সমস্যা: জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীর উপরে হেলে থাকা দ্বিতীয় রেল সেতু। ছবি: সন্দীপ পাল
হেলে থাকা স্তম্ভটির মাথা কেটে, ‘ঘুম পাড়িয়ে’, চারপাশ দিয়ে নতুন ২০টি স্তম্ভ তুলে তার উপরে পাতা হবে রেল লাইন। জলপাইগুড়ির তিস্তা র উপরে দ্বিতীয় রেল সেতু চালু করতে এমনটাই কৌশল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের।
প্রায় চার বছর আগে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তায় দ্বিতীয় রেল সেতুর জন্য স্তম্ভ গাঁথা শুরু হয় নদীবক্ষে। হঠাৎই একটি স্তম্ভ হেলে যায়। তার পরেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। থমকে থাকা সেতুর কাজের জন্য আটকে যায় এনজেপি তথা দেশের অন্য প্রান্তের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের ডবল লাইনে রেল যোগাযোগ। প্রায় ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। অবশেষে উপায় বের করেছে রেল। হেলে যাওয়া স্তম্ভটির মাথা কেটে তার উচ্চতা কমানো হবে। তার পরে তার চারপাশে নতুন ২০টি স্তম্ভ তৈরি হবে। নতুন স্তম্ভগুলি ধরে থাকবে রেল সেতুর ভার। হেলে যাওয়া স্তম্ভকে কোনওরকম ‘বিরক্ত’ করা হবে না বলে দাবি রেলের বাস্তুকারদের। সেটাকেই সরল করে বাস্তুকারেরা বলছেন, ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হবে স্তম্ভটিকে।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের নির্মাণ বিভাগের প্রধান বাস্তুকার বিএস মিনা বলেন, “হেলে যাওয়া স্তম্ভটিকে কোনওভাবে বিরক্ত করা হবে না। স্তম্ভের চারপাশে নতুন স্তম্ভ তৈরি হচ্ছে। যদি কোনও দিন হেলে যাওয়া স্তম্ভটি নদীতে পুরোপুরি তলিয়েও যায়, কোনও সমস্যা নেই।” তিস্তায় দ্বিতীয় সেতু তৈরির পরে ডবল লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে। তখন উত্তর-পূর্ব ভারতে ট্রেনের সামগ্রিক গতি বৃদ্ধি পাবে। যার সুফল শিয়ালদহ থেকে এনজেপি এবং নয়াদিল্লি থেকে এনজেপি বিভাগে যে ট্রেনগুলি চলে, সেগুলিও পাবে বলে দাবি রেলের।
রেল সূত্র জানাচ্ছে, সমস্যা তৈরি করেছিল নদী গর্ভে থাকা পাথর। রেল সেতু তৈরির আগে সমীক্ষা হয়। নদীর গভীরে পাথর রয়েছে— এমন এলাকায় সাধারণত রেল সেতু তৈরি হয় না। জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রে তেমনটাই ঘটেছিল বলে দাবি। একটি স্তম্ভের নীচে পাথর ছিল। স্তম্ভটি তৈরির কিছুদিন পরেই পাথর সরতে শুরু করে। স্তম্ভটি একদিকে কাত হতে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রেলের বাস্তুকাররা পরিদর্শন করে গিয়েছিলেন। কেউই হেলে যাওয়া স্তম্ভ সোজা করার উপায় বাতলাতে পারেননি। হেলে থাকা স্তম্ভ ভেঙে ফেলাও সম্ভব নয়। কারণ স্তম্ভটি ভাঙতে বা উপড়ে ফেলতে হলে যে শক্তি চাই, তাতে আশপাশের স্তম্ভগুলিতেও প্রভাব পড়তে পারে। পাশেও একটি রেলসেতু আছে, সেটিও দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এরপর দু’বছর কেটে গিয়েছে। শেষে নতুন উপায়ে রেল বোর্ড সিলমোহর দেয়।
নতুন সূত্র অনুযায়ীই হেলে যাওয়া স্তম্ভের মাথার দিকের কিছুটা কেটে ফেলা হবে। তার পর সেটিকে আর ছোঁয়াই হবে না। হেলে যাওয়া মাথা কাটা স্তম্ভের দূর দিয়ে গোল করে ২০টি নতুন স্তম্ভ হবে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভানন চন্দ বলেন, “আগামী আর্থিক বছরের মধ্যে ডবল লাইন তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে।” তিস্তার দ্বিতীয় সেতু আগামী মার্চের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ এসেছে রেল বোর্ড থেকে। হাতে সময় মাস দেড়েক। অনুমোদন মিলতেই হেলে থাকা স্তম্ভকে ঘুমের রাজ্যে পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy