Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

আতঙ্কিত দাড়িভিট

গন্ডগোলের পরে এলাকা এখন প্রায় পুরুষ শূন্য। যাঁরা আছেন, তাঁদের কেউ কেউ চার দিন পরে সাহস করে দোকানপাট খুললেও সুনসান বাজারে বিক্রিবাটা শূন্য। তাই দেখে এক সময়ে ঝাঁপ ফেলে দেওয়া হয় বাজারের।

মর্মাহত: তাপস বর্মণের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে তাঁর মা এবং বোন। নিজস্ব চিত্র

মর্মাহত: তাপস বর্মণের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে তাঁর মা এবং বোন। নিজস্ব চিত্র

শুভঙ্কর চক্রবর্তী ও অভিজিৎ পাল
দাড়িভিট শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৫৮
Share: Save:

গন্ডগোলের পরে এলাকা এখন প্রায় পুরুষ শূন্য। যাঁরা আছেন, তাঁদের কেউ কেউ চার দিন পরে সাহস করে দোকানপাট খুললেও সুনসান বাজারে বিক্রিবাটা শূন্য। তাই দেখে এক সময়ে ঝাঁপ ফেলে দেওয়া হয় বাজারের। এই অবস্থায় গ্রামবাসীদের দোকানপাট খুলে রাখার আবেদন জানালেন ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়ালাল অগ্রবাল।

সোমবার বিধায়ক আবার গিয়েছিলেন দাড়িভিট গ্রামে। সঙ্গী ছিলেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য সুবোধ মজুমদার। তাঁরা গিয়ে বসেন দাড়িভিটের বন্ধ বাজারে। তখনই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন। বিধায়ক ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেন দ্রুত দোকান-বাজার খোলার। তিনি বলেন, ‘‘এখন সব বন্ধ রাখলে তো আমাদেরই লোকসান। ব্যবসার ক্ষতি।’’

একই আতঙ্ক রয়েছে সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যেও। শনিবারের পর থেকে ক্যামেরার সামনে আসতে চাইছেন না অনেকেই। নিহত রাজেশ সরকারের ভাই সুজিত সরকার বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে ছবি এবং ভিডিও ফুটেজে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ তাদের অভিভাবকদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করছে। একই ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে নিরীহ গ্রামবাসীদেরও।’’ যদিও উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার বক্তব্য, ‘‘পুলিশ কোনও নিরীহ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেনি।’’

গ্রামের অবস্থা এখনও থমথমে। এ দিন রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মণের পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। দলঞ্চা নদীর তীরে দুই তরুণের সমাধিস্থলে নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। যাতে নতুন করে আর কোনও অশান্তি শুরু না হয়, সেই আবেদনও শোনা গিয়েছে অনেকের মুখে। গৃহবধূ রঞ্জনা সরকার বলেন, ‘‘গ্রামে কোনও দিন বড় গন্ডগোল হতে দেখিনি। এখন যা অবস্থা, তাতে ভয়ে রাতে ঘুমোতে পারছি না। রান্না- খাওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে। এখন একটু শান্তি চাই।’’ দাড়িভিট বাজারের ব্যবসায়ী পবন সরকার বলেন, ‘‘টানা দোকান বন্ধ থাকায় সংসার চালান সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাজনীতি না করে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানো জরুরি।’’ হাইস্কুলের পাশাপাশি এ দিন বন্ধ ছিল দাড়িভিট প্রাথমিক বিদ্যালয়। খোলেনি স্বাস্থ্য কেন্দ্রও। রাজনৈতিক দল, সমাজকর্মী বা সংবাদমাধ্যমের গাড়ি দেখলে দু-চার জন ভিড় করছেন ঠিকই, তবে সন্ধের পর দেখা মিলছে না কারওরই। এ দিন রাস্তায় দু-একটি অটো চলাচল করতে দেখা গিয়েছে। চাপা আতঙ্কের মাঝেও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে চাইছে দাড়িভিট।

এ দিন রাজেশ এবং তাপসের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন কবি মন্দাক্রান্তা সেন। গিয়েছিলেন সেভ ডেমোক্রেসি-র একটি প্রতিনিধি দল। মন্দাক্রান্তা বলেন, ‘‘আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে দুই ছাত্র খুনের ন্যায্য বিচার পাওয়ার লড়াইয়ে পরিবারের পাশে থাকব।’’ বিজেপির যুব সংগঠন যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ সরকারও মৃতদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘গোটা রাজ্য জুড়ে ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।’’

মৌ কোথায়

গন্ডগোলের দিন জ্যেঠতুতো বোন মৌ সরকারকে আনতে গিয়েছিলেন রাজেশ। অভিযোগ, তখনই গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর। সেই মৌ সরকার এখন কোথায়? পরিবার সূত্রে দাবি, তাঁদের বাড়িতে এসে বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় আলাপ করেন মৌয়ের সঙ্গে। তার পর সঙ্গে নিয়ে যান।

বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ সেনের অবশ্য দাবি, ‘‘স্কুলে গোলমাল, গুলি, বোমার ঘটনার মূল সাক্ষী মৌ। কাজেই তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কা থেকেই যায়। এক দিন স্থানীয় একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। তাই তাঁকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন রাজ্য নেত্রী।’’

মৌয়ের খুড়তুতো দাদা তাপস সরকার বলেন, ‘‘আমরা কেউ গ্রামে থাকতে পারছি না পুলিশের ভয়ে। কাজেই একা বোনের বিপদ হতেই পারে।’’ যদিও পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Islampur TMC Daribhit high school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE