Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

থামের আড়ালেই নজরের আড়াল

কোচবিহার রাজবাড়ি। দেশ তো বটেই, বিদেশ থেকেও যে প্রাসাদ ঘুরতে আসেন পর্যটকরা। সেই রাজবাড়িতেই অবাধ যাতায়াত চলে দিনভর। এমনকী, মোটরবাইক নিয়েও ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। রাজবাড়ির ভিতরে কয়েকটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থাকলেও তার বেশিরভাগ কাজ করে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১১
Share: Save:

প্রধান ফটকের বাইরে দাঁড়ানো জনা দু’য়েক নিরাপত্তাক্ষী। আওয়াজ আসে, ‘‘দাদা ব্যাগে কী আছে?’’ তেমন কিছু নয়, ‘‘কয়েকটা জামাকাপড় আর কাগজপত্র।’’ উত্তর পাওয়ার পরে আরেকবার ‘‘দেখি একটু।’’ দেখা আর হয়ে ওঠে না। শুধু ব্যাগটা একবার ধরেই ছেড়ে দেওয়া। এর পরেই পনেরো টাকার টিকিট। একবার তা কিনে নিলেই যেন অবাধ যাতায়াত। একটি মেটাল ডিটেক্টর থাকলেও তা কেবল নাম কা ওয়াস্তে। কে ভিতর দিয়ে গেল আর কে তা এড়িয়ে বাইরে দিয়ে যাচ্ছে, সে দিকে নজর নেই কারও। শুধু একজন জানিয়ে দেয়, “দাদা মোবাইলটা বন্ধ করে নেবেন।”

কোচবিহার রাজবাড়ি।

দেশ তো বটেই, বিদেশ থেকেও যে প্রাসাদ ঘুরতে আসেন পর্যটকরা। সেই রাজবাড়িতেই অবাধ যাতায়াত চলে দিনভর। এমনকী, মোটরবাইক নিয়েও ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। রাজবাড়ির ভিতরে কয়েকটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থাকলেও তার বেশিরভাগ কাজ করে না। সন্ধ্যার পরে বিরাট প্রাসাদের অনেক অংশেই অন্ধকার হয়ে থাকে। কেউ যদি বড় বড় গম্বুজ খিলানের পাশে লুকিয়ে থাকেন, সহজেই নজর এড়াতে পারেন যে কারও।

সন্দেহ করা হয়, ডিসেম্বর মাসে রাজবাড়ি মিউজিয়াম থেকে গায়ত্রী দেবীর ছবি নিয়ে পালিয়ে যাওয়া যুবক টিকিট কেটেই ঢুকে পড়েছিল রাজবাড়িতে। তার পর সব বন্ধ হয়ে পড়লে ছবি কাঁধে নিয়ে পাঁচিল টপকে পালিয়ে যায় সে। ২০১৬ সালে বিলিয়ার্ড রুম থেকে বল চুরির ঘটনাও ঘটে। পরে সেউ বল মাঠে পাওয়া যায়।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মী বলেন, “এতবড় বাড়ি। কেউ কোথাও লুকিয়ে থাকলে খুঁজে পাওয়া ভার। এটা সবার জানা। তাই সিসি ক্যামেরা সর্বত্র থাকলে ভাল হয়।” রাজবাড়ির অধিকাংশ কক্ষ অবশ্য বন্ধ করে রাখা হয়। যে কয়েকটি খোলা আছে তার মধ্যে প্রথমেই দরবার কক্ষ। যা রোমের সেন্ট পিটার্স ক্যাথিড্রালের অনুকরণে তৈরি। সেখানে কিছু অনেক পুরনো ফটোগ্রাফ রয়েছে। রাজাদের শিকারে যাওয়ার দৃশ্য থেকে রাজবাড়ির অন্দরমহলের নানা ছবি।

রাজকুমারী থেকে রানিদের ছবিও রয়েছে সেখানে। ঘরে নিরাপত্তারক্ষীদের কাউকেই দেখা যায় না। তার পরেই একের পর এক বিলিয়ার্ড রুম, সাজঘর সহ একাধিক রুম। যেগুলি এখন মিউজিয়াম। রাজার ব্যবহারের জিনিসপত্রের সঙ্গে যেখানে শোভা পায় উত্তরবঙ্গের নানা জনজাতির সংস্কৃতির ছবি। তাঁদের ব্যবহার করা নানা সামগ্রী রাখা হয়েছে সেখানে। বিলিয়ার্ড রুমের পাশেই বসে থাকা এক কর্মীর কথায়, “আমাদের দায়িত্ব দেখাশোনা করার। আমরা সেটুকু করি।” একটু দূরেই রাজাদের সময় ব্যবহৃত মুদ্রা, অস্ত্র রাখার ঘর। আগামীদিনে যেগুলি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা হবে।

পুরাতত্ব বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজবাড়িতে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। পুরাতত্ত্ব বিভাগের নিজস্ব কর্মী ছাড়াও একটি বেসরকারি সংস্থার চার জন সশস্ত্র কর্মী রয়েছেন। রাজবাড়ির ভিতরে জেলা পুলিশের একটি ক্যাম্প রয়েছে। সেখানে পাঁচ জন কর্মী থাকেন । ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ২৪ ঘণ্টা ওই কয়েকজন পাহারায় থাকেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “রাজবাড়িতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।” পুরাতত্ত্ব বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, “প্রত্যেকেই এখন অনেক সতর্ক রয়েছে।”

এলাকার লোকজনের প্রশ্ন, এই প্রাসাদ শুধু কোচবিহারের নয়, সারা রাজ্যেরই গর্ব। তার দেখভাল কেন আরও ভাল ভাবে করা হবে না। এমনই প্রাসাদ লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেস, প্যারিসের ল্যুভর বা সেন্ট পিটার্সবার্গের হার্মিটেজ প্রাসাদের মতো বড় প্রাসাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন নিশ্ছিদ্র, তেমনই করা উচিত কোচবিহারের রাজবাড়ির ক্ষেত্রেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch Behar Palace Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy