Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Mamata at Malda

ভাঙন রোধে নানা পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, ভাঙনের প্রেক্ষিতে গঙ্গা পাড়ের পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত তিনি সতর্কতা বজায় রেখে চলতে চান।

Mamata Banerjee giving speech at malda

মালদহের দুর্গাকিঙ্কর সদনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: স্বরূপ সাহা

জয়ন্ত সেন
মালদহ শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ ০৮:৪৯
Share: Save:

নতুন পথে গঙ্গা ভাঙন ঠেকানোর রূপরেখা বাতলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মালদহের দুর্গাকিঙ্কর সদনে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি এ জন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষেও সওয়াল করেন। মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলার গঙ্গা ভাঙন মোকাবিলায় তিনি গঙ্গাপাড়ে ‘ভেটিভার’ ঘাস ও ‘ম্যানগ্রোভ’ জাতীয় গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন। এ জন্য সেচ দফতর ও বন দফতরের মধ্যে সমন্বয় এনে কাজের কথা বলেন। এ সব কাজের জন্য মুখ্যসচিবকে প্রধান করে একটি কমিটিও গড়ে দেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, ভাঙনের প্রেক্ষিতে গঙ্গা পাড়ের পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত তিনি সতর্কতা বজায় রেখে চলতে চান। এ জন্য গঙ্গা তীরবর্তী ওই এলাকার মধ্যে নতুন করে ঘরবাড়ি যেন না হয় সে দিকটি দেখতে বলা হয় এবং সে অংশে যাঁদের ঘরবাড়ি রয়েছে, তাঁদের বুঝিয়ে পুনর্বাসন দেওয়ার কথা বলেন। মালদহ জেলার গঙ্গা ভাঙন মোকাবিলায় এ দিন কোনও বরাদ্দের কথা ঘোষণা না করলেও, তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার সমশেরগঞ্জের ভাঙন ঠেকাতে চলতি বছরে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা ঘোষণা করেন। নজরদারি কমিটি গড়ে, তবে সেই কাজে তদারকি চালানোর নির্দেশ দেন তিনি।

তবে গঙ্গা ভাঙন রুখতে ‘ভেটিভার’ ঘাস বা ‘ম্যানগ্রোভ’ কতটা কাজ করবে তা নিয়ে সন্দিহান সেচ দফতরের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, মালদহ ও মুর্শিদাবাদে গঙ্গা ভাঙন হয় মাটির নীচে, একেবারে গভীরে। ‘ভেটিভার’ ঘাসের শিকড় সে অবধি পৌঁছবে না। এ ছাড়া, ‘ম্যানগ্রোভ’ লবণাক্ত জল সংলগ্ন এলাকায় হয়। সে ক্ষেত্রে গঙ্গার পাড়ে সে গাছ আদৌ টিকবে কি না, সেটাও প্রশ্নের। সেচ দফতরের উত্তর ১ সুপারিন্টেন্ডেন্ট উত্তমকুমার পাল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে বিষয়টি দেখতে বলেছেন। ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ সে সব নিশ্চয়ই দেখবেন।”

মালদহ জেলায় রতুয়ার জঞ্জালিটোলা থেকে ফরাক্কা ব্যারাজ হয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত পারলালপুর পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার জুড়ে গঙ্গা রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই ভাঙন কবলিত এলাকা। প্রতি বছরই ভাঙনে অসংখ্য পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে কেউ সরকারি জায়গায় রাস্তার পাশে বা কেউ অন্যের জমিতে অস্থায়ী আস্তানা করে বসবাস করছেন। কিন্তু অভিযোগ, ওই ভাঙন দুর্গতদের সকলের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এখনও করতে পারেনি প্রশাসন।

এ দিন মালদহের প্রশাসনিক বৈঠকে সেই সমস্যার কথা মেনেও নেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এ বারে আমি যে মালদহ ও মুর্শিদাবাদে এসেছি, তার কারণ গঙ্গা ভাঙন বিষয়টি ‘সিরিয়াস’ ব্যাপার হয়ে গিয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, গঙ্গা ভাঙন কেন্দ্রের বিষয়। কিন্তু কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। কেন্দ্র যখন ফরাক্কা-চুক্তি করেছিল, তখন রাজ্য সরকারকে ৭০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এখনও সেই টাকা পাননি বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। পাশাপাশি, তিনি বলেন, “কেন্দ্র এক পয়সা না দিলেও আমরা গত পাঁচ বছরে গঙ্গা ভাঙন ঠেকাতে এক হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। কিন্তু সে টাকা জলে গিয়েছে। কেন্দ্র গঙ্গা ভাঙন অ্যাকশন প্ল্যান যাতে করে, সে জন্য মুখ্যসচিবকে বলব কেন্দ্রের নীতি আয়োগের সঙ্গে কথা বলতে।”

বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “গঙ্গার স্রোত আটকাতে পারি না, গতিপথ ঘোরাতে পারি না। এর জন্য আমার ক্ষমতাও নেই, টাকাও নেই। লক্ষ্মীর ভান্ডার, ফ্রি রেশন, স্কলারশিপ বন্ধ করে শুধু এ ক্ষেত্রে টাকা দেওয়া যাবে না। এর জন্য ১০ বছরের একটা স্কিম নিতে হবে।”

সেচ দফতরের প্রধান সচিবকে ডেকে তিনি সভায় বলেন, “আমার মনে হয় নদী থেকে পাঁচ-ছ’ কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি করার অনুমতি দিও না। ওই অংশে যাঁরা আছেন, তাঁদের পাট্টা দেওয়া যেতে পারে। চার-পাঁচ তলা বাড়ি করে পুনর্বাসন দিতে পারি। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, এডিবি, ইউনেস্কো-র সঙ্গে কথা বলো। যদি তাঁরা মানবিক কাজে এগিয়ে আসেন। যাঁরা নদীর পাড়ে বসবাস করেন, বুঝিয়ে সরাতে হবে।”

পাশাপাশি তাঁর পরামর্শ, “আগের বছর বন দফতর থেকে সুন্দরবনে ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগিয়েছি। দিঘাতেও লাগিয়েছি। এ বারে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়াকে লক্ষ্য কর। ভেটিভার ঘাস, ম্যানগ্রোভ লাগাও। গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধে নতুন প্রযুক্তি দেখতে হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee River Erosion Malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy