বর্ষার আগেই এমন হাল রাস্তার। বাপি মজুমদারের তোলা ছবি।
গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে রাস্তার দাবি বাসিন্দাদের। গত লোকসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাস্তা তৈরি হবে বলে আশ্বাসও মিললেও কার এগোয়নি।
এমনকী এই নির্বাচনের আগেও কাজ শেষ হওয়ার আশ্বাস মেলে বলে অভিযোগ। বন্ধ রাস্তা একই রকম বেহাল পড়ে থাকায় বিপাকে হরিশ্চন্দ্রপুরের গন্নাথপুর, ভৈরবপুর, শিরীষবোনা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। আর ওই অর্ধসমাপ্তভাবে রাস্তাকে ঘিরে সরগরম এলাকার রাজনৈতিক আবহও।
কয়েক মাস আগে রাস্তার দাবিতে পোলিও কর্মসূচি বয়কট করেছিলেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। তার পরেও রাস্তা না হওয়ার দায় একে অন্যের কাঁধে চাপাতে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। ওই এলাকায় প্রচারে গেলেই রাস্তার কাজ শুরু হয়েও কেন মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল সেই প্রশ্নে জেরবার হতে হচ্ছে প্রার্থীদের। পাশাপাশি কেন ওই রাস্তার কাজ শেষ করতে গত এক বছরেও প্রশাসন উদ্যোগ নেয়নি, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আশ্বাস মিললেও দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষে বছর খানেক আগে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েও আচমকা বন্ধ হয়ে যায়। এ দিকে রাস্তায় বালি-মাটি ভরাট করে পাথরও ফেলা হয়ে গিয়েছিল। ফলে বর্ষার জলে সেই বালি-মাটি ধুয়ে, পাথর উঠে গিয়ে রাস্তা আরও বেহাল হয়েছে। রাস্তা জুড়ে তৈরি হয়েছে ছোটবড় গর্ত। বৃষ্টি হলে তাতে জল জমে। অন্য সময়ে ধুলো-পাথরে পথ চলা দায়।
হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের বিডিও কৃষ্ণচন্দ্র দাস অবশ্য বলেন, ‘‘এমন অভিযোগের কথা কেউ আমাকে জানায়নি। তবে নির্বাচন মিটলেই দ্রুত যাতে সমস্যা মেটে সে জন্য ব্যবস্থা নেব।’’
স্থানীয় ভালুকা পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, গত বছর বর্ষার আগে জগন্নাথপুর থেকে শিরীষবোনা হয়ে ভৈরবপুর পর্য়ন্ত রাস্তার কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ওই সড়কের জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ মেলে। রাস্তায় মাটির কাজের পর ছোট পাথরও ফেলা হয়। তার পর আচমকাই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ভালুকা পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান ওবাইদুর রহমানের অভিযোগ, ‘‘প্রশাসনের সর্বস্তরে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেও ফল মেলেনি। রাস্তাটি যাতায়াতের সম্পূর্ণ অযোগ্য।’’
রাস্তার এক দিকে জগন্নাথপুর, অন্য প্রান্তে ভৈরবপুর। জগন্নাথপুর ও ভৈরবপুরে দু’টি পাকা রাস্তা দু’দিকে চলে গিয়েছে। কিন্তু মাঝে তিন কিলোমিটার রাস্তা না থাকায় শিরীষবোনা তো বটেই, ফতেপুর, টালবাংরুয়া, সোনাকুল, হরদমনগর, কমলাবাড়ি, মাটিপাড়া, হরদমনগর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের ওই বেহাল রাস্তা পেরিয়েই স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পঞ্চায়েত, ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে স্কুলে যাতায়াত করতে হয় বলে অভিযোগ।
বিদায়ী বিধায়ক তথা হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূল প্রার্থী তজমুল হোসেন বলেন, ‘‘কেন রাস্তার কাজ বন্ধ তা কংগ্রেসীদের জিজ্ঞাসা করুন। কেন না ওই রাস্তা তো জেলা পরিষদই দেখভাল করছে।’’
জেলা পরিষদের প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধক্ষ তথা কংগ্রেস প্রার্থী মোস্তাক আলমের পাল্টা দাবি, ‘‘ওঁরা তো বিধায়কের কাছেও রাস্তার জন্য বরাদ্দের দাবি জানিয়েছিলেন। জেলা পরিষদই সমস্যার কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরির বরাদ্দ জোগাড় করেছিল।’’
ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী রফিকুল আলম বলছেন, ‘‘যাঁদের ক্ষমতা ছিল তারা কিছু করেননি। তাই আমাকেও প্রচারে গিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু আমার সেই সুযোগ ছিল না। সেটাই বাসিন্দাদের বলছি।’’
রাজনৈতিক নেতাদের চাপানউতোরে বীতশ্রদ্ধ হরদমনগরের সুব্রত দাস, গৌতম প্রামানিক, শিরীষবোনার মহম্মদ সহিদুল্লাহ, মহম্মদ সেলিমরা বলেন, ‘‘একটা রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েও বন্ধ হয়ে গেল! অথচ তার পরেও নেতানেত্রী বা প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই, এটা ভাবতেও অবাক লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy