হাসপাতাল চত্বরে তৈরি হচ্ছে একেবারে নিজস্ব অক্সিজেন তৈরির কারখানা নিজস্ব চিত্র
করোনা মোকাবিলায় প্রতিষেধকের পাশাপাশি অক্সিজেনের হাহাকার নিয়েও প্রতিদিন বাড়ছে দুশ্চিন্তা। সেই দুর্ভাবনা দূর করতে বাইরে থেকে আনা অক্সিজেনের উপর আর বেশি ভরসা করতে নারাজ কোচবিহারের মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের উদ্যোগেই ওই হাসপাতাল চত্বরে তৈরি হচ্ছে একেবারে নিজস্ব অক্সিজেন তৈরির কারখানা। বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে তা মজুত রাখার প্ল্যান্ট গড়ে উঠছে হাসপাতাল চত্বরে। করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এই কারখানা কাজে দেবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
করোনা পরিস্থিতিতে সঙ্কটজনক রোগীদের জন্য অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এমনিতে শিলিগুড়ি সংলগ্ন তিনটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে এজেন্সি মারফত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেনের জোগান হয়। কিন্ত কোভিড পরিস্থিতিতে এ বার অক্সিজেনের চাহিদা অনুযায়ী জোগান সামাল দিতে পারছে না ওই তিনটি কারখানা। তাই জোগানে এ ভাবে ঘাটতি হলে যাতে রোগীদের যাতে সমস্যা না হয় সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এই কারণেই কোচবিহারের মতো জেলায় এ ধরনের প্ল্যান্ট দ্রুত গড়ে তোলার উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন করোনা উত্তরবঙ্গে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুশান্ত রায়।
তিনি বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি জেলাশাসককে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়ে ওই প্ল্যান্ট বসানোর ব্যবস্থা করার কথা জানানো হয়েছে। অন্য জেলাগুলোতেও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হবে। তাতে জেলাগুলো চিকিৎসায় অক্সিজেনের ব্যাপারে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আলিপুরদুয়ার হাসপাতালেও এ ধরনের প্ল্যান্ট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া চলছে।
কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রকল্প তৈরির কাজ অনেকটা এগিয়েছে। এর নাম ‘প্রেসার সুইং অ্যাবসরশন’ মেশিন বা পিএসএ জেনারেটর সিস্টেম’। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাতাস থেকে সংগৃহীত অক্সিজেন হিমাঙ্কের নীচে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বিশেয ট্যাঙ্কে মজুত হবে। প্রয়োজন মতো সেখান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে হাসপাতালে রোগীদের শয্যায় অক্সিজেন সরবরাহ হবে। দু’হাজার লিটার অক্সিজেন ওই ট্যাঙ্কে মজুত থাকবে। ট্যাঙ্কে মজুত অক্সিজেন যত ব্যবহার হবে, স্বয়ংক্রিয় ভাবে তা তৈরি হয়ে ভরে যেতে থাকবে প্ল্যান্টের ভাঁড়ারে। মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি রাজীব প্রসাদ বলেন, “বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে মজুত রাখার প্রকল্পটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে নির্মাতারা হস্তান্তর করবে বলে আশা করছি। এতে অক্সিজেনের ব্যাকঅ্যাপ ব্যবস্থা থাকবে। সমস্যায় পড়তে হবে না।” অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব, স্বাভাবিক জোগান কোনও কারণে বিঘ্নিত হলে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের প্ল্যান্ট থেকে অক্সিজেন দেওয়া যাবে।
মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। অত্যাধুনিক যন্ত্র, বিশালাকার ক্যাপসুল মডেলের নীল-সাদা দুটি ট্যাঙ্ক, আনুষঙ্গিক নানা সরঞ্জামের পরিকাঠামো বসানো হয়েছে। কী ভাবে তা কাজ করবে? বাতাস থেকে অক্সিজেন প্রক্রিয়াকরণের পর সাদা ট্যাঙ্কে মজুত হবে। একটা চক্রের মাধ্যমে অক্সিজেন রোগীদের কাছে পৌঁছবে। পিএসএ রুমে বসানো মেশিনে বাতাস থেকে সংগৃহীত অক্সিজেনের প্রক্রিয়াকরণ হবে। সেখান থেকে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সাদা ট্যাঙ্কে মজুত হবে। তা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ‘ম্যানিফোল্ড চেম্বার’-এ যাবে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নানা বিষয় পরীক্ষার পর পাইপলাইন, ভালভের মাধ্যমে রোগীদের শয্যার কাছে ‘অক্সিজেন প্রোবে’ তা পৌঁছবে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ জানান, এখানেও এ ধরনের প্ল্যান্ট হলে উপকার মিলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy