নেপাল সীমান্তে ধৃত সেই পাকিস্তানি মহিলা। নিজস্ব চিত্র।
বৈধ পাকিস্তানি পাসপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র-সহ ‘টুরিস্ট ভিসা’ নিয়ে নেপালে এসেছিলেন। কিন্তু নাবালক ছেলে-সহ বুধবার এ রাজ্যের নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কিতে ধৃত মহিলা শাইস্তা হানিফ আদতে অসমের শিলচরের বাসিন্দা বলে জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছে পুলিশ। সৌদি আরবের জেড্ডায় পাকিস্তানি নাগরিক স্বামীর সঙ্গে ৪২ বছর সংসার করার পরে, মনোমালিন্যের জেরে, তিনি ছেলেকে নিয়ে ভারতে ফিরতে চেয়েছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। শিলচর না হলে, কলকাতাবাসী এক বোনের কাছে তিনি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে দাবি তাঁর। যদিও এ দেশে কেন বেআইনি ভাবে ঢুকতে চেয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। তাঁর অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ১১ নভেম্বর মা ও ছেলে সৌদি আরব থেকে দিল্লি হয়ে বিমানে কাঠমাণ্ডু আসেন। চার দিন নেপালে ছিলেন। ৩০ দিনের ভিসার মেয়াদের পরে, তাঁদের সেখান থেকে মুম্বই হয়ে জেড্ডা ফেরার টিকিটও ছিল। বৃহস্পতিবার ধৃত মহিলাকে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁর ছেলেকে দার্জিলিং জুভেনাইল কোর্টে পাঠানো হয়েছে। আপাতত বিদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে পাঁচ দিনের জেল হেফাজতে আছেন তাঁরা।
এ দেশে পাকিস্তানি দূতাবাসের সঙ্গে দার্জিলিং পুলিশের তরফে যোগাযোগ শুরু হয়েছে বলে খবর। যদিও শিলচর বা কলকাতা সম্পর্কিত কোনও নথিই ওই মহিলা দেখাতে পারেননি বলে পুলিশ জানিয়েছে। দার্জিলিং পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘মহিলার বয়স ৬২ বছরের মতো। ছেলেটি ১২ বছরের। ধরা পড়ার সময় তাঁদের সঙ্গে কেউ ছিলেন না। মহিলা স্বামীর কাছ থেকে আলাদা হয়ে দেশে ফেরার কথা বললেও তা কতটা সত্যি, না আরও কিছু এর পিছনে রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার খড়িবাড়ির পানিট্যাঙ্কি সীমান্তে এই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে সশস্ত্র সীমা বল বা এসএসবি-র ৪১ নম্বর ব্যাটালিয়ানের জওয়ানদের হাতে আটক করা হয় এই মহিলা এবং তাঁর সঙ্গী ওই বালককে। জিজ্ঞাসাবাদের পরে দু’জনকেই খড়িবাড়ি পুলিশের হাতে তুলে দেয় এসএসবি। নেপালের ভিসা থাকা সত্ত্বেও কেন ভারতে প্রবেশ করলেন তাঁরা, উত্তরের সন্ধানে রয়েছে পুলিশ ও বিভিন্ন এজেন্সি।
পুলিশ সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে শাইস্তার দাবি, তাঁর স্বামী মহম্মদ হানিফ সৌদি আরবে সোনার ব্যবসা করেন। তিনি সেখানেই আছেন বলে মহিলা জানান। তাঁর দাবি, চার দশক আগে কাজের সন্ধানে তিনি শিলচর থেকে মুম্বই গিয়েছিলেন। সেখানে ব্যবসার সূত্রে যাতায়াত করতে গিয়ে মহম্মদ হানিফের সঙ্গে ধৃতের পরিচয় হয়। পরে, বিয়ে করে তাঁরা পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। সেখান থেকে সৌদি আরবে গিয়ে থাকতে শুরু করেন।
পুলিশের কাছে ধৃত মহিলার দাবি, এক সময় তাঁর নাম ছিল ডলি দে। বিয়ের পরে ধর্ম এবং নাম বদলান। হানিফের সঙ্গে সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমস্যা বাড়তে থাকায় ছেলেকে নিয়ে ভারতে আসার পরিকল্পনা করেন বলে পুলিশকে জানান তিনি। ভারতের ভিসা সহজে মিলবে না জেনে, নেপালের ভিসা নিয়ে এসে পানিট্যাঙ্কির কাঁটাতারহীন সীমান্ত দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন। তবে সে কাজ তিনি কারও পরামর্শে করছিলেন বলেই পুলিশের অনুমান। মহিলা সত্যি বলছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাতে কিছুদিন সময় লাগবে বলে আধিকারিকেরা জানিয়েছেন।
ঘটনায় লেগেছে রাজনীতির রং। পাকিস্তানি মা-ছেলের অনুপ্রবেশ ও গ্রেফতার প্রসঙ্গে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী এ দিন কল্যাণীতে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের সংরক্ষণ দিচ্ছেন। তাই আসছে। এখানে রোহিঙ্গা বসতি হচ্ছে। এখানে ভারতীয় মুসলমান, পশ্চিমবঙ্গের আদি যারা মুসলমান, বংশ পরম্পরায় থাকেন, তাঁদেরও বিপদ। ৫৫টা ইসলামিক দেশ একটা রোহিঙ্গাকে নেয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে নেন ভোটের জন্য। আধার কার্ডও তৈরি করে দেন, ভোটার কার্ডও তৈরি করে দেন। গত বছর খড়দহতে যখন উপ-নির্বাচন হয়, বাংলাদেশের ভোটার ভোট দিতে এসে ধরা পড়েছিল।’’ পক্ষান্তরে, তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায় বলেন, "সীমান্ত পাহারার দায়িত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা রক্ষীরা। এ থেকেই প্রমাণিত সীমান্তের পাহারা ঠিক মতো হচ্ছে না। সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি পুরোপুরি দায়ী। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্যে মরিয়া প্রয়াস চালানো হচ্ছে।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy