স্কুলে প্রিয়াঙ্কা বর্মণ। নিজস্ব চিত্র।
অফিস ঘর থেকে ছাত্রীকে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতে দেখেই হাঁক দিলেন দিদিমণি। ছাত্রীর কাছে প্রায় ছুটে গেলেন তিনি। ‘কত মাস চলছে?’ দিদিমণির প্রশ্নে, লাজুক স্বরে হবু মায়ের উত্তর, ‘আট মাস’। তার পর ছাত্রীকে ধরে ক্লাসে বসালেন দিদিমণি। আসলে, লকডাউন বদলে দিয়েছে হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী আরএনরায় উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা বর্মণকে। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হলেও স্নাতক হওয়ার স্বপ্নে ফের স্কুলে হাজির প্রিয়াঙ্কা। তাই মঙ্গলবার না পারলেও, বুধবার স্কুলে আসে সে। প্রিয়াঙ্কার মনের জোরকে কুর্নিশ জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষিকারাও।
হবিবপুর ব্লকের কানতুর্কা গ্রামের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা। তার বাবা বিনয় বর্মণ টোটো চালক। ফেব্রুয়ারি মাসে লকডাউনে নিম বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা টোটো চালক অজিত সরকারের সঙ্গে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয় প্রিয়াঙ্কার। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হলেও, মাধ্যমিক পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তার পর দীর্ঘ কয়েক মাস পরে খুলেছে স্কুল। শ্বশুর বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। তাতে কী? স্কুলে ঠিক-ই হাজির প্রিয়াঙ্কা। তিনি বললেন, ‘‘১৮ বছর হয়ে যাওয়ার পর বিয়ে দেন বাবা, মা। তবে আমার পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছে। আমি স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলেজে পড়তে চাই। আমার পাশে স্বামী আছে, শ্বশুর, শাশুড়িও রয়েছেন। তাঁদেরও খুব ইচ্ছে আমি স্নাতক হই।’’ তবে আগের মতো ছুটে, সিঁড়ি ভেঙে ক্লাসরুমে পৌঁছতে পারল না, এটুকুই যা আক্ষেপ সলজ্জ প্রিয়াঙ্কার।
তাঁর স্বামী অজিত বলেন, ‘‘আর্থিক কারণে আমার স্কুলে পড়া তেমন হয়নি। তবে আমি না পারলেও, আমার স্ত্রীকে পড়াতে চাই।’’ এ দিন স্ত্রীকে স্কুলে রেখে যান অজিতই। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়াশোনায় বেশ ভাল প্রিয়াঙ্কা। এ বারে মাধ্যমিকে ৩৯০ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ঝুম্পা সিকদার বললেন, ‘‘প্রিয়াঙ্কার পড়াশোনার ইচ্ছেকে আমরা কুর্নিশ জানাচ্ছি। ওর পাশে আমরা আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy