Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

এনআরসি আতঙ্কে ছোটাছুটি প্রবীণ দম্পতির

সোমবার দীপকবাবুর কথায়, ‘‘শুনছি নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা হবে। তাতে আমরা যে এ দেশের বাসিন্দা সে প্রমাণ তো জোগাড় করতে হবে। কিন্তু আমাদের সেই সংক্রান্ত পুরনো নথিপত্র সব আলিপুরদুয়ারেই রয়েছে।’’ 

সন্ধানে:সস্ত্রীক দীপক রায়চৌধুরী। আলিপুরদুয়ারে। নিজস্ব চিত্র

সন্ধানে:সস্ত্রীক দীপক রায়চৌধুরী। আলিপুরদুয়ারে। নিজস্ব চিত্র

পার্থ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৮
Share: Save:

বাবার জমি বেচে দিয়েছিলেন অর্ধ শতক আগে।

তারও দশ বছর পরে আলিপুরদুয়ার ছেড়ে তাঁরা চলে যান হুগলির কোন্নগরে, পাকাপাকি ভাবে। এখন সেই কবেকার জমির কাগজ খুঁজতেই হন্যে হয়ে আলিপুরদুয়ারে লোকজনের দোরে দোরে ঘুরছেন সত্তরোর্ধ্ব দীপক রায়চৌধুরী। সঙ্গে স্ত্রী। ক্যানসার আক্রান্ত এই বৃদ্ধের দুশ্চিন্তা এখন একটাই, এনআরসি-র জেরে দেশটা না ছাড়তে হয়।

সোমবার দীপকবাবুর কথায়, ‘‘শুনছি নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা হবে। তাতে আমরা যে এ দেশের বাসিন্দা সে প্রমাণ তো জোগাড় করতে হবে। কিন্তু আমাদের সেই সংক্রান্ত পুরনো নথিপত্র সব আলিপুরদুয়ারেই রয়েছে।’’

কিন্তু এ রাজ্যে এই পঞ্জি বা এনআরসি নিয়ে কোনও সরকারি প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বারবার বলেছেন, এ রাজ্যে তাঁরা এনআরসি করতে দেবেন না। কিন্তু দীপকবাবু সন্দিহান। তিনি এ দিন বললেন, ‘‘অসমে তো হয়েছে। তাই ভয় করছে। যদি এ রাজ্যেও হয়ে যায়, তখন কী করব? এখনও শরীরটা চলছে, তাই ছুটে এসেছি আলিপুরদুয়ারে।’’

দীপকবাবুর জন্ম জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়িতে। তবে স্কুল-কলেজে পড়েছেন আলিপুরদুয়ার শহরেই। শহরের বাবুপাড়ায় তাঁদের পৈতৃক জমি ছিল। পারিবারিক কারণে ১৯৬৯ সালে যা বিক্রি করে দেন। ১৯৭৮ সালে চাকরি সূত্রে আলিপুরদুয়ার শহর ছাড়েন এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী দীপক। পরে হুগলির কোন্নগরে জমি কেনেন। সেখানেই বাড়ি তৈরি করে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। বছর খানেক আগে ক্যানসার ধরা পড়ে এই বৃদ্ধের। শুরু হয় চিকিৎসা। এর মধ্যেই অসমে নাগরিক পঞ্জিতে বহু নাম বাদ যাওয়ার খবর পেয়ে নিজের ও পরিবারের জন্য পরিচয়পত্রের খোঁজ শুরু করে দেন। দীপকবাবু বলেন, ‘‘কোন্নগরের জমিটা ১৯৮৯ সালে কেনা। কিন্তু আমরা যে তার বহু আগে থেকে এ দেশে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে চলছি, তা প্রমাণ করতে পারে একমাত্র বিক্রি করে দেওয়া পৈতৃক জমির সমস্ত নথিপত্র। তাই আলিপুরদুয়ারে এসেছি।’’ এখানে এসে তিনি জানতে পারেন, তাঁদের সেই বাড়ির ইতিমধ্যে মালিকানার হাত বদলও হয়ে গিয়েছে। তাই নথি পেতে ঘুরতে হচ্ছে।

দীপকবাবু আলিপুরদুয়ারে তাঁর পরিচিত প্রবীণ মানুষদের কাছেও গিয়েছেন। তাঁর কথায়, “অনেকে সব জেনে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। আমি এখন সেই অপেক্ষায় রয়েছি।” এই বৃদ্ধ দম্পতির কথায়, “জমির নথিই তো প্রমাণ। সেটা বের না করে তো বাড়িতেও চুপ করে বসে থাকতে পারব না। তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাব।”

আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ বলেন, ‘‘এনআরসি আতঙ্কে জমির নথি জোগাড় করতে কেউ হুগলি থেকে আলিপুরদুয়ারে এসেছেন বলে শুনিনি। তা ছাড়া এমন কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। যোগাযোগ করলে, প্রশাসনের করার কিছু থাকলে অবশ্যই করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

NRC Old Couple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy