প্রতীকী ছবি।
কলকাতাকে ‘পিছনে ফেলে’ চেন্নাই ও মুম্বইয়ের পাশে উঠে এল কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিং। এই তিনটি জেলা সদর শহরেই শুক্রবার পেট্রলের দাম লিটার প্রতি ১০০ টাকা হয়ে গেল। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় এই জ্বালানি তেলের দাম ৯৯ টাকার ঘরে ঢুকে পড়েছে। মনে করা হচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যেই সে সব জায়গায় একশোয় ঢুকে পড়বে পেট্রল। ব্যতিক্রম শুধু ইংরেজবাজার শহর ও শিলিগুড়ি। এই দু’শহরে এখনও লিটার প্রতি পেট্রলের দাম ৯৮-এর ঘরে।
কেন কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার বা দার্জিলিঙে সকলের আগে সেঞ্চুরি করল? প্রশাসন এবং বিভিন্ন পাম্পের মালিকরা জানিয়েছেন, এর বড় কারণ শহরগুলির দূরত্ব। প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, এনজেপি-তে জ্বালানি তেল মজুত হয়। তার পরে সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ এবং পড়শি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তেল পাঠানো হয়। এই পরিবহণ খরচটা যোগ হতেই সামগ্রিক ভাবে দাম বেড়ে যায়। যেমন, শিলিগুড়িতে এ দিন পেট্রলের লিটার প্রতি দাম ছিল ৯৮.৭৫ টাকা। সেখান থেকে কোচবিহার বা আলিপুরদুয়ারের দূরত্ব ১৭২ থেকে ১৭৬ কিমি। এই দূরত্ব পার হতেই বেড়ে গিয়েছে তেলের দাম, বলছেন সংশ্লিষ্ট লোকজনেরা। পাহাড়ের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি। অন্য দিকে, মালদহে জ্বালানি তেল মজুত করার জায়গা রয়েছে। সেখানেও তুলনায় দাম কম এ দিন, লিটার প্রতি ৯৮.৮০ টাকা। সেখান থেকে রায়গঞ্জ বা বালুরঘাটে তেল পাঠানো হয়। তাই সে সব জায়গায় দাম ৯৯ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
সাধারণ মানুষ কিন্তু এই মূল্যবৃদ্ধিতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কোচবিহার স্টেশন মোড়ের পেট্রল পাম্পে দাঁড়িয়ে অজিত রায় বলেন, ‘‘দলটল বুঝি না। পেট্রল-ডিজ়েলের দাম তো কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? এর পরে তো সাধারণ মানুষ বাইক চালাতে পারবে না।’’ বস্তুত, উত্তরবঙ্গ জুড়ে গত এক বছরে মোটরবাইক বিক্রি যথেষ্টই কমেছে।
বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পেট্রল-ডিজেলের দাম যে ভাবে বেড়েছে, তাতে ভাড়া না বাড়ালে বাস চালানো সম্ভব নয়। তৃণমূলের পক্ষ থেকেও বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। তা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন বিজেপির বিধায়ক-সাংসদরা। অনেকেই তাঁদের কটাক্ষ করে বলছেন, ‘‘১৯৮৩ সালে এই সময়ে বিশ্বকাপ জয় করেছিল ভারত। সেই জয় উদযাপন করা হয়েছিল দেশ জুড়ে। আর এ বারে পেট্রলের দামে সেঞ্চুরি! এই সাফল্য কী করে ‘উদ্যাপন’ করবেন বিজেপি সাংসদ-বিধায়করা?’’
বিজেপির তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতী রাভা বলেন, ‘‘বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়ছে, তাই এখানেও বাড়ছে। সবার অসুবিধে হচ্ছে এটা ঠিক। নিশ্চয়ই সরকার বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করবে।’’ দাম আরও বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় এ দিন আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন পাম্পে প্রচুর মানুষকে ভিড় করতে দেখা যায়। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আঁচ করতে পেরে কৌশলে পেট্রলের দাম নিয়ে প্রতিক্রিয়া এড়ানোর চেষ্টা করেছেন জেলার একাধিক জনপ্রতিনিধি। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা বলেন, “আলিপুরদুয়ারে পেট্রলের দাম একশো টাকা ছাড়িয়েছে বলে আমার জানা নেই।” আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, ‘‘এটা সাফল্য বা ব্যর্থতার বিষয় নয়। আন্তর্জাতিক বাজারের উপরেই আমাদের দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম নির্ভর করে। এটা কেন্দ্রের হাতে নেই।’’ কালচিনির বিজেপি বিধায়ক বিশাল লামা বলেন, “পেট্রলের দাম একশো টাকা পার হওয়া নিয়ে মন্তব্য করব না।”
আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড অশোধিত তেলের দাম এখন প্রায় ৭৫ ডলার ব্যারেল। বিরোধীদের বক্তব্য, ২০১৩ সালে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি প্রায় ১০৩ ডলার। তখন দেশে পেট্রল ছিল লিটার প্রতি ৭৪ টাকা। তখন মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদী থেকে স্মৃতি ইরানি, সকলেই আন্দোলন করেন। এখন তাঁরা দাম কমাতে হস্তক্ষেপ করছেন না কেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy