—প্রতীকী চিত্র।
বাম আমল থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি। যুব নেতা থেকে সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য। তার পরে, রাজ্যের পালা বদলের ঠিক আগে শিবির বদলে লাল থেকে সবুজে। এর পর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি মহম্মদ আহিদ ওরফে চুটকিকে। ঠিকাদারি, নদী ঘাট ও পার্কিং থেকে জমির ব্যবসায় জোরদার হাত পাকিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। দলের একাংশের কথায়, ডাবগ্রাম-ফুলবা়ড়িতে আহিদ কেন, অনেকেই ‘চারা পোনা’ হয়ে রাজনীতির জীবন শুরু করে সময়ের পরিবর্তনে ‘হাঙর’ হয়ে গিয়েছে। প্রতিটি উত্থানের পিছনে রয়েছে জমির ‘অবৈধ’ কারবার।
জমি দখলের অভিযোগের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত আহিদের ‘ঘনিষ্ঠ’ মহল মনে করছিল, ‘দাদার’ গায়ে হাত পড়বে না। যুব নেতা থেকে সংখ্যালঘু শাসক দলের নেতা হয়েছেন। সম্পত্তি বাড়লেও অভিযোগ কই? তাই গ্রেফতার হওয়ার পরে আহিদের দাবি ছিল, ‘পরিকল্পনা’ করে সব হচ্ছে। যদিও শাসক দলের অন্দরের খবর, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে কে জমির ব্যবসায় জড়িত আর কে নয়, তার তালিকা করলে প্রায় কেউ বাদ যাবেন না। আর জমির ব্যবসায় ‘আমি নেই’ জাতীয় দাবি অনেকেই করেন, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে কান পাতলেই সব শোনা যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সমস্ত রিপোর্ট দফায় দফায় জমা পড়ে গিয়েছে বলে খবর। তাই কে, কোথায়, কী করেছেন তার অনেকটাই এখন সরকারের কাছে পরিষ্কার। তাই এক নয়, প্রয়োজনে একাধিক মামলা বা অভিযোগে অনেককেই যেতে হতে পারে কারাগারে।
শাসক দলের নেতাদের দাবি, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে বরাবর সিপিএম এবং কংগ্রেস থেকে দলে আসা লোকজনের রমরমা হয়েছে। নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) এলাকার একাধিক দাপুটে শ্রমিক নেতা থেকে শুরু করে ধৃত আহিদ ওরফে চুটকি সিপিএম ছেড়ে শাসক দলে এসেছিলেন। যেমন কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি থেকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হয়েছিলেন আর এক জমি মামলায় গ্রেফতার দেবাশিস প্রামাণিক। আহিদ ফুলবাড়ির অঞ্চল সভাপতি একাধিক বার হয়ে আরও প্রভাব বাড়ান বলে অভিযোগ।
‘উত্তরকন্যা’র উল্টো দিকে কামরাঙাগুড়ির অফিসে বসে আহিদ নিয়মিত চালাতেন তার রাজনৈতিক ‘কারবার’। বাড়ির আকার থেকে জীবনযাত্রা, গা়ড়ি, পোশাক থেকে সব পরিবর্তন হয় ধীরে ধীরে। দলের জেলা কমিটির নেতার কথায়, ‘‘একটি স্কুলের পিছনে এক ব্যক্তি জমি নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন। চুটকিকে ফোন করায় বলে, ‘ওটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। দেখা যাক, কী করা যায়’।’’
শহরের প্রাক্তন মেয়র সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘বামফ্রন্ট আমলের শেষ দিকে এক শ্রেণির সুবিধাবাদী সক্রিয় হয়েছিল। এদের অনেকেই জমির ব্যবসায় হাত পাকানো শুরু করে। আমরা বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া শুরু করেছিলাম। পরে, পালা বদলে এরা তৃণমূলে ঢুকে ফুলেফেঁপে উঠেছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘চুটকি আমাদের দলের হয়ে ভোটে জিতে পঞ্চায়েত সদস্যও হয়েছিলেন। পরে, এ দিকে সুবিধা করতে না পেরে শাসক দলে যান।’’
এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা দু’বারের মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য জমি সংক্রান্ত অভিযোগ ‘প্রশাসনিক বিষয়’ বলে মন্তব্য করেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy