জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ।
পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রের মাঝ বরাবর ফরাক্কার উপর দিয়ে বয়ে গেছে যে গঙ্গা নদী, তার উত্তরভাগের প্রচলিত নাম উত্তরবঙ্গ। অনেকটাই পাহাড়-অরণ্যবেষ্টিত ঔপনিবেশিক ভূখণ্ড যেন। মালদহ থেকে কোচবিহার— এই অংশের, বিশেষ করে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি আর কোচবিহার জেলার মানুষের পক্ষে রাজধানী কলকাতা অনেকটাই দূর দেশ। যদি কোনও প্রশাসনিক বা আইনগত কাজে যেতে হয়, তা হলে তো দুর্ভোগের এক বিচিত্র ইতিহাস লেখা হয়ে যায়। এই লক্ষ্যেই এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ তৈরি হোক।
সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে ২০০৬ সালের ১৬ জুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার পর দীর্ঘ একযুগ ধরে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়নি।
এর অনিবার্য ফল ভোগ করতে হয়েছে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে। সেই দুর্ভোগের পরিসংখ্যান দিয়ে শেষ করা যাবে না।
যেমন, বছর কয়েক আগে কোচবিহারের একটি গ্রামের একজন ছাত্র স্কুল সার্ভিস কমিশনের লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। দেখা যায়, ছাত্রটি মাত্র দু’নম্বরের জন্যে পাশ করতে পারেনি। এই নিয়ে ওকে হাইকোর্টে মামলা করতে বলি। কিন্তু আর্থিক এবং দূরত্বের কারণে ছাত্রটি আর সেই পদক্ষেপ করতে পারেনি।
এমন অজস্র উদাহরণ আছে। সেই বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতেই এই অঞ্চলের মানুষের মনে সহসা টাইগার হিলে সূর্য ওঠার মতো আশার আলো জ্বলে ওঠে।
এই সার্কিট বেঞ্চের পরিকাঠামো তৈরির জন্য রাজ্য সরকার ৩০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব সার্কিট বেঞ্চের কাজের হাল হকিকত জানতে বহুবার খোঁজ নিয়ে গিয়েছেন। এই প্রস্তুতির মধ্যেই নতুন করে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক ডামাডোল।
সেটা কী? তড়িঘড়ি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সার্কিট বেঞ্চের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বিষয়ে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিল বলেই খবরে প্রকাশ। এর অব্যবহিত পরে হাইকোর্ট জানায়, সার্কিট বেঞ্চের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ৯ মার্চ। সেখানে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীও থাকবেন।
সম্প্রতি আমরা বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের মতভেদ দেখতে পেয়েছি। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের শাসক-বিরোধী টানাপড়েন চলছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেটা কাদা ছোড়াছুড়ির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের কাছে মোটেও সুখপ্রদ নয়। আমার একটাই আবেদন, দয়া করে সার্কিট বেঞ্চের ক্ষেত্রে এমনটা যেন না হয়।
মানুষের প্রয়োজনে রাজনীতি হোক, রাজনীতির প্রয়োজনে কিন্তু মানুষ নয় ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy