খাদের ধারের গার্ড ওয়াল এমন ভেঙে গিয়েছে হিলকার্ট রোডের বহু জায়গাতেই। ঝুঁকি নিয়ে খাদের ধার ঘেঁষেই চলে গাড়ি। ছবি: রবিন রাই।
মুষলধারে বৃষ্টি চলছে। বাঁক ঘোরার আগে গাড়ির গতি কমছে। কোনও কোনও গাড়ির চালক দরজা খুলে মুখ বের করে উঁকি দিচ্ছেন। কেউ মোবাইল বের করে ছবিও তুলছেন।
শুক্রবার রাষ্ট্রপতির কনভয় থেকে একটি গাড়ি গড়িয়ে পড়েছিল খাদটিতে। গাড়ির যাত্রীরা সকলেই রক্ষা পেয়েছেন। গত শুক্রবারের সেই দুর্ঘটনার ভয়ঙ্কর স্মৃতি নিয়েই সোনাদার পথের বাঁকের অকুস্থল শনিবার সকাল থেকে যেন নতুন দ্রষ্টব্যে পরিণত হয়েছে। পথ চলতি বাসিন্দাদের অনেকেই থমকে দাঁড়াচ্ছেন খাদের পাশে। চলন্ত গাড়ির গতিও কমছে। শিউরে উঠছেন সকলেই। রাষ্টপতির কনভয়ের গাড়ি এসকর্ট ওয়ানের ধাক্কায় রাস্তার পাশে থাকা সিমেন্টের ছোট্ট ব্যারিকেড ভেঙে গিয়েছে। সে কারণেই নিরাপত্তার জন্য দুর্ঘটনাস্থলের দু’পাশে কিছুটা দূরে ট্র্যাফিক পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। তবে বাসিন্দাদের দাবি, ট্র্যাফিক বসিয়ে দুর্ঘটনার প্রবণতা আটকানো সম্ভব হয় না। প্রথমত পাকদণ্ডি পথের পুরোটাই শক্ত রেলিং দিয়ে বাঁধতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে রাস্তার দু’পাশে দখল মুক্ত করতে হবে।
দার্জিলিঙের পাহাড়ি রাস্তা থেকে খাদে গাড়ি গড়িয়ে পড়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। বর্ষার সময়ে এই প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যায়। হিলকার্ট রোড জুড়ে পাথরের টুকরো বসানো হয়েছে যাতে গাড়ির চাকা রাস্তাচ্যুত না হয়। যদিও বৃষ্টি ভেজা ঢালু রাস্তাতে চাকা পিছলে যাওয়া তাতে আটকানো সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন বাসিন্দারা। গত শুক্রবার রাষ্ট্রপতির কনভয়ে থাকা যে গাড়িটি খাদে গড়িয়ে পড়েছে সেটির চাকাও পিছলে গিয়েছিল বলেই খাদের সামনে এসেও ব্রেক কাজ করেনি বলে অনেকে মনে করছেন। শনিবারও দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি গয়াবাড়ি মোড়ে ট্র্যাফিক সামলাচ্ছিলেন দীপেশ সুব্বা। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। গত শুক্রবার দুর্ঘটনার পরে উদ্ধারকারী দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দীপেশ-ই। এ দিনও তাঁকে তাড়া করেছে দুর্ঘটনার আতঙ্ক। দীপেশের কথায়, ‘‘একটা এসএইভি গাড়ি গাড়ি খাদে পড়ে গিয়েছে শুনেই হাড় হিম হয়ে গিয়েছিল। তাই কিছু না চিন্তা করেই নীচে নামি। ভাগ্যিস গাড়িটা কিছুটা গড়িয়ে আটকে গিয়েছিল। না হলে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত।’’
গয়াবাড়ি মোড়েই চায়ের দোকান রয়েছে সোনালি গুরুঙ্গের। তাঁর দুই মেয়ে পুলকারে চেপে স্কুলে যাতায়াত করে। এ দিন সোনালি বলেন, ‘‘বাড়ির পাশেই দুর্ঘটনা ঘটেছে শুনেই চমকে উঠেছিলাম। বর্ষার সময়ে এমনিতেই রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়। মেয়ে দু’টোকে গাড়িতে স্কুলে পাঠানো ছাড়া উপায়ও নেই। সব সময়ে আতঙ্কে থাকি।’’
শিলিগুড়ি থেকে প্রতিদিন যাত্রী নিয়ে একাধিকবার দার্জিলিং যাতায়াত করেন অরুণ থাপা। গতকাল দুর্ঘটনার সময়ে সোনাদার কাছাকাছি ছিলেন বলে দাবি করলেন অরুণ। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্ঘটনার কথা শুনে যাত্রীরা সকলেই আতঙ্কিত। সকলেই জানতে চেয়েছে কোথায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। যতবার ওই রাস্তা দিয়ে গিয়েছি, গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের দেখাতে হয়েছে। নিজেও শিউরে উঠেছি।’’ অরুণবাবুর দাবি, রাস্তার পাশে কংক্রিটের ব্যারিকেড থাকলেও নিশ্চিন্ত হওয়ার উপায় নেই। ব্যারিকেডে আলতো ধাক্কা লাগলেও ভেঙে যাবে বলে তাঁর দাবি।
কনভয়ে থাকা এসইউভি গাড়িটিও প্রথমে ব্যারিকেডে ধাক্কা মারে। এক ধাক্কায় রাস্তা থেকে ছিটকে ব্যারিকেড খাদে পড়ে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোনও ব্যারিকেড তৈরিতেই লোহা ঢালাই করা হয়নি। শুধুমাত্র পাথরের ওপরে সিমেন্ট ঢালা হয়েছে। সে কারণে দু’টি হাতুড়ির ঘা লাগলেও ব্যারিকেড উপরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, ব্যারিকেড রয়েছে শুধু রাস্তার সীমানা বোঝানোর জন্য। পাকদণ্ডি রাস্তার হাল-হকিকত, ঝুঁকি জানা বাসিন্দাদের দাবি মূল সমস্যা হল রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়া। হিলকার্ট রোডের একপাশ দিয়ে রয়েছে টয় ট্রেনের লাইন। অন্যদিকে খাদ। রাস্তার একপাশ জুড়ে দাঁড় করানো থাকে গাড়ি-বাইক। ক্রমেই রাস্তার পাশে গজ়িয়ে উঠছে নিত্যনতুন দোকান-গুমটি ঘর। নজরদারির অভিযোগে রাস্তার একদিক যত দখল হচ্ছে, ততই সঙ্কীর্ণ হচ্ছে রাস্তা। কোথাও পাহাড়ের গা ঘেষে নির্মাণ হওয়ায় রাস্তা এতটাই সঙ্কীর্ণ হয়েছে যে খাদের পাশ দিয়ে গাড়ির চাকা নিয়ে যাওয়া ছাড়া চালকদের উপায় থাকে না বলে দাবি।
সোনাদার বাসিন্দা বিবেক শেওয়া বলেন, ‘‘রাস্তা যদি প্রশস্ত হতো, রাস্তার একদিকে যদি নির্মাণ না হতো, তবে দুর্ঘটনার প্রবণতাও কমে যেত। কবে দার্জিলিঙে তা সম্ভব হবে তার অপেক্ষায় রইলাম।’’ আরেক বাসিন্দা দীপক গুরুঙ্গের অভিযোগ, জাতীয় সড়কের পাশে নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নিকাশি নেই বলে জলের তোড়ে রাস্তার ধার ক্রমশ ভাঙছে। তাতেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।
তবে কবে সেই রাস্তা চওড়া হবে তা নিয়েও রাজনীতির ঠেলাঠেলি রয়েছে। জিটিএ-এর ডেপুটি চিফ রমেশ আলে রাস্তা সম্প্রসারণ-দখলদারি নিয়ে বল ঠেলেছে রাজ্য সরকারের দিকেই। তাঁর দাবি, ‘‘রাস্তা তো পূর্ত দফতর তৈরি-দেখভাল করে। চুক্তি মতো আমরা এখনও পূর্ত দফতর পাইনি। তাই কাজে সমস্যা হচ্ছে।’’ যদিও দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘সদ্দিচ্ছা না থাকলে কিছুই সম্ভব নয়। স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয় থাকলেই রাস্তার পাশে দখলদারি হঠানো সম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy