কথা বলছেন বিডিও। নিজস্ব চিত্র
পরনে লাল শাড়ি। ছাদনাতলায় চলছে আশীর্বাদ পর্ব। বাইরে বাজছে সানাই। একদিকে জোর কদমে চলছে রান্নাবান্না। সব মিলিয়ে জমজমাট ছবি। আচমকা বদলে গেল ছবিটা। কারণ বিয়েবাড়িতে তখন হাজির পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। পুরাতন মালদহের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নিত্যানন্দপুরে একটি মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেছিল পরিবার। কিন্তু মেয়েটি নাবালিকা হওয়ায় শনিবার অভিযান চালিয়ে বিয়ে রুখে দেন পুলিশকর্তারা।
এ দিনই প্রায় একই সময়ে ওই পঞ্চায়েতেরই ২ নম্বর বিমলদাস কলোনি এলাকায় আরও একটি নাবালিকা মেয়ের বিয়ে রুখে দেন প্রশাসনিক কর্তারা। তবে এখানে ধুমধাম করে নয়। পুলিশ প্রশাসনের নজর এড়াতে আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গোপনে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। এমনকী, প্রশাসনের কর্তারা হানা দিলেও তাঁদের সামনে প্রথমে পাত্রী বদলে দিয়েছিল পরিবার। ফের হানা দেওয়ায় ধরা পড়ে যায় পরিবারের ‘কৌশল’। আটকে দেওয়া হয় নাবালিকার বিয়ে।
পুরাতন মালদহের বিডিও নরোত্তম বিশ্বাস বলেন, “সাহাপুরে মাত্র দু’কিলোমিটারের ব্যবধানে দু’টি নাবালিকা মেয়ের বিয়ে চলছিল। অভিযান চালিয়ে দু’টিই আমরা রুখে দিয়েছি। পরিবারের লোকেরা আমাদের মুচলেকা দিয়েছেন যে ১৮ বছর না হলে তাঁরা মেয়ের বিয়ে দেবেন না।” দুই পরিবারেরই আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। ওই পরিবার দু’টিকে রূপশ্রী প্রকল্প বাবদ ২৫ হাজার টাকা করে পাইয়ে দেওয়ারও আশ্বাস দেন বিডিও।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নিত্যানন্দপুর গ্রামের মেয়েটি সাহাপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তিন বোনের মধ্যে সে-ই ছোট। দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা সেলুনে কাজ করেন। এ দিন ইংরেজবাজারের এক যুবকের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে ছিল। বিয়ে তখন প্রায় শেষ। মেয়েকে ছাদনাতলায় বসিয়ে আশীর্বাদ করাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। আমন্ত্রিতদের খাওয়ানোর জন্য রান্নাও চলছিল। পরে ওই নাবালিকা বলে, ‘‘রাজি না থাকলেও বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করে ফেলে। বাবার আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে রাজি হয়েছিলাম। তবে আমি পড়াশোনা করতে চাই।” যদিও নাবালিকার বাবা বলেন, “মেয়ের বয়স সতেরো বছর দু’মাস। আমার নিয়মের বিষয়টি জানা ছিল না। তাই বিয়ে স্থির করে ফেলেছিলাম। মেয়ের ১৮ বছর হলে বিডিওর অনুমতি নিয়েই বিয়ে দেব।”
বিমলদাস কলোনি এলাকায় আরও একটি নাবালিকা মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেছিল পরিবারের লোকেরা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মেয়েটি সাহাপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তার বাবা শ্রমিকের কাজ করে। নাবালিকা মেয়ের বিষয়টি যাতে বাইরে জানাজানি না হয় তা নিশ্চিত করতে আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল এ দিন। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “প্রথম দিকে অভিযান চালানোর সময়ে মেয়ের বাড়ির লোকেরা আমাদের অন্য মেয়ে দেখান। ফলে প্রথম দিকে আমরাও ভেবেছিলাম মেয়ের ১৮ বছর হয়ে গিয়েছে। পরে ফের অভিযানে যেতেই দেখি পাত্রী পাল্টে গিয়েছে। তখন জেরা করতেই পুরো ঘটনাটি পরিবারের লোকেরা আমাদের জানান।”
নাবালিকা মেয়েটির বক্তব্য, “আমি পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।” ছাত্রীর বাবা বলেন, “পাত্রের তরফে দেনাপাওনার চাপ না থাকায় বিয়ে স্থির করে ফেলেছিলাম। আর কখনও হবে না।” পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের লক্ষ্মী সরকার বলেন, “নাবালিকা বিয়ে বন্ধে আরও প্রচার চালানো হবে। যাতে এমন ভুল কেউ না করেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy