ফেরা: ঘরের পথে সপরিবার এক শ্রমিক। ছবি: এএফপি
এখনও ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে ওঠেন রুস্তম। বাদলের পা দু’টিতে এখনও চিনচিনে ব্যথা। মাইলের পর মাইল পথ হাঁটা। খাবার নেই, পানীয় জল নিয়ে টানাটানি চলছে। শিশুদের কান্নাতেও কেউ সাড়া দেয় না। ওঁরা দু’জনের কেউই ভুলতে পারেন না সেই ঘটনাগুলি। এবং সেই দুঃস্বপ্নের পথে ওঁরা কেউ ফিরতে চান না। কেউ ভেবেছেন, এ বারে হকারি করবেন। একটি সাইকেলে জিনিসপত্র চাপিয়ে ঘুরে বেড়াবেন গ্রামের পথে। কেউ ভেবেছেন, বাড়ির পাশের বাজারে যদি একটা ছোট্ট দোকান দেওয়া যায়। পকেটে অবশ্য টান রয়েছে। ভাবছেন, যদি সরকারি কোনও সহায়তা পাওয়া যায়। আবার কেউ দিনমজুরি করবেন ঠিক করে রেখেছেন। ওঁদের কথায়, “লকডাউন ঊঠলেই আমরা নেমে পড়ব। তখন অনেক দিন হয়েও যাবে। করোনা আতঙ্ক কেটে যাবে নিশ্চয়ই। আর যেতে চাই না ভিন্ রাজ্যে। আমাদের তো মানুষই মনে করে না!”
ওই দলেই রয়েছেন কুশশারহাটের রুস্তম আলি, খলিসা গোসানিমারির বাদল কর্মকার, কুমারগঞ্জের বদিয়ার হোসেন, চান্দামারির আমজাদ হোসেন বা সাহেবগঞ্জের অমল সেন, মিঠুন সেনর। তালিকাটা আরও অনেক দীর্ঘ, ঠিক তাঁদের ফেলে আসা পথের মতো। রুস্তম বিহারের একটি ইটভাটায় কাজ করতেন। ওঁরা পঞ্চাশ জন কয়েকশো কিলোমিটার পথ হেঁটে দিন কয়েক আগে কোচবিহারে ফেরেন। ইটভাটায় শেষ দিকে কার্যত না খেয়ে থাকতে হয়েছে ওঁদের। শিশুদের জন্য খাবার জোগাড় করতে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়েছে। ফেরার পথে শরীর যখন শ্রান্তিতে ভেঙে পড়ছে, তখনও বিশ্রাম নিতে পারেননি স্থানীয়দের বাধায়।
তাঁর কথায়, “এত দিন আমরা ইটভাটায় থাকলাম। কেউ আমাদের মানুষ মনে করল না। ফেরার পথে সবাই সন্দেহের চোখে দেখল। এই জীবনে আর ফিরতে চাই না। আমার গ্রামই ভাল। এখানেই হকারি করব।” কয়েকশো কিলোমিটার পথ হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন বাদল কর্মকারও। তিনি বলেন, “ভেবেছিলাম বাড়ির সবাইকে একটু ভাল রাখব। তা হল না। তাই এ বারে এখানেই কিছু একটা করব।’’
চান্দামারির আমজাদ হোসেন, হাফিজুলরা ছ’জন গিয়েছিলেন অরুণাচলে। সেখানে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। ওঁদের কথায়, “বাড়ির কাছেই বাজারে ছোট্ট দোকান দিতে চাই। যদি সরকার বা প্রশাসন পাশে দাঁড়ায়, খুব ভাল হবে।”
কুমারগঞ্জের বদিয়ার হোসেন বলেন, “দিনমজুরি করব, তবুও আর ফিরে যাব না কাজের জায়গায়। যেখানে ভালবাসা নেই, সেখানে গিয়ে কী হবে?” অমল সেন, মিঠুন সেনরা মুম্বইয়ে একটি বস্ত্র কারখানায় কাজ করতেন। ওঁরা এখন কোয়রান্টিন সেন্টারে রয়েছেন। বলছেন, “টাকা একটু বেশি পাই। কিন্তু এমন বিপদ হবে ভাবিনি কখনও। তাই আর যাওয়ার মন নাই।”
তোর্সার পাড় ধরে ভরদুপুরে হাঁক দিচ্ছিলেন এক যুবক। নিজের নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানালেন, উত্তরপ্রদেশে একটি কারখানায় গার্ডের কাজ করতেন তিনি। মাস দেড়েক আগে বাড়ি ফিরেছিলেন। তার পর লকডাউন শুরু হয়। তিনি বলেন, “দিন কয়েক পরেই ফের কারখানায় ফেরার কথা ছিল। বেঁচে গিয়েছি। আর যাব না। এখন মাস্ক-গ্লাভস বিক্রি করছি। পরে না হয় আর কিছু করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy