হামলা: এই ভাবে গুলতি ছুড়েও চলল যুদ্ধ। নিজস্ব চিত্র
সকাল ১০টা থেকে গভীর রাত, দু’টি পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচনকে নিয়ে শনিবার রণক্ষেত্র হয়ে রইল তুফানগঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের বক্সিরহাট। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই দুই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দিন ধরে দফায় দফায় বোমাবাজি, তিরযুদ্ধ থেকে শুরু করে গুলতি দিয়ে হামলাও চলেছে। যার ধাক্কায় এলাকায় দিনভর ছিল অঘোষিত বন্ধ। গোলমাল সামলাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। একাধিকবার লাঠিচার্জও করে। পঞ্চায়েত গঠনের পরেও গোলমাল না থামায় নতুন বোর্ড সদস্যদের গোপন ডেরায় নিয়ে যাওয়া হয় বলেও দাবি একটি শিবিরের।
যে দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এ দিন প্রধান নির্বাচন ছিল এ দিন, সেই মহিষকুচি-১ এবং বারোকোদালি-২ পঞ্চায়েতের সদস্যরা লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে বিজেপিতে যোগ দেন। পরে তাঁরা তৃণমূলে ফিরে আসেন বলে দাবি। এ দিন তাঁদের বিডিও অফিসে ডেকে বোর্ড গঠন করার কথা ছিল।
গোলমাল হতে পারে, সেই আশঙ্কায় তুফানগঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অফিসের একশো গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি ছিল। কিন্তু সকাল থেকেই সেই এলাকার বাইরে তৃণমূলের বিরাট জমায়েত তৈরি ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ১১টা নাগাদ নির্বাচন শুরু হয়। তার কিছু পরে ওই এলাকায় বিজেপির লোকজনেরাও এসে জড়ো হয়। তার পরেই গোলমাল শুরু হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে দাবি, কিছুক্ষণের মধ্যে বিজেপির দিক থেকে তির ছুটে আসতে থাকে পুলিশকে লক্ষ করে। বিজেপি সূত্রে দাবি, তাদের জমায়েতকে পুলিশ আটকে দিয়েছিল। তাতেই ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ হয়তো তির ছোড়ে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। কিন্তু তাতেও ভিড়কে পুরোপুরি ঠেকানো যায়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা পুলিশবাহিনীর পিছন দিক থেকে এসে ফের আক্রমণ করে। তির, গুলতির সঙ্গে এবারে বোমাবাজিও শুরু হয়।
স্থানীয় লোকেদের অনেকেরই দাবি, একটা সময়ে মুড়ি-মুরকির মতো বোমা পড়তে থাকে। এই ভাবে বিকেল চারটে পর্যন্ত অশান্তি চলে। এর মধ্যে ইটভাটার এক কর্মীকে তৃণমূল ভেবে বিজেপির লোকজন মাধর করে বলেও অভিযোগ। তৃণমূল দাবি করে, তাদের জমায়েতের উপরেও বিজেপি বোম মেরেছে। যদিও এই সব অভিযোগ বিজেপি অস্বীকার করেছে। ফের জমায়েত করেন বিজেপি কর্মীরা। ফের উত্তেজনা ছড়ালে পুলিশ ছ’রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়।
এর পরে জানা যায়, দু’টি ক্ষেত্রেই তৃণমূল বোর্ড গঠন করেছে। প্রধান নির্বাচন শেষে তৃণমূল বিরাট মিছিল বার করে। সেই মিছিল নিয়ে বক্সিরহাট গরুহাটি ময়দানে থাকা দলীয় কার্যালয় খুলতে গেলে পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ। পরে মিছিল স্বামীজি সংঘের মোড়ে যেতেই বিজেপি বোমাবাজি শুরু করে বলে অভিযোগ।
তুফানগঞ্জ বিধানসভার তৃণমূলের পর্যবেক্ষক মানিক দে বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণভাবে তৃণমূলের বোর্ড এবং প্রধান নির্বাচিত হয়েছে। দুটো গ্রাম পঞ্চায়েতে আমাদের দখলে।’’
বিজেপি নেতা উৎপল দাসও বলেন, ‘‘বোর্ড আমাদেরই। প্রধানও আমাদের।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে এগোতে চাইলে পুলিশ আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে। এই ঘটনায় তিন বিজেপি কর্মী আহত হন।’’ উৎপলের দাবি, ‘‘তৃণমূল যদি মনে করে তারা বোর্ড গঠন করেছে, তা হলে সোমবার থেকে দফতরে গিয়ে কাজ করুক। সব প্রমাণ হয়ে যাবে।’’
তুফানগঞ্জ ২ ব্লকের বিডিও ভাবি ভগীরথ হালদার জানান, মহিষকুচির ১০ জন নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে ৯ জন উপস্থিত ছিলেন। সুমন বর্মণ প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। বারোকোদালির ১৩ জনের মধ্যে ১০ জন উপস্থিত ছিল। মীনাক্ষী সরকার (বর্মণ) প্রধান, সঞ্জীব অধিকারী উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন।
এসডিপিও জ্যাম ইয়াং জিম্বা লাঠিচার্জের বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে পুলিশ সুত্রে খবর, ত্রিশটির উপর ধনুক উদ্ধার হয়েছে। এ দিনের ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy