ইতিহাস: জলপাইগুড়ি জেলা গঠন নিয়ে দেড়শো বছর আগের সেই সরকারি বিবৃতি। নিজস্ব চিত্র
দেড়শো বছরে পা দিল জলপাইগুড়ি জেলা৷ অবিভক্ত বাংলায় ইংরেজদের তৈরি করা শেষ জেলা হিসাবে জলপাইগুড়ি এক সময় ভারে ভারে অনেকটাই এগিয়েছিল৷ কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবক্ষয়ের দিকেও এগিয়েছে এই জেলা৷ পড়াশোনা থেকে শুরু করে চিকিৎসা—প্রায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এখন জলপাইগুড়ির বাসিন্দাদের ছুটতে হচ্ছে শিলিগুড়িতে৷ ফলে আশাহত স্থানীয়রা৷ তাদের কথায়, এত বর্ষিষ্ণু একটি জেলার দেড়শো বছরেও কেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে না, তার ওষুধ বাতলাতে হবে। তাঁদের দাবি, এমন অবক্ষয়ের দায় এড়াতে পারেন না প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতারাও৷
১৮৬৯ সালে রংপুর জেলার একাংশ ও ডুয়ার্সের ১৮টি দুয়ারের ১১টিকে নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা গঠিত হয়৷ জেলার ইতিহাসবিদদের কথায়, ইংরেজরা এরপর আর অবিভক্ত বাংলায় কোনও জেলা তৈরি করেননি৷ ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত জলপাইগুড়ি জেলা রাজশাহী বিভাগের সদর দফতর হিসাবে ছিল৷ দেশভাগের পর জলপাইগুড়ি প্রেসিডেন্সি বিভাগে গেলেও, ১৯৬২ সালে আলাদা জলপাইগুড়ি বিভাগ তৈরি হয়৷
জলপাইগুড়ির বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, চা বাগানকে ঘিরে অর্থনীতি থেকে শুরু করে সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রেই জলপাইগুড়ি উত্তরবঙ্গের বাকি জেলাগুলো থেকে এগিয়ে ছিল৷ কিন্তু ৬৮-র বন্যার পর জেলার বেশিরভাগ চা বাগানের মালিকানার পরিবর্তন হল৷ বাগানগুলোর সদর দফতর জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়ে গেল৷ যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম রেলের ক্ষেত্রেও রানিনগরের বদলে গুরুত্ব পেল নিউ জলপাইগুড়ি৷ মেডিক্যাল কলেজও জলপাইগুড়িতে হল না৷ চলে গেল শিলিগুড়িতে৷ জেলার কিছু অংশ চলে গেল শিলিগুড়ি পুর নিগমে, আবার শিলিগুড়ি কমিশনারেট গঠনের পর সেখানেও জেলার কিছু অংশ যায়৷ আনন্দবাবুর কথায়, ‘‘৬৮ সালের এই বন্যাকে একটা ল্যান্ডমার্ক ধরা যেতেই পারে৷ কারণ এরপরই জলপাইগুড়ির অর্থনৈতিক গৌরবের সূর্য অস্তমিত হতে শুরু করে৷’’
জলপাইগুড়ির প্রাবন্ধিক উমেশ শর্মা বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল যখন শিলিগুড়ির ছেলে-মেয়েরা জলপাইগুড়িতে পড়াশোনা করতে আসতেন। আর এখন সামান্য টিউশন পড়তেও জলপাইগুড়ির অনেক ছেলে-মেয়ে শিলিগুড়ি যায়৷ অন্য ক্ষেত্রগুলি না হয় বাদই থাকল৷’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘আসলে বছরের পর বছর ধরে জলপাইগুড়ি নানা ক্ষেত্রে বঞ্চিত থেকেছে৷ এই বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ ছিল ব্যাপক হারে উন্নতি ও রেলপথ ও সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন৷ সেটা না হলে জলপাইগুড়ির পুরানো গরিমা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়৷’’
জলপাইগুড়ির প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দেবপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘দেশভাগের পরে জলপাইগুড়ির সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ভেঙে পড়ে৷ তাতেই অবক্ষয়ের শুরু।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy