Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রেমিকার ফোনে নজর, মাজিদ-খুনে ধৃত অভিজিৎ

তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা জানান, কোথায় থাকতে পারে অভিজিৎ, তা তদন্ত করতে গিয়ে তাঁর প্রেমিকার খোঁজ পায় পুলিশ। এরপরেই প্রেমিকার ফোনে ফাঁদ পাতা শুরু হয়।

গ্রেফতার: আদালত চত্বরে অভিজিৎ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

গ্রেফতার: আদালত চত্বরে অভিজিৎ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

প্রেমিকার ফোনে ফাঁদ পেতে অবশেষে মাজিদ আনসারি হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার ভোরে ভারত-ভুটান সীমান্তের কুমারগ্রামের একটি বস্তি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম অভিজিৎ বর্মন। তার বাড়ি কোচবিহার কোতোয়ালি থানার গুড়িয়াহাটিতে। অভিজিতের বিরুদ্ধেও মাজিদের দিকে গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ধৃতকে এ দিন কোচবিহার মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হলে বিচারক আজ, সোমবার ধৃতকে ফের আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন। অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছে পুলিশ।

তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা জানান, কোথায় থাকতে পারে অভিজিৎ, তা তদন্ত করতে গিয়ে তাঁর প্রেমিকার খোঁজ পায় পুলিশ। এরপরেই প্রেমিকার ফোনে ফাঁদ পাতা শুরু হয়। বারবারই অভিজিতের গতিবিধি ভুটান ও নেপালের সীমান্ত এলাকায় পাওয়া যায়। সেই পুলিশের একাধিক দল ভুটান ও নেপালের সীমান্ত এলাকায় হানা দিয়েও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত, শনিবার ওই ফোনেই পুলিশ জানতে পারে কুমারগ্রামের বস্তি পাকড়িগুড়িতে রয়েছে অভিজিৎ। রাতেই পুলিশের একটি দল হানা দেয় সেখানে। এদিনও প্রায় ফসকে গিয়েছিল ওই অভিযুক্ত। তদন্তকারী অফিসাররা জানান, একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল অভিজিৎ। অভিযানের সময় জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায় সে। পুলিশ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ভোরের অপেক্ষা করতে থাকে। ভোরবেলা অবশেষে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “একাধিক নম্বর থেকে প্রেমিকার মোবাইলে ফোন করেছিল অভিজিৎ। আমরাও খুব গোপনে ফোনে নজর রেখে তার ঠিকানা পাই।”

তদন্তকারী অফিসাররা জানান, মাজিদকে গুলি করে খুন হয়। যে পিস্তল দিয়ে গুলি করা হয়েছে, তা এখনও উদ্ধার হয়নি। যে বাইকে চেপে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায় সেটাও উদ্ধার হয়নি। সে সব তথ্য জানতেই অভিজিৎকে পুলিশ হেফাজত চাওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “ওই মামলার সব অভিযুক্ত গ্রেফতার হল।”

গত ১৩ জুলাই কোচবিহার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাজিদ আনসারি শহরের স্টেশন মোড় লাগোয়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। একদল যুবক তাঁকে ঘিরে ধরে গুলি করে। মাজিদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কোচবিহার কলেজ ইউনিটের আহ্বায়ক ছিলেন। যারা তাঁকে গুলি করে তারাও টিএমসিপি কর্মী বলেই পরিচিত। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাজিদকে প্রথমে কোচবিহার শহরের একটি নার্সিংহোমে এবং পরে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই ২৫ জুলাই রাতে মৃত্যু হয় মাজিদের।

মাজিদ খুনের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ তুলে রাস্তায় নামেন ছাত্রছাত্রী থেকে বাসিন্দারা। ২৬ জুলাই মাজিদের দেহ কোচবিহারে ফেরে। ওই দিন রাতে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের কোচবিহার জেলা নেতা মহম্মদ কলিম খান ওরফে মুন্নাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে একে একে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত জামিরুল হক, সূরজ হোসেন ওরফে স্পিড বয়, সায়ন হক ওরফে লোটাস, নবাব হেদায়াতুল্লা, সঞ্জিত সাহানিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু, অভিজিৎ বর্মনের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় পুলিশ। কোথাও তার হদিশ না পেয়ে অবশেষে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে খুনের ঘটনার নব্বই দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ।

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘রাজনীতির কোনও প্রসঙ্গ এখানে উঠছে না। পুলিশ ঠিক মতোই তদন্ত করছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest Crime Police Majid Ansari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE