Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

আশঙ্কা সত্যি করে গণপিটুনি বৃদ্ধকে

রাত গভীর হাতেই কালো কাপড় পরে বাড়িতে ঢুকে ঘরে থাকা শিশুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে কেউ—গত কয়েক দিন ধরে আলিপুরদুয়ারের পাটকাপাড়ায় চলতে থাকা এই গুজবই মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল পুলিশ প্রশাসনের কাছে৷

আক্রান্তকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র

আক্রান্তকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০৪:০০
Share: Save:

আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি প্রমাণ হল!

ছেলেধরা সন্দেহে রবিবার সকালে এক বৃদ্ধকে ধরে গণপিটুনি দেওয়ার অভিযোগ উঠল আলিপুরদুয়ারের পাটকাপাড়ায়। উন্মত্ত জনতার হাত থেকে ওই বৃদ্ধকে বাঁচাতে গিয়ে মার খেতে হল পুলিশকর্মীদেরও। পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুরের পাশাপাশি জনতার সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় এক পুলিশকর্মীর সার্ভিস রিভলভার খোয়া গিয়েছে বলেও অভিযোগ। গোটা ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জনতার হাতে বেধড়ক মার খাওয়া বৃদ্ধকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে পুলিশ।

রাত গভীর হাতেই কালো কাপড় পরে বাড়িতে ঢুকে ঘরে থাকা শিশুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে কেউ—গত কয়েক দিন ধরে আলিপুরদুয়ারের পাটকাপাড়ায় চলতে থাকা এই গুজবই মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল পুলিশ প্রশাসনের কাছে৷ কারণ গত বছর ছেলেধরা নিয়ে এমন গুজবের জন্যই উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। তাই পাটকাপাড়ার ঘটনার জেরেও যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করতে সতর্ক হয়েছিল পুলিশ৷ কিন্তু তারপরও রবিবার সকালে ছেলেধরা সন্দেহে এক বৃদ্ধকে ধরে গণপিটুনির পরে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও কোনও কোনও মহলে প্রশ্ন উঠছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন উন্মত্ত জনতার হাতে মার খেয়ে গুরুতর জখম হওয়া বৃদ্ধর বয়স ষাটের ঘরে। বাড়ি খড়গপুরে। কবিরাজি নানা ওষুধ বিক্রি করে তিনি। মাঝেমধ্যেই কোচবিহারের ডোডেয়ারহাট এলাকায় এসে থাকতেন। সেখান থেকে বিভিন্ন হাটে ওষুধ বিক্রি করতে যেতেন। রবিবার সকালে পাটকাপড়ার রাখালমাঠ এলাকার একটি হাটে যাচ্ছিলেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, দক্ষিণ পাটকাপাড়ার শিরুবাড়ি হয়ে পায়ে হেঁটে ওই বাজারে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা তাঁকে আটক করেন। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ভিলেজ পুলিশ ও এক সিভিক ভলান্টিয়াররা সেখানে ছুটে যান৷ স্থানীয় বাসিন্দারা বৃদ্ধকে রাস্তার ধারে আটকে রাখেন৷ খবর পয়ে আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয়৷ কিন্তু ততক্ষণে ওই বৃদ্ধিকে ঘিরে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় জমে যায়৷ পুলিশ বৃদ্ধকে ধরে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করতেই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷ বৃদ্ধকে ধরে শুরু হয় গণপিটুনি৷ উত্তেজিত জনতাকে সরিয়ে পুলিশ বৃদ্ধকে গাড়ির দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া শুরু করলে জনতার সঙ্গে পুলিশের কার্যত ধস্তাধস্তি বেধে যায়৷ সেই সময় কয়েকজন পুলিশ কর্মীকেও মারধর করার পাশাপাশি পুলিশের গাড়ির কাচ ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে৷ আরও অভিযোগ, ধস্তাধস্তির সময় এক পুলিশ কর্মীর সার্ভিস রিভলভার খোয়া যায়৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই বৃদ্ধকে কোনওমতে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে আলিপুরদুয়ার থেকে আরও বিশাল সংখ্যক পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়৷

আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “একটা মামলা রুজু করে ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে৷ পুলিশ এই ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে৷” পুলিশের এক কর্তা জানান, খোয়া যাওয়া রিভলভারটির খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে৷

স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি অংশের অভিযোগ, রাতের মতো দিনেও টহলের পাশাপাশি এলাকায় পুলিশ মোতায়েন থাকলে এই ঘটনা এড়ানো যেত৷ যদিও পুলিশের দাবি, গত কয়েকদিন থেকে দিনেও এলাকায় পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি গুজব বন্ধে মাইকিং-ও চলছিল৷ আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের বেডে শুয়ে বৃদ্ধ বলেন, “হাটে হাটে ঘুরে সামান্য ব্যবসা করে সংসার চালাই৷ সেজন্য এ ভাবে মার খেতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি৷” তবে এই ঘটনার পর এলাকায় নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুলিশ কর্তারা৷

অন্য বিষয়গুলি:

Alipurduar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy