ছবি: সংগৃহীত
আটষট্টি সালের বন্যায় বইখাতা ভেসে গিয়েছিল। তখন বয়স চোদ্দ। এখন তিনি মধ্য ষাটে। একান্ন বছর পেরিয়েছে। সেই বন্যা পিছু ছাড়েনি। সে বার বইখাতা ভাসিয়েছিল, এ বার কেড়ে নিতে চলেছে নাগরিক অধিকার। অসমের নাগরিক পঞ্জিতে নাম নেই জলপাইগুড়ির রুবি সাহার। বিয়ের পর ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি অসমের রিহাবাড়িতে রয়েছেন। নাগরিক পঞ্জি শুরু হওয়ার পরে জলপাইগুড়ির একটি জমির দলিলের প্রতিলিপি জমা করেছেন। নাগরিক পঞ্জির দফতর থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে, সেই নথি আসল কি না, পশ্চিমবঙ্গের সরকার জানাতে পারেনি। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, আটষট্টি সালের বন্যায় বহু নথি নষ্ট হয়েছে। প্রায় ৯০০ জনের নথি মিলছে না। সেই তালিকায় রয়েছেন রুবি সাহাও।
ভাদ্রের শেষে অসমের আকাশেও শরত এসেছে। রিহাবাড়ি রেল স্টেশনের পাশেই বাড়ি রুবিদেবীর। জলপাইগুড়ির আশ্রমপাড়ায় জন্ম। সেই বাড়ির পাশ দিয়েও রেললাইন গিয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনি ফোনে বললেন, “ছোটবেলায় বাড়ির পাশে রেললাইনের ধারে কাশফুল দেখতে যেতাম, এখানেও রেললাইনের পাশে কাশ ফুল ফোটে। এনআরসি তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার পর মনে হচ্ছে আমার কী দেশ নেই? ছোটবেলার বাড়ি, কাশফুল সব মিথ্যে। মনে হচ্ছে দেশই সেগুলি কেড়ে নিতে চাইছে।”
নাগরিক পঞ্জি তৈরি করার সময় অসম সরকার সকলের থেকে জন্ম অথবা নাগরিক হওয়ার প্রমাণ রয়েছে এমন নথি চেয়েছিল। যে সব বাসিন্দারা ভিন্ রাজ্য থেকে অসমে গিয়ে থাকছেন, তাঁদের জন্ম বা নাগরিকত্বের নথি যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে পাঠিয়েছিল অসম সরকার। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, তাঁদের কাছে প্রায় সাত হাজার জনের নামের তালিকা এবং নথি যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। এঁরা সকলেই জলপাইগুড়িতে জন্মেছিলেন, পরে অসমে যান। জেলা প্রশাসন সেই নথি পরীক্ষা করে অসমকে জানাবেন।
সূত্রের খবর, তালিকায় নাম থাকা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার জনের নথি যাচাইয়ের কাজ হয়ে গিয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি বলেন, “তালিকায় নাম রয়েছে এমন প্রায় ন’শো জনের নথি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আটষট্টি সালের বন্যায় অনেক নথি নষ্ট হয়েছে।” এই নামগুলির ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। রুবিদেবীর দাদা মনা সাহাও জলপাইগুড়িতে সরকারি অফিসে চক্কর কাটছেন। তিনি বলেন, “আমাদের প্রশাসনকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, না হলে তো অনেকেই বিপদে পড়বেন।” এই একই সমস্যা যে আরও অনেকের, তা বোঝা যায় সরকারি দফতরে গেলেই।
ব্রহ্মপুত্রের পাড়ের জনপদে বসে ইদানীং ছেড়ে যাওয়া জলপাইগুড়ির কথা বেশি মনে পড়ছে রুবিদেবীর। বিয়ের পর উপাধি সেনগুপ্ত হয়েছে। শরতের দুপুরে ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে হাসির শব্দেও বিষণ্ণতা শোনা যায়। বলছেন, “ছোটবেলার বাড়ি ছেড়েছি, পদবি ছেড়েছি। এ বার সরকারি নিয়ম বোধহয় দেশছাড়া করবে। যাব কোথায়?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy