Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
এনজেপি

ছেলের ফোনে বাবাকে বাঁচালেন রেল আধিকারিক

ফোনে কথা বলার সময়েই বুঝতে পেরেছিলেন বাবার গলার স্বর জড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। অসুস্থতার জেরে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছিলেন দ্রুত। তপসিয়ার বাড়িতে বসে আতঙ্কে গা হিম হয়ে গিয়েছিল অমিতাভ সেনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৫
Share: Save:

ফোনে কথা বলার সময়েই বুঝতে পেরেছিলেন বাবার গলার স্বর জড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। অসুস্থতার জেরে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছিলেন দ্রুত। তপসিয়ার বাড়িতে বসে আতঙ্কে গা হিম হয়ে গিয়েছিল অমিতাভ সেনের। ৬৮ বছর বয়সী তাঁর বাবা তখন কলকাতায় ফেরার জন্য বসেছিলেন নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। দার্জিলিং মেলের অপেক্ষায়। সঙ্গে কেউ নেই। পকেটে বেশ ভাল পরিমাণ টাকা।

বিষয়টি জানতে পেরে সহকর্মীরা ইন্টারনেট ঘেঁটে এনজেপির এক রেল অফিসারের মোবাইল নম্বর খুঁজে দিয়েছিলেন বিধ্বস্থ অমিতাভবাবুকে। ওপরমহলের কোনও সুপারিশ ছাড়া, ফোন করে বললে আদৌও কী কিছু হবে? ভাবতে ভাবতেই নম্বরটি ডায়াল করেছিলেন অমিতাভবাবু।

রিং হয়েছিল উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের এনজেপির এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথী শীলের মোবাইলে। ফোনের ও প্রান্ত থেকে পার্থবাবু শুনেছিলেন, ‘‘স্যার আপনি কে আমি জানি না। তবে আমার বাবা এনজেপি প্ল্যাটফর্মে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সঙ্গে বেশকিছু টাকা আছে। কী হবে জানি না।’’ বাকি ঘটনাটি এখন এনজেপি-র রেল অফিসার-কর্মীদের মুখে মুখে ফিরছে।

ঘটনাটি গত ৩০ জুনের। বিকেল পাঁচটা নাগাদ তপসিয়ার বাসিন্দা অমিতাভবাবুর ফোন পেয়েছিলেন সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থবাবু। তাঁর বাবা অসুস্থ জানতে পেরেই এনজেপির ডেপুটি স্টেশন সুপারেটনডেন্ট এবং চিফ টিকিট ইন্সপেক্টরকে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে খোঁজ করার নির্দেশ দেন। পার্থবাবু নিজে ফোন করেন অমিতাভবাবুর বাবা তপনবাবুর মোবাইলে। অসুস্থ তপনবাবু কোনওরকমে জানাতে পারেন তিনি জনাহারের সামনে রয়েছেন। পার্থবাবুও গলা শুনে অসুস্থতা টের পান। দ্রুত রেল হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স যায় স্টেশনে। অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তপনবাবুর থেকে সব টাকা নিয়ে সরকারি ভাবে জমা করতে। রেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তপনবাবুকে। চিকিৎসকরা জানান, তপনবাবু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর শরীরের ডানদিক অসাড় হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

গভীর রাতে পার্থবাবু রেল হাসপাতাল থেকে জানতে পারেন, তপনবাবুর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এরপরেই সরকারি নিয়ম-রীতির পরোয়া না করে সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থবাবু শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করান তপনবাবুকে। পরদিন সকালে অমিতাভবাবুরা শিলিগুড়ি পৌঁছে জানতে পারেন,তপনবাবু বিপদ কাটিয়ে উঠেছেন।

রেলের তরফে ফিরতি ট্রেনের আসন সংরক্ষণ করে দেওয়া হয়। এক দিন পরে তপনবাবুকে নিয়ে সকলে তপসিয়া ফিরে যান। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সে দিন তপনবাবুর কাছে লাখখানেক টাকা ছিল। টাকা তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। অমিতাভবাবুর কথায়, ‘‘এই ঘটনা রেল দফতরের প্রতি আমাদের ধারণাই বদলে দিয়েছে। রেলের ওই অফিসার যা করেছেন, তাতে ওঁকে যত ধন্যবাদ দিই না কেন যথেষ্ট নয়।’’

কী বলছেন পার্থবাবু?

বিষয়টি তিনি চেপেই রাখতে চেয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এতো মানবিকতা। যে কেউ করবেন। খোদ রেলমন্ত্রীও ট্যুইটারে যাত্রীদের অভিযোগ জেনে পদক্ষেপ করেছেন। আমিও জানার পরে যতটুকু সম্ভব করেছি।’’

বুধবার দুপুরেও তপনবাবুর শারীরিক পরিস্থিতি খোঁজ নিতে পার্থবাবু ফোন করেছিলেন অমিতাভবাবুকে। সে সময় পার্থবাবুর চেম্বারে ছিলেন অন্য আধিকারিকরা। তাঁরা বিষয়টি জেনে অফিসারদের বার্ষিক অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রেলের ওয়েবসাইটেও ঘটনাটি দিতে চান তাঁরা। শিলিগুড়ি জংশনের চিফ কমার্শিয়াল ইন্সপেক্টর রাজদীপ বসু বলেন, ‘‘রেলকে এ দেশের জীবন-রেখা বলা হয়। পার্থবাবুর মতো অফিসাররা এই জীবনের স্পন্দনকে অব্যাহত রেখেছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Rail officer Passenger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy