দুর্ভোগ: বহির্বিভাগে চিকিৎসক নেই। রোগী নিয়ে যাওয়ার স্ট্রেচারও অমিল। তাই এ ভাবেই রোগীদের নিয়ে গিয়েছেন সঙ্গীরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনে বুধবার থেকেই বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের পরিষেবা। বহির্বিভাগে বন্ধ ছিল সে দিন। বৃহস্পতিবার এসএসকেএমে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কাজে যোগ দেওয়া নিয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরে সব কাজই বন্ধ করে দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সিনিয়র ডাক্তার ও অধ্যাপক চিকিৎসকদের দিয়ে তার পরেও কোনও রকমে জরুরি বিভাগে পরিষেবা দেন মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাতে মেডিক্যালের অধ্যক্ষ প্রবীরকুমার দেব ও হাসপাতালের সুপার কৌশিক সমাজদার একযোগে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, সিনিয়র ডাক্তারেরাই বলেছেন, পর্যাপ্ত লোক এবং নিরাপত্তা না পেলে আর ২৪ ঘণ্টার বেশি হাসপাতালের কাজ চালানো সম্ভব হবে না।
রাজ্য প্রশাসনকে পাঠানো সেই চিঠিতে তাঁরা আরও লিখেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতির পরে যে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচাররা সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে, শুধু মুমূর্ষু রোগীদের জন্য জরুরি পরিষেবা দেওয়া হবে।’ এর পরেই তাঁরা আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলে জানান, তা হলেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানো সম্ভব।
হাসপাতালের সুপার কৌশিক সমাজদার বলেন, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকেরা অন্তর্বিভাগে পরিষেবা না দেওয়ায় চিকিৎসকের ঘাটতি দেখা দেবে। আপাতত সিনিয়র চিকিৎসকেরা অন্তর্বিভাগের পরিষেবা দেবেন। এবং জরুরি বিভাগের সামনে শিবির করে রোগীদের দেখবেন। শুক্রবার থেকে বহির্বিভাগ চালানো সম্ভব হবে না।’’
এ দিন দফায় দফায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে সৌম্যদীপ রায় জানান, মুখ্যমন্ত্রী হস্টেল খালি করার মন্তব্য জুনিয়র ডাক্তারদের একপ্রকার হুমকি দেওয়ার সামিল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তীব্র নিন্দা করছি। আন্দোলন চলবে। জরুরি পরিষেবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চালাবেন। অন্তর্বিভাগে আপাতত জুনিয়র চিকিৎসকেরা পরিষেবা দেবেন না।’’ তাতে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাবেন না বলে মনে করা হচ্ছে। এ দিন উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজের গেটও বন্ধ করে রাখা হয়। বহির্বিভাগে পরিষেবা মেলেনি।
এ দিন বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় পরিষেবা চালুর দাবিতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সুপারের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন রোগী ও তাঁদের পরিবারেরা। বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ সুপার জানান, আধ ঘণ্টার মধ্যে বহির্বিভাগ খোলা হবে। তা না হওয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রোগীর পরিজন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ মিছিল করে সুপারের দফতরে যান। করিডরের মুখে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে বচসা, তর্কাতর্কি, ধ্বস্তাধস্তি হয়। ক্ষুব্ধ লোকজন হাসপাতালের ক্যান্টিন বন্ধ করে দেন। হাসপাতালের সামনে এশিয়ান হাইওয়ে-২’তে অবরোধ শুরু করেন। মিনিট তিনেক পর পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।
জরুরি বিভাগের সামনে গত দুই দিনের মতো অবস্থান করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। ততক্ষণে খবর আসে মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। চাপে পড়ে বহির্বিভাগ না খুললেও টিকিট কাউন্টারের সামনে চেয়ার টেবিল পেতে বসে বেলা ১২টা থেকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে শুরু করেন চিকিৎসকদের একাংশ।
হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতে সুপারের দফতরে বৈঠক হয়। এ দিন কোনও অস্ত্রোপচার হয়নি।
বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় কেমোথেরাপি নিতে আসা কালিয়াগঞ্জের শান্তি মাহাতো, রাজগঞ্জের আজিমা খাতুনদের মতো ক্যানসারের রোগীরাও বিপাকে পড়েন। সুপারের দফতরের সামনে বসে পড়ে তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ইউনিটের সভাপতি সাগ্নিক মুখোপাধ্যায় তখনই জানিয়ে দেন, তাঁদের এই আন্দোলন চলবে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy