Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
পুজো ভাসিয়ে এ কোন শরৎ

নষ্ট খাবার, ক্ষতি কয়েক কোটির

মহাষষ্ঠীতে প্রথম রাউন্ডে বৃষ্টি উপেক্ষা করে পথে নেমেছিল শিলিগুড়ি-সহ গোটা উত্তরবঙ্গ। মণ্ডপের সামনে উপচে পড়েছিল ভিড়। বরুণদেবকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে চালিয়ে খেলেছিল জনস্রোত।

বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে এ ভাবেই পলিথিন দিয়ে খাবার ঢেকে রেখেছেন বিক্রেতারা। শিলিগুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র

বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে এ ভাবেই পলিথিন দিয়ে খাবার ঢেকে রেখেছেন বিক্রেতারা। শিলিগুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৫
Share: Save:

মহাষষ্ঠীতে প্রথম রাউন্ডে বৃষ্টি উপেক্ষা করে পথে নেমেছিল শিলিগুড়ি-সহ গোটা উত্তরবঙ্গ। মণ্ডপের সামনে উপচে পড়েছিল ভিড়। বরুণদেবকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে চালিয়ে খেলেছিল জনস্রোত। কিন্তু, সপ্তমী থেকে দশমী— মাত্র এক দিন (মহাষ্টমী) ছাড় দিয়ে বাকি দিনগুলিতে একাই ব্যাট করে গেলেন বরুণদেব। দশমীর সন্ধ্যা থেকে একাদশীর রাত অবধি বৃষ্টির দেবতা যেন লাগাতার ওভার বাউন্ডারি হাঁকালেন। তাতে ঠাকুর দেখা কিংবা বিসর্জনের মিছিল ম্লান হয়ে গেল। ঘরে বসে রইল জনতা। পাহাড়ে-ডুয়ার্সের অনেক জায়গায় হোটেল বন্দি হয়ে থাকলেন দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা। রাস্তায় লোকজন না-নামায় চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লেন ছোট গাড়ি, অটো-টোটো, রিকশার চালকরা। বিপুল অঙ্কের ক্ষতি হল ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের। উপরন্তু, ধস, হড়পা বানের ভ্রুকুটির জেরে পুজোর মরসুমের পর্যটন ব্যবসায় বড় মাপের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিপর্যস্ত শিলিগুড়ি

শিলিগুড়িতে অনেকেই পুজোর সময় খাবারের অস্থায়ী স্টল দেন। এ বার প্রবল বৃষ্টিতে তাঁদের মাথায় হাত।

অন্য সব খাবার তো আছেই, পুজোর সময় এ বার বেশ কিছু বিরিয়ানির দোকান হয়েছিল। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী সংগঠনের অনেকেই মুখে মুখে হিসেব দিচ্ছেন, শুধু দশমীর দিন শিলিগুড়িতে অন্তত ১০ হাজার প্লেট বিরিয়ানি নষ্ট হয়েছে। বিধান রোডের একটি হোটেলের কর্ণধার বাবলা ঘোষ বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি-সহ গোটা উত্তরবঙ্গেই পুজোর সময়ে বিরিয়ানির জনপ্রিয়তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ফলে নানা জেলা সদর মিলিয়ে অন্তত দু’হাজার স্টল বসে বিরিয়ানির। তা ছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাড়তি আয়োজন তো থাকেই।’’ কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিসের উত্তরবঙ্গ শাখার এক কর্মকর্তা সঞ্জিৎ সাহাও জানান, পুজোর মুখে বৃষ্টিতে কেনাকাটা কিছুটা মার খেলেও পরে আবহাওয়ায় ঝকঝকে হওয়ায় পুষিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, পুজোর ক’দিনে ব্যবসা না হওয়ায় ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়।

প্রায় ১০০টি সংগঠন নিয়ে গঠিত ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গলের (ফোসিন) সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাসের হিসেব অনুযায়ী, দুর্যোগের জন্য পুজোর ক’দিনে অন্তত ৫০ কোটি টাকার লেনদেন হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘কয়েকশো স্ট্রিট ফুড বিক্রেতা মোমো-চাউমিন, ঠান্ডা পানীয়, বোতলবন্দি জল, ফুচকা, চাট, চপ-ঘুগনি, মোগলাইয়ের আয়োজন করেও ক্রেতা পাননি। অন্তত ৩০০টি বিরিয়ানির স্টলের ব্যবসা হয়নি। রোলের দোকানের হালও অনেক জায়গায় খারাপ। পুজোয় ছোটখাটো মেলায় নানা পসরা নিয়ে বসেন অন্তত ২ হাজার বিক্রেতা। প্রায় সকলের মাথায় বাজ পড়েছে। গড়ে রোজ ৮ কোটি টাকার লেনদেনের ক্ষতি হয়েছে। মহরমের দিনও বৃষ্টি কমেনি। ফলে, মোট ক্ষতির বহর ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।’’

পুজোর উদ্যোক্তাদের মতে, আর্থিক ক্ষতির পরিমাণটা আরও বেশি হতে পারে। শিলিগুড়ির অন্যতম ক্লাব মিত্র সম্মিলনীর সম্পাদক উদয় দুবের মতো প্রবীণরা অনেকেই এমন ভাবছেন। উদয়বাবু বলেন, ‘‘ষাটের দশকে পুজোর মরসুমে টানা ১৪ দিন বৃষ্টি হয়েছিল। জলপাইগুড়িতে বিধ্বংসী বন্যা হয়েছিল। এ বারও ভিড়ের প্রতিযোগিতায় নামে যে ক্লাবগুলি, তাঁদের ক্ষতি হয়েছে। কয়েক হাজার স্ট্রিট ফুড বিক্রেতারও প্রচুর লোকসান হয়েছে।’’ উদয়বাবু জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং পঞ্জিকা, দু’জায়গাতেই বিরূপ আবহাওয়ার আশঙ্কা ছিল।

এবং অন্যরাও

মালবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘড়ি মোড় লাগোয়া স্টেশন রোডে রেস্তোরাঁর ব্যবসা নির্মল দে-র। দু’দশক ধরে ব্যবসা করে আসা নির্মলবাবু এ বার মেনুতে হরেকরকম খাবার রেখেছিলেন। বিরিয়ানি যেমন ছিল সেই তালিকায়, ছিল ফিস ফিঙ্গার, চিকেন ললিপপের মতো স্ন্যাক্সও। সপ্তমীতে সকাল থেকে বৃষ্টি হলেও দুপুরের পরে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় ব্যবসা ভাল হয়। কিন্তু অষ্টমী থেকে দশমী সব কিছু বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে। ফলে লোকসানের বহরও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। করুণ দশা ফুটপাতে খেলনার পসরা সাজিয়ে বসা বাবলু সরকারেরও। বাবলু জানান, তিনি শিলিগুড়ি গিয়ে ৫ হাজার টাকার খেলনা কিনে এনেছিলেন। কুড়ি থেকে চল্লিশ টাকার খেলনা সামান্য কিছু বিক্রি হয়েছে। সব মিলিয়ে বিক্রিবাটা হয়েছে মাত্র ২ হাজার টাকার। বাকি ৩ হাজার টাকার খেলনাই বৃষ্টিতে রং চটে নষ্ট হতে বসেছে।

রায়গঞ্জে পুজোর চার দিন শহরের কসবা মোড় থেকে শিলিগুড়ি মোড় ও জেলখানা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে প্রায় এক হাজার অস্থায়ী খাবারের দোকান বসে। ব্যবসায়ীদের দাবি, এ বছর বৃষ্টির জন্য খাবার বিক্রি হয়েছে অনেক কম। বেশ কয়েক জন তৈরি খাবার ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন নবমীর রাতে। তবে কিছু ব্যবসায়ী বৃষ্টি দেখে বেশি খাবার বানাননি। রায়গঞ্জের নিউ মার্কেট এলাকায় অস্থায়ী খাবার ব্যবসায়ী গোপাল সাহা ও সুদর্শনপুর এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী বাবু সরকারের দাবি, ‘‘বহু খাবারই কম বিক্রি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী তৈরি করে রাখা বিভিন্ন খাবার ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন।’’ কোচবিহারের ব্যবসায়ী রাজেন বৈদ জানান, বৃষ্টিতে মানুষ বেরোতে পারেননি। তাই ব্যবসা খারাপ হয়েছে।

বৃষ্টি চলবে

আগামী ৪৮ ঘণ্টা মেঘলা থাকবে উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের আকাশ, জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। আগামী ২৪ ঘণ্টা একই রকম বৃষ্টির পূর্বাভাসও রয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক সুবীর সরকার বলেন, ‘‘যা অবস্থা তাতে আগামী দু’দিন আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি থাকবে। বৃষ্টিও চলবে। লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত মেঘলা আবহাওয়া, বৃষ্টি থাকবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Foods spoil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy