আগে মিড ডে মিলে এক বেলার খাওয়া বন্দোবস্ত হয়ে যেত। দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল ছুটি থাকায় এখন সেই মিড-ডে মিলের ভরসাটুকুও নেই। পাঁচ মাস পেরিয়ে গিয়েছে।
জলপাইগুড়ির ৭৩ মোড় লাগোয়া চৌরঙ্গি এলাকার ভাই-বোনের দিন যাপনের ছবিতে এ ছাড়া আর কোনও পরিবর্তন হয়নি। যদিও, এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। সংবাদমাধ্যমে ভাই-বোনের অভাব-দুর্দশার কথা জেনে সরকারি নানা কমিটির ঘনঘন পরিদর্শন করেছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সে সবই অতীতের কথা।
আট-নয় বছরের দুই পিঠোপিঠি ভাইবোন। অভয়-অনিতা। পড়শিরা দাবি করেন, কয়েক বছর আগে ওদের মা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। বাবা আশু পাল মানসিক ভারসাম্যহীন বলে বাসিন্দাদের দাবি। দরমা বেড়ার ঝুরঝুরে একটা ঘরে ভাই-বোন থাকে। এক বেলা মিড-ডে মিলের খাবার খায়, অন্য বেলা হাত পুড়িয়ে রান্না করে। যেদিন চাল মেলে না সেদিন শাক, কচু সেদ্ধ করে খায়। গত ডিসেম্বর মাসে লাগোয়া একটি স্কুলের শিক্ষিকাদের কয়েকজন বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের নজরে আনলে প্রশাসন থেকে শুরু করে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলির মধ্যে সাহায্য-আশ্বাসের বান ডাকে বলে বাসিন্দাদের দাবি। তার পরে কিছু দিন যেতেই ফুরোতে শুরু করে সাহায্যের চাল-আনাজ, বাসিন্দাদের অভিযোগ, আশ্বাস অনুযায়ী পদক্ষেপও হয়নি।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, অনিতা উনুনে হাঁড়ি চাপিয়েছে। তাতে কিছু ঢেঁকি শাক ফুটছে। সাহায্যে পাওয়া চাল ফুরিয়ে গিয়েছে। অনিতা বলল, ‘‘দুই দিদি এসে রুটি দিয়ে গিয়েছে। শাক আর রুটি খাব। আগে অনেকে আসতেন।’’ অভয় বাড়ির উঠোনে থাকা কুয়ো থেকে খাওয়ার জল তুলছে। কুয়োয় কোনও রিং নেই। জল তোলার সময়ে কাঁচা মাটির কুয়োর পাড় ভেঙেও বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
বাসিন্দারা দাবি করেছেন, এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। কেননা, গত ডিসেম্বরে শিশু কল্যাণ সমিতির তরফে বাড়ি-ঘর পরিদর্শন করে ভাই-বোনকে সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। সরকারি প্রকল্পে প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে বরাদ্দ করার কথা ছিল। সেই মতো এলাকার এক বাসিন্দা হলফনামা দিয়ে ভাই-বোনেরে নজরদারি রাখবেন বলে জানিয়ে দেন। তারপরে কখনও শিশুকল্যাণ সমিতি কখনও বা জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিকের দফতরে ঘুরেও ফল হয়নি বলে অভিযোগ। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘কেউ দাবি করেছেন, প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, কেউ বা জানিয়েছেন সরকারি বরাদ্দ নেই।’’
হলফনামা দাখিল করে অভয়-অনিতার সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধে দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন যতীন পাল। তিনি বলেন, ‘‘পড়শিরা মাঝেমধ্যে দুই ভাইবোনকে বাড়িতে ডাকে। কিন্তু ওরা যায় না। ভয়টা হল মেয়েটা বড় হচ্ছে। তা ছাড়া বাচ্চা দু’জন রান্না করে, নিজেরা থাকে, কোন দিন কী অঘটন ঘটে কে জানে!’’ যতীনবাবুর আক্ষেপ, ‘‘সরকারি প্রকল্পের কথা শুনে দ্রুত হলফনামা দাখিল করেছিলাম। তারপর তো কিছুই হল না।’’
কী বলছেন সরকারি আধিকারিকরা?
জলপাইগুড়ির সদর মহকুমা শাসক সীমা হালদার বলেন, ‘‘বিষয়টি আমি জানি। দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিচ্ছি।’’ জলপাইগুড়ি জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সুস্মিতা ঘোষ বলেন, ‘‘একটা প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক কিছুটা দেরি হয়েছে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল ওদের অভিভাবক রয়েছে, এখন দেখা যাচ্ছে ওদের কোনও আত্মীয়ও নেই।’’ ভাই-বোন দু’জনকেই হোমে পাঠাতে হবে। শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান বেবী উপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারি অনুদানের প্রস্তাব আমরা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তারপরে কী হয়েছে খোঁজ নিতে হবে। মনে হয় ভোট প্রক্রিয়ার জন্য প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়েছে।’’ বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও ভাই-বোনের দায়িচত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ারের সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওরা যাতে সরকারি অনুদান পায়, তার সব কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছিল। ভোটের জন্য কাজ কিছুটা দেরি হয়েছে মনে হচ্ছে। খোঁজ নিচ্ছি।’’
সরকারি প্রক্রিয়া কবে শেষ হবে, তাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy