Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

খদ্দের নেই, গবাদি পশুও বেচতে পারছেন না চাষিরা

মহাজনের কাছে ধার করে ৬ বিঘা জমিতে সর্ষে এবং গমের বীজ ফেলেছেন বাদ সনকইর গ্রামের চাষি মিন্টু ঘোষ। ৮ হাজার টাকা শোধ দেওয়ার সঙ্গেই সার কেনার জন্য এলাকার গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ধর্না দিয়েও হাজার টাকার বেশি মেলেনি।

ফাঁকা হাট। ছবি:অমিত মোহান্ত

ফাঁকা হাট। ছবি:অমিত মোহান্ত

অনুপরতন মোহান্ত
তপন শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩৩
Share: Save:

মহাজনের কাছে ধার করে ৬ বিঘা জমিতে সর্ষে এবং গমের বীজ ফেলেছেন বাদ সনকইর গ্রামের চাষি মিন্টু ঘোষ। ৮ হাজার টাকা শোধ দেওয়ার সঙ্গেই সার কেনার জন্য এলাকার গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ধর্না দিয়েও হাজার টাকার বেশি মেলেনি। কোনও উপায় না দেখে অগত্যা হালের জোড়া বলদ বেচতে এসেছেন হাটে। কিন্তু হাটের হাল দেখে মিন্টুবাবু অবাক। ক্রেতা-বিক্রেতার সেই ভিড়ই নেই।

শনিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের বালাপুর হাটের ছবিটা ছিল এমনই। আয়তনে ছোট হলেও গরু, ছাগল বেচাকেনার জন্য এই হাটের বেশ নামডাক আছে। হাটের ম্যানেজার অলোক সরকার বলেন, ‘‘আগে প্রতি শনিবার বালাপুর হাটে কেবল গবাদিপশুর হাটেই গড়ে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার কেনাবেচা হতো। নোট বাতিলের ধাক্কায় নগদ টাকার অভাবে বর্তমানে বিক্রিবাট্টা নেমে দাঁড়িয়েছে ৭০-৮০ হাজার টাকায়।’’ খদ্দেরের অভাবে একাংশ গৃহস্থই হাটমুখো হচ্ছেন না। রবিচাষে খরচের টাকা জোগাতে ছোট কৃষকেরা শেষ সম্বল বাড়ির ছাগল, হালের বলদ বেচতে এলেও খদ্দের পাচ্ছেন না। দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে রয়েছে হাটের আবহাওয়া।

তপন-বালুরঘাট রাজ্য সড়কের পাশেই বসে বালাপুর হাট। রাস্তার ধারে সারবদ্ধ হয়ে ছাগল বিক্রেতাদের ভিড়ে বসে ছিলেন শিবপুর এলাকার চাষি সবুর আলি মন্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আট জনের পরিবার। ছোট ছেলে দুলাল হায়দরাবাদে শ্রমিকের কাজ করে। প্রতিবার চাষের সময় টাকা পাঠায়। এ বারে নোট সমস্যায় মজুরির টাকাও ঠিকমতো পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে। মহাজনের কাছে ৬ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৩ বিঘা জমির ২ বিঘাতে সর্ষে এবং ১ বিঘাতে গম লাগিয়েছি। ব্যাঙ্ক ও ডাকঘর থেকে টাকা মিলছে না।’’ সুদের চাপ কমাতে মহাজনের ওই টাকা শোধ দিতে তিনি একটি বড় খাসি নিয়ে এসেছেন। দাম রেখেছেন ৬ হাজার টাকা।

দুশ্চিন্তায় আষাঢ়ে মেঘের মতো মুখ ভার সবার। সবুরের মতো এলাকার কাশীডাঙার জাহাঙ্গির মন্ডল, বালুরঘাটের গঙ্গারাসাগর গ্রামের নিকাশ মন্ডল, তপনের রামচন্দ্রপুরের আব্দুল আলিম এক-দু’জোড়া ছাগল ও খাসি বেচতে এসে সবুর আলি মন্ডলের মতো আতান্তরে পড়েছেন। কিনবে কে? এক দুজন ক্রেতা দরদাম করে চলে যাচ্ছেন। ভবানীপুর এলাকার ছোট চাষি পালন সরেন দু জোড়া গরু নিয়ে হাপিত্যেশ করে বসেছিলেন। বললেন, ‘‘গরু দুটি বেচে মুদির দোকানে গত দুমাসের ধার শোধ না দিতে পারলে সেদ্ধ ভাত ছাড়া কিছু জুটবে না। সামান্য ২ বিঘা জমিতেও সর্ষে লাগানো হবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy