বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসে অবস্থার জন্য ভুটানকে দায়ী করলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। সোমবার উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলাশাসক এবং পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠকে বসেন সেচমন্ত্রী। দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলা প্রশাসন এবং সেচ দফতরের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক সারেন মন্ত্রী। পার্থ বলেন, ‘‘কোনও প্রকার তথ্য বা যোগাযোগ ছাড়াই জল ছাড়ছে ভুটান। যার ফলেই এই পরিস্থিতি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ভুটানের জল ছাড়ার ফলে ডুয়ার্সের রায়ডাক, সঙ্কোশ, বাসরা, কালজানি, জয়ন্তী এবং তোর্সা নদীতে জলস্তর বাড়ছে। তার ফলেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’
সাংবাদিক বৈঠকে সেচমন্ত্রী জানান, গত ৮ জুলাই থেকে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে অবিরাম বৃষ্টি হয়েছে। এখানকার মানুষ সমস্যার মধ্যে রয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মুখ্যমন্ত্রী আমায় পাঠিয়েছেন। সকালে (সোমবার) বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেছি। আগামিকাল (মঙ্গলবার) আলিপুরদুয়ার যাব। সেচমন্ত্রী জানান, কোথায় কোথায় মানুষ সমস্যায় রয়েছেন, তা চিহ্ণিত করেছে প্রশাসন। সেই অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। কোচবিহারের ৪৮টি জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলিপুরদুয়ারে ১৩টি জায়গা বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। সেগুলোর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘ভুটানের জল মূলত আলিপুরদুয়ারের উপর এসে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী একাধিক বার ব্যাপারটা কেন্দ্রকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। ভুটান না জানিয়েই জল ছাড়ছে। এটা তো আর রাজ্যের বিষয় নয় যে রাজ্য সমাধান করবে। অন্য দিকে, ভুটানও কোনও তথ্য দিচ্ছে না। আগে থেকে জানলে পদক্ষেপ করা যায়।’’
পাহাড়ে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি পর সমতলের নদীগুলিতে জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। একাধিক জায়গায় হলুদ সঙ্কেত জারি করে জেলা সেচ দফতর। এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসে সেচমন্ত্রী পার্থের নেতৃত্বাধীন বিশেষ দল। মন্ত্রীর পাশাপাশি ওই কমিটিতে ছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্তারা। সোমবার বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে সোজা জলপাইগুড়ি জেলার গাজলডোবা রওনা দেন তাঁরা। এর পর বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়া রাজগঞ্জ ব্লকে যান সেচমন্ত্রী। কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে সেখানকার কালভার্ট ভেঙে রাজগঞ্জ ব্লকের হদুগছ এবং যাত্রাপাড়ার মধ্যে যোগাযোগ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে মন্ত্রী জানান, জল অনেকটাই নেমে গিয়ে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। হদুগছ থেকে গাজলডোবার তিস্তা ব্যারেজ পরিদর্শন করে সোজা উত্তরকন্যায় চলে আসেন মন্ত্রী এবং পরিদর্শন দলের অন্য সদস্যরা। সেচমন্ত্রী বলেন, ‘‘হঠাৎ করে হড়পা বান এসে গেলে কোথা থেকে কী করব! মালবাজার থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা বৃষ্টি মাপার জন্য মেশিন বসাচ্ছি। তবে বানারহাট ও জলপাইগুড়ির খুব একটা ক্ষতি হয়নি। পর্যাপ্ত ত্রাণ জেলাশাসকদের কাছে আছে। জলমগ্ন এলাকাগুলিতে জল কমে গিয়েছে। মানুষের অভাব-অভিযোগ থাকলে সেটা আমরা দেখছি। সব রিপোর্ট যাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।’’
অন্য দিকে, সেচমন্ত্রীর মন্তব্যের সমালোচনা করেন শিলিগুড়ির বিজেপির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘আগে বাম সরকারকে দোষারোপ করতে গিয়ে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে, পশ্চিমবঙ্গের বন্যা ‘ম্যান মেড।’ বর্তমানে রাজ্যে সরকার পরিচালনা করছেন তাঁরা। উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তারা ব্যর্থ। কিন্তু অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর প্রবণতা তারা বজায় রেখেছে। এ বার ভুটান সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার সর্বদা সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy