Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Security of Women

নিরাপত্তায় ঢিলেমি, অরক্ষিত হাসপাতাল

রাত ১টা ৫ মিনিট। মাতৃমা ভবনের পাশে হাসপাতাল ভবন। সেখানে পুরুষ-মহিলাদের সংক্রমণ, মেডিসিন, জরুরি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, দুটি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটও রয়েছে।

রাতে রক্ষীহীন মালদহ মেডিক্যাল কলেজের মহিলা মেডিসিন বিভাগ।

রাতে রক্ষীহীন মালদহ মেডিক্যাল কলেজের মহিলা মেডিসিন বিভাগ। নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৪ ০৯:২৩
Share: Save:

দৃশ্য ১: মুখে অনর্গল দু’চার অক্ষরের গালিগালাজ। জাতীয় সড়ক লাগোয়া লোহার গেট ঠেলে মালদহ মেডিক্যাল কলেজের চৌহদ্দিতে ঢুকলেন এলোমেলো পায়ের বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক। মিনিট দশেক চিৎকার করে শুয়ে পড়লেন মাতৃমা বিভাগ লাগোয়া কংক্রিটের ব্রেঞ্চে। বিরক্ত প্রকাশ করেন ঘুমিয়ে থাকা অন্য রোগীর আত্মীয়েরা। দেখা মেলেনি হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী বা কোনও পুলিশ কর্মীর। ঘড়িতে তখন রাত ১২টা বেজে ৪২ মিনিট।

দৃশ্য ২: রাত ১টা ৫ মিনিট। মাতৃমা ভবনের পাশে হাসপাতাল ভবন। সেখানে পুরুষ-মহিলাদের সংক্রমণ, মেডিসিন, জরুরি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, দুটি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটও রয়েছে। সেখানে প্রবেশের জন্য একটি ছোট গেট রয়েছে। সে পথ ধরে সংক্রমণ বিভাগ, ওয়ার্ড মাস্টার রুম পেরিয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে দেখা গেল বেঞ্চে বসে উর্দিধারী তিন নিরাপত্তারক্ষী। তাঁদের ঘিরে গল্পে মশগুল আরও চার যুবক। হন্তদন্ত হয়ে মহিলা বিভাগের দিকে এগিয়ে যান চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই নিরাপত্তারক্ষীদের। চল্লিশোর্ধ্বের পিছু গিয়ে দেখা গেল দ্বিতলের মহিলা মেডিসিন বিভাগে গিয়ে মহিলাকে জরুরি ওষুধ দিতে আসতে। সেখানে কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। চল্লিশোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি বলেন, “দিনে কড়াকড়ি থাকে। রাতে কড়াকড়ি একটু আলগা হয়।” এক নিরাপত্তারক্ষীর যুক্তি, “রাতে রোগীর আত্মীয়দের ভিড় কম থাকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ওয়ার্ডে কেউ আসেন না। তাই, গভীর রাতে একটু কড়াকড়ি কম করা হয়।”

সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা মালদহ মেডিক্যাল কলেজ। জাতীয় সড়ক লাগোয়া হাসপাতাল ভবনের সামনে দু’টি বড় গেট রয়েছে। এর মধ্যে একটি দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স যাওয়া আসা করে। অপরটি আংশিক খোলা থাকে। পাশে হেঁটে যাতায়াতের জন্য ছোট একটি গেট। প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রছাত্রীদের হস্টেল লাগোয়া একটি গেট রয়েছে। সে গেটে রক্ষী থাকলেও উন্মুক্ত বাকি গেটগুলি। কলকাতা আরজি কর কাণ্ডের পরে রাতের নিরাপত্তার এই ছবি মালদহ মেডিক্যাল কলেজের। চুরি, কেপমারির মতো ঘটনা প্রায় ঘটে। শিশুচুরির অভিযোগও রয়েছে। অথচ পুলিশ ফাঁড়ি, হাসপাতালের নিজস্ব ২৫৬ জন নিরাপত্তারক্ষী, ক্লোজ়ড সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। তার পরেও নিরাপত্তার হাল এমন কেন, উঠছে প্রশ্ন। জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, ফাঁড়ি থাকলেও রাতে হাসপাতাল চত্বরে পুলিশের টহলদারি চোখে পড়ে না। নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও তাঁদের সিংহ ভাগই প্রশিক্ষিত নন। এক মহিলা জুনিয়র চিকিৎসক বলেন, “রাতে দুর্ঘটনায় জখম রোগী আসে। তাঁরা অনেকেই মদ্যপ থাকেন। মনে ভয় নিয়েই তাঁদের চিকিৎসা করতে হয়।”

নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান মেডিক্যাল কলেজের সুপার সহ-অধ্যক্ষ প্রসেনজিৎ বর। তিনি বলেন, “পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষীদের নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। তবুও নজরদারিতে ঘাটতির অভিযোগ দেখা হচ্ছে।” মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “ফাঁড়ির পুলিশকে রাতে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Malda Medical College & Hospital Malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy