শোকস্তব্ধ: অর্জুনের পরিবার। নিজস্ব চিত্র।
মাথায় বল লেগে ১১ বছরের এক নাবালকের মৃত্যুর ঘটনায় ফের একবার সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল৷ জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের শুক্রবার সকালে অর্জুন অধিকারী নামে ওই নাবালকের মৃত্যু হয়৷ হাসপাতালের বিরুদ্ধে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই নাবালকের বাড়ির লোকেরা৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা৷
অর্জুনের বাড়ি মোহিত নগরের নয়াবস্তি এলাকায়৷ পঞ্চম শ্রেিণর ছাত্র ছিল৷ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির কাছেই একটি মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে যায় অর্জুন৷ সেই সময় আচমকাই প্লাস্টিকের একটি বল তার মাথার ডান দিকে লাগে৷ বাড়ির লোকেরা তাকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে যান৷ সেখানে তাকে ভর্তি করা হয়৷
অর্জুনের বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তির পর অর্জুনকে শুধুমাত্র স্যালাইন ও একটি ইনজেকশন দেওয়া হয়৷ তার মাথার সিটি স্ক্যানও করা হয়নি৷ অর্জুনের মা বার্নি অধিকারী বলেন, ‘‘গভীর রাতে তার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়৷ বারবার নার্সদের কাছে গিয়ে বলি৷ কিন্তু তারা জানান, সকালের আগে চিকিৎসকরা আসবেন না৷’’ এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন অর্জুনের বাড়ির লোকেরা৷ হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, ‘‘আমাদের যা করা সম্ভব ছিল তা করা হয়েছে। রাতেই সার্জেন ওই কিশোরকে দেখেছিলেন। আরও চিকিৎসক দেখেছেন।’’ মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সঞ্জয় ঢালি বলেন, অর্জুনকে দেখার পরে তিনি তাকে সার্জারি বিভাগে রেফার করে দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যকর্তারা সব বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
দিনমজুর প্রবীণ অধিকারীর পুত্র অর্জুনের মৃত্যুতে শোকের অভিঘাত কাটাতে পারেনি তার বন্ধুরা। তাদের কারো কাছেই নেই ক্রিকেট ব্যাট৷ কিন্তু কচিকাচাদের ক্রিকেট খেলায় তা এতটুকুও বাধা হয়নি৷ কারণ বল তো তাদের কাছে রয়েছেই৷ তাই ব্যাটের বিকল্প হয়ে উঠেছিল গাছের ডাল৷ তা দিয়েই রোজকার মতো বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্রিকেট খেলায় মেতে উঠেছিল ১০ থেকে ১৩-১৪ বছরের খুদেদের দলটি৷ কিন্তু খেলার মাঝে একটি বল অর্জুনের মাথায় লাগতে যেন সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেল৷ ছন্দ কেটে গেল গোটা খেলাটারই৷ অর্জুনের মৃত্যুর পর এক ধাক্কায় সেই মাঠটাই যেন আজ পরিণত হয়েছে শ্মশানে৷
তবে শুধু ওই মাঠটাই নয়৷ হলদিবাড়ি মোড়ের কাছে মোহিত নগরের গোটা নয়াবস্তি এলাকাটাতেই যেন শুক্রবার শ্মশানের নিস্তব্ধতা৷ যে নিস্তব্ধতা ভেঙে মাঝে মধ্যে ভেসে আসছে দুই মায়ের কান্না৷ আর তাদের সান্ত্বনা দিয়ে চলছেন এলাকার মানুষ৷ তবে তাতেও কান্না থামছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy