এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হত স্ত্রীর সঙ্গে। দাম্পত্য কলহ আটকাতে অবশেষে সেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন স্বামী। শুধু তা-ই নয়, যাঁর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, সুপারি কিলার ভাড়া করে সেই মহিলাকে খুনও করেন ওই দম্পতি। গত ৮ নভেম্বর শিলিগুড়ি পুরসভার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের ভানুনগরে এক মহিলার মৃত্যুর তদন্তে নেমে এমনটাই অনুমান করছে পুলিশ।
চলতি মাসের ৮ নভেম্বর শিলিগুড়ির ভানুনগর এলাকার একটি বহুতল থেকে এক তরুণীর গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা এলাকায়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মৃত তরুণী শিলিগুড়িতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে প্রায় সাত মাস ধরে একাই থাকতেন৷ কাজ করতেন একটি পার্লারে। পরিচিত বলতে সহকর্মী ছাড়া তেমন কেউই ছিলেন না শিলিগুড়িতে।
মৃত্যুর খবর পেয়ে মালবাজারের গরুবাথান থেকে শিলিগুড়িতে এসেছিলেন ওই মহিলার পরিবারের লোকজন। ভক্তিনগর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তারপরেই রহস্যের কিনারা করতে মাঠে নামে পুলিশ।
খুনের প্রায় আট দিনের মাথায় তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছিল একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখা হয়েছিল। সেখান থেকেই পাওয়া গিয়েছিল সূত্র। পুলিশ সুত্রে খবর, দু’জন পুরুষ ৭ নভেম্বর রাত ১০ থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ওই মহিলার ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলেন। আবার রাত প্রায় ১১ নাগাদ তাঁরা ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে একজন ৮ তারিখ নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেনে চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। গোপন সূত্র মারফত পুলিশ খোঁজ পেয়েছিল চেন্নাইয়ে পালিয়ে যাওয়া ওই যুবকের। তার পর পুলিশের একটি দল চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়ে শুক্রবার তাঁকে আটক করে। পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই যুবক খুনের কথা স্বীকার করে নিলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই যুবকের নাম অরুণ পোর্টেল (৩৫)। তিনি পঞ্জাবে আধা সামরিক বাহিনীতে কর্মরত। বিবাহিত অরুণ বাগড়াকোটের বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রীর নাম বীথিকা পোর্টেল। এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বচসা লেগেই থাকত। জানা গিয়েছে, পারিবারিক বিবাদ এড়াতে অরুণ এই সম্পর্ক থেকে বার হতে চাইলেও কোনও প্রকারে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এর পরে দম্পতি সিদ্ধান্ত নেয় ওই মহিলাকে খুন করার। তবে খুনের বরাত দেওয়া হয় অন্য দুই ব্যক্তিকে। জানা গিয়েছে, মালবাজারের বাগড়াকোটের বাসিন্দা অভিষেক দর্জি (৩৫) ও রুস্তম বিশ্বকর্মা (১৯) এই খুনের বরাত পান এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে। যার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল।
জিজ্ঞাসাবাদের সময়েই উঠে আসে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের তথ্য। জানা গিয়েছে, ওই মহিলা একা থাকলেও সম্প্রতি তাঁর ফ্ল্যাটে এক অচেনা পুরুষের আনাগোনা ছিল। সে কথা জানিয়েছিলেন ওই ফ্ল্যাটের অন্য আবাসিকেরাই। দুর্গাপুজোর সময় একটানা বেশ কয়েক দিন সেই ব্যক্তি তরুণীর সঙ্গেই থেকেছিলেন। আবাসনের সবাইকে ওই মহিলা জানিয়েছিলেন, ওই ব্যাক্তির সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে তাঁর। তবে সম্পর্কের পরিণতি হয় মৃত্যু।
গত ৭ নভেম্বর রাতে ওই মহিলার ফ্ল্যাটে ঢুকে ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে তাঁকে খুন করা হয়। পরের দিনই চেন্নাই পাড়ি দেন অভিষেক। সেখানেরই একটি হোটেলে কাজ করতেন তিনি। চেন্নাইয়ে অভিষেককে গ্রেফতারের পর সেবক রোডের এক শপিং মল সংলগ্ন এলাকা থেকে রুস্তম ও বাগড়াকোট থেকে বীথিকাকে শনিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে অন্য অভিযুক্ত অরুণ পঞ্জাবে আছেন বলে জানা গিয়েছে।
শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসি (পূর্ব) রাকেশ সিংহ বলেন, ‘‘৭ নভেম্বর খুন হওয়ার পর ৮ তারিখে পরিবারের পক্ষ থেকে খুনের মামলা দায়ের করা হয়। এর পরে স্পেশ্যাল টিম গঠন করা হয়। ফিজিক্যাল ইন্টেলিজেন্স ও ডিজিটাল ইন্টেলিজেন্স তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। ফরেন্সিক দল আসে। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েই একাধিক ঘটনা সামনে আসে৷ সবার প্রথমে চেন্নাইয়ে দল পাঠিয়ে অভিষেককে গ্রেফতার করা হয়। তার পর সে জানায়, এই ঘটনার সঙ্গে বাকি আর কারা কারা জড়িত। কী জন্য তাকে খুনের বরাত দেওয়া হয়। রবিবার ট্রানজিট রিমান্ডে অভিষেককে নিয়ে আসা হবে। আমরা রিমান্ডে নিয়ে বাকি তদন্ত চালাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy