিল হল জানতে চাইলে তাকে ওই টাকাই দিতে হবে বলে কয়েকটি কিস্তি করে প্রথম দফায় ২৫ হাজার টাকা জমা দিতে বলেন বিদ্যুত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। গত বছর ৭ মার্চ পলাশবাবু ২৫ হাজার টাকা জমা দেন। তখনই অকেজো মিটার বদলে দিয়ে চলতি বছরের বোরো চাষের শুরুতে সাবমার্সিবলে সংযোগ দেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয়। জমিতে আবার সেচ মিলবে আশায় পলাশবাবু সহ পাশের বিস্তৃর্ণ এলাকার চাষিরা বোরো ধান চাষের জন্য জমি তৈরি থেকে বীজতলা সম্পূর্ণ করে ফেলেন। কিন্তু ওই সাবমার্সিবলে বিদ্যুতের সংযোগ মেলেনি বলে অভিযোগ।

অযোধ্যা গ্রাম থেকে কয়েকবার বালুরঘাট শহরের বেলতলাপার্ক এলাকায় বিদ্যুতের জেলা কার্যালয়ে দরবার করে কোনও সাড়া না পেয়ে পলাশবাবু সহ কয়েকজন চাষি ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিদ্যুত দফতরের বিরুদ্ধে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। চাষিদের অভিযোগ, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ঘুরেও এখনও কোনও সুরাহা হয়নি। প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ করে সাবমার্সিবল পাম্প কিনে জমিতে মেশিন বসানোর ঘর তৈরি করে আতান্তরে পড়ে রাতের ঘুম ছুটেছে পলাশবাবুর।

ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেচের অভাবে বিস্তৃর্ণ এলাকার জমি খটখটে ধুধু প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। অকোজে হয়ে রয়েছে পাম্পঘর। রোদে পুড়ে হলুদ হয়ে যাওয়া ধানের বীজ চারা গবাদিপশুকে খাওয়াতে বাধ্য হয়েছেন চাষিরা।

এলাকার ছোট চাষি নিরঞ্জন মন্ডল, পরিমল সরকার, সুভাষ মন্ডল, রিন্টু মন্ডলদের মতো কেউ দু’বিঘা কেউ তিন বিঘা জমি তৈরি করে এখন বোরো চাষ করতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন। তারা বলেন, ‘‘কুইন্টাল প্রতি ৯০০ টাকা দামে ধানের বীজ কিনে বীজতলা তৈরি করি। হাল দিয়ে জমি কর্ষণের খরচ তো রয়েইছে। উপরন্তু বোরো ধানের চাষটাই আর হবে না। ক্ষতিপূরণ কি ভাবে হবে, আমরা ভেবে পাচ্ছিনা। সংশ্লিষ্ট বিদ্যুত দফতরের অ্যাসিন্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার আবীর হোসেন মন্ডল বলেন, ‘‘বিষয়টি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে বিচারাধীন। ফলে কোনও মন্তব্য করব না।’’

এ দিকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাজুড়েই তীব্র দাবদাহ অব্যাহত। মঙ্গলবার বিকেলে বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ডে বিদ্যুত দফতরের এক কর্মী সুভাষ রায় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE