Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

যুবকের মৃত্যুতে পঞ্জির উদ্বেগও

ব্যাঙ্ক থেকে কাগজ কী ভাবে পাওয়া যাবে, কাগজ পেলেও সেই কাগজ দিয়ে তালিকায় নাম রাখা যাবে কি না— এ সব নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন বলে পরিবারের দাবি। তাদের বক্তব্য, এনআরসি আতঙ্কে মানসিক চাপে ছিলেন অন্নদা। সেই চাপ সামলাতে না পেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি, দাবি ওই আত্মীয়দের। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান ঘটনাটি আত্মহত্যার।

নির্বাক: মৃত অন্নদা রােয়র পরিজনেরা। রয়েছেন মৃতের বাবা অমূল্য রায় (একেবারে ডান দিকে) ও মৃতের মা শান্তি রায় (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়)। শুক্রবার ময়নাগুড়ির বড় কামাত এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

নির্বাক: মৃত অন্নদা রােয়র পরিজনেরা। রয়েছেন মৃতের বাবা অমূল্য রায় (একেবারে ডান দিকে) ও মৃতের মা শান্তি রায় (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়)। শুক্রবার ময়নাগুড়ির বড় কামাত এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়
ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:৩৬
Share: Save:

এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে গেল এনআরসি আতঙ্ক। শুক্রবার সকালে ময়নাগুড়ি থানার বড় কামাত এলাকার একটি রেল ওভারব্রিজের নীচ থেকে যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতের নাম অন্নদা রায় (৩৯)। বড় কামাত এলাকাতেই অন্নদার বাড়ি। মৃত যুবকের পরিবারের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তথা এনআরসি আতঙ্কে ভুগছিলেন অন্নদা। তাঁর নিজের নামে চার বিঘা জমি রয়েছে। সেই জমির কাগজ বন্ধক রেখে কৃষিঋণ নিয়েছিলেন। এনআরসির সময় সেই কাগজ দেখালে তালিকায় নাম উঠবে কি না, সে বিষয়ে সকলের কাছে ঘনঘন জানতে চাইতেন বলে পরিবারের দাবি। ব্যাঙ্ক থেকে কাগজ কী ভাবে পাওয়া যাবে, কাগজ পেলেও সেই কাগজ দিয়ে তালিকায় নাম রাখা যাবে কি না— এ সব নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন বলে পরিবারের দাবি। তাদের বক্তব্য, এনআরসি আতঙ্কে মানসিক চাপে ছিলেন অন্নদা। সেই চাপ সামলাতে না পেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি, দাবি ওই আত্মীয়দের। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান ঘটনাটি আত্মহত্যার।

চার বিঘা জমিতে মরসুমি চাষ করতেন অন্নদা। কিছু দিন আগে আলু চাষ করে লাভ হয়েছিল বলে পরিবারের দাবি। বর্তমানে পাট চাষ করেছেন। সম্প্রতি একটি স্কুটারও কিনেছিলেন। ৯০ হাজার টাকা কৃষিঋণ রয়েছে তাঁর। সেই ঋণ পেতেই জমির কাগজ বন্ধক রাখতে হয়েছে। পরিবারের দাবি, এ দিন ভোরে অন্নদা বাড়ি থেকে বার হয়। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ লোকমুখে আত্মহত্যার খবর পান বলে পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে। পরে ময়নাগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করে পরিবার। সেই অভিযোগে তাঁরা জানান, অন্নদা এনআরসি আতঙ্কে ভুলছিলেন এবং সে কারণে আত্মহত্যা করতে পারেন। মৃতের দাদা বলেন, “ক’দিন ধরে ভাই কেবলই জিজ্ঞেস করত, ব্যাঙ্ক থেকে জমির কাগজ ফিরিয়ে আনবে কী ভাবে। জমির কাগজ ফিরিয়ে আনলেও, ১৯৭২ সালের পরের সেই দলিল কাজে লাগবে কি না, তা-ও জানতে চাইত। এ সব নিয়ে মানসিক চাপে ছিল। তাই ও আত্মহত্যা করতে পারে।”

পরিবার সূত্রের থানায় দাবি করা হয়েছে, বছর তিনেক আগে একবার গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন অন্নদা। সে সময় বেশ কিছু দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিও থাকতে হয় তাঁকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একাংশের দাবি, অন্নদার বাবা-দাদার জমির কাগজ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অন্নদার নাগরিত্ব প্রমাণে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা ছিল না। তা ছাড়া রাজ্যে যে এনআরসি এখন হচ্ছে না, সে কথাও পরিবারের তরফে যুবককে বোঝানো হয়েছিল বলে দাবি।
যুবকের মৃত্যু নিয়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে জেলা জুড়ে। জলপাইগুড়িতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “এনআরসি আতঙ্ক একের পর এক প্রাণ কাড়ছে। সকলের কাছে কি কাগজ থাকবে? আমার নিজেরই তো ১৯৭১ সালের আগের কোনও নথি নেই। রাজ্যে এনআরসি চালু হতে দেব না।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য দাবি করেন, ‘‘যে ভাবেই হোক এই আতঙ্ক বন্ধ করতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

NRC Agricultural Loan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE