দিন কয়েক আগে বিয়ে করেছি৷ এখনও প্যান্ডেল ও বাজারে টাকা বাকি৷ ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে৷ কিন্তু ব্যাঙ্কে টাকা না পেয়েঘুরে আসতে হচ্ছে৷ শনিবার জলপাইগুড়ি শহর চষে বেড়ালাম একটা এটিএমের খোঁজে৷ কিন্তু সবই বন্ধ৷ যে দু’একটা খোলা ছিল সেগুলিতেও টাকা নেই৷ বুঝতে পারছি না এত ধার মেটাবো কি করে৷
বাপ্পা দাস | বেরুবাড়ি
প্রতিদিনই ব্যাঙ্কে লম্বা লাইন৷ তার মধ্যেই কোনও মতে দিন সাতেক আগে একবার কিছু টাকা তুলেছিলাম ৷ সেই টাকা শেষ৷ শুক্রবার ব্যাঙ্ক গিয়েও টাকা পাইনি৷ শনিবার তো সব এটিএমই বন্ধ পাচ্ছি। বাড়িতে মা অসুস্থ৷ তাঁর ওষুধ কেনার জন্য টাকার প্রয়োজন৷ এখন মনে হচ্ছে ওষুধের দোকানে গিয়ে হাতে-পায়ে ধরে টাকার ব্যবস্থা করতে হবে৷
সমীর চন্দ | বেলাকোবা
কাঁচা মালের ব্যাবসা করি৷ মহাজনের থেকে ধার করে বেশ কিছুদিন চালালাম৷ এবার টাকা শোধ করতে হবে৷ কিন্তু শুক্রবার ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা পেলাম না৷ শনিবার তো আবার ব্যাঙ্ক বন্ধ৷ এটিএম থেকেও টাকা পাচ্ছি না৷ মহাজনের টাকা মেটাতে এখন দেখছি অন্য কারও থেকে টাকা ধার করতে হবে৷
রাজু দাস | খড়িয়া
পরপর দু’দিন ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার চেষ্টা করেছিলাম৷ কিন্তু এত বড় লাইনে দাঁড়ানো সম্ভব ছিল না৷ শনিবার যে ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে, জানতাম না৷ ব্যাঙ্ক যে সময়ে খোলে তার আগেই ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ পরে শুনলাম ব্যাঙ্ক বন্ধ৷ বাড়িতে টাকার খুব দরকার৷ কিন্তু সোমবারের আগে তো আর তুলতেই পারবো না৷
বলাই রায় | রায়কতপাড়া
একমাত্র মেয়ের বিয়ে বাবদ মাত্র ১৫ হাজার টাকা বালুরঘাটের প্রধান ডাকঘর থেকে তুলতে এসেছিলাম। পেলাম না। সেই সকালে মালঞ্চা গ্রাম থেকে ট্রেকার ধরে বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ডে নেমে পায়ে হেঁটে একাই পোস্ট অফিসে এসেছিলাম। পোস্টমাস্টারের পায়ে ধরে অনেক অনুরোধ করলাম। গ্রামীণ ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকলেও মেয়ের বিয়ের জন্য বড় ডাকঘরেই ২০ হাজার টাকা জমিয়েছিলাম। পোস্টমাস্টার বললেন তাঁর হাত-পা বাঁধা।
প্রতিমা বসু | বালুরঘাট
এলাকার এটিএমে টাকা নেই। এদিকে আলু চাষের জন্য টাকা দরকার। বাধ্য হয়ে কোচবিহার শহরে এসেছি। একাধিক এটিএম বন্ধ ছিল। ঘোরাঘুরি করে সাগরদিঘি পাড়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি। মাত্র দুই হাজার টাকা পেলেও আখেরে চাষের কাজ কতটা করতে পারব জানি না।”
সফিউল ইসলাম | পুণ্ডিবাড়ি
আমার স্বামী রিকশা চালক। অনটনের সংসার। বন্ধন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। সেটা অনেকটা শোধও করেছি। ওই ব্যাঙ্কের ঘুঘুমারি শাখার অ্যাকাউন্টেই আমাদের কষ্টের কিছু সঞ্চয় রয়েছে। গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকবার গিয়ে দরবার করেও টাকা পাইনি। এই অবস্থায় সংসার চালানর মত অবস্থা আর নেই। তাই বাধ্য হয়েই ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে কোচবিহার শহরে এটিএমের লাইনে দাঁড়িয়েছি। এ যে কী কষ্টকর, কেউই বুঝবেন না।”
সারিদা বিবি | ঘুঘুমারি
আমার বয়স ৭২ বছর। স্বামী রণজিৎ দত্তের ৮৫ বছর বয়স। গুরুতর অসুস্থ। একমাত্র রোজগেরে ছেলে মারা গিয়েছে। মালবাজারের স্টেট ব্যাঙ্কের শাখাতে একমাত্র অ্যাকাউন্ট। বাইরে থেকে আত্মীয়েরা নিয়মিত এই অ্যাকাউন্টে আর্থিক অনুদান পাঠান। অ্যাকাউন্ট বইটিতে আবার চেক বইয়ের সুবিধাও নেই। বাধ্য হয়েই গত শুক্রবার টাকা তুলতে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। ব্যাঙ্কের লম্বা লাইনে বেশি ক্ষণ দাঁড়াতে না পেরে বাড়ি চলে আসি। অন্তত ৫হাজার টাকার খুব প্রয়োজন। সোমবারের দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।
প্রণতি দত্ত | মালবাজার
গত কয়েকদিন খুচরো টাকার অভাবে বহু ক্রেতাকে ফিরিয়ে দিয়েছি। সংসারের খরচেরও টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিল। এ দিন টাকা তোলার জন্য বেলা ১২টা থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা একটি এটিএমের সামনে লাইনে দাঁড়াই। প্রায় দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর এটিএমের সামনে যখন আসলাম, তখনই শুনলাম টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। সেই শুনে পরে ছুটে গিয়ে দেবীনগর এলাকার একটি এটিএমের সামনে প্রায় এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ১৫০০ টাকা তোলার চেষ্টা করি। সেখান থেকে বাধ্য হয়ে দু’হাজারের নোট নিয়ে বাড়ি ফিরি।
বাবলু সরকার | উকিলপাড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy