Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

অসুবিধা হলেই আমায় বলবি

কলেজ ক্যান্টিনে আড্ডা দিয়েছি। হইচই করেছে মাজিদ, যেমন ও সব সময়ে করে থাকে। আসলে ও একটু অন্যরকম ছিল। সব সময় হাসিখুশি। মজার মজার কথা বলত আড্ডায়। মাতিয়ে রাখত। এমনও হয়েছে, ওর কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি গিয়েছি।

দিবাকর ভট্টাচার্য।

দিবাকর ভট্টাচার্য।

দিবাকর ভট্টাচার্য
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৮ ০৬:০৭
Share: Save:

কাল রাত ঘুমোতে পারিনি। বারবার মাজিদের মুখ ভেসে উঠছিল। কান্না পাচ্ছিল খুব। চোখের সামনে সকাল হয়ে গেল। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, মাজিদের মৃত্যু হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি না মাজিদের মৃত্যু হয়েছে। মাজিদের মৃত্যু হতে পারে না।

আমাদের বন্ধুত্ব খুব বেশি দিনের নয়। আমি প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করি। মাজিদ দ্বিতীয় বর্ষে পড়ত। এই অল্প দিনেই মাজিদ আর আমার মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। মনে আছে, প্রথম যে দিন কলেজে যাই, মাজিদ পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। বলেছিল, “দিবাকর, কোনও অসুবিধে হলে আমায় বলবি।” তার পর থেকে সব সময় পাশে পেয়েছি ওকে। যে কোনও ছোট সমস্যাতেও পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

ঘটনার দিনও একবেলা ওর সঙ্গে কাটিয়েছি আমরা। কলেজ ক্যান্টিনে আড্ডা দিয়েছি। হইচই করেছে মাজিদ, যেমন ও সব সময়ে করে থাকে। আসলে ও একটু অন্যরকম ছিল। সব সময় হাসিখুশি। মজার মজার কথা বলত আড্ডায়। মাতিয়ে রাখত। এমনও হয়েছে, ওর কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি গিয়েছি।

এরই সঙ্গে মাজিদের মধ্যে একটি প্রতিবাদী চরিত্র ছিল। যে কোনও অন্যায়ের প্রতিবাদ করত ও। ওই দিনও ভর্তির সময়ে তোলাবাজির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল মাজিদ। কয়েক জন বহিরাগত কলেজে ঢুকে নিয়ম ভেঙে ছাত্র ভর্তি করানোর চেষ্টা করছিল। তা নিয়ে প্রতিবাদ করে ও। এর পরেই কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয় মাজিদ। যন্ত্রণায় ছটফট করছিল আমার বন্ধু।

কত স্বপ্ন ছিল মাজিদের। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবে। যদি চাকরি পেতে দেরি হয়, তা হলে ব্যবসার চেষ্টা করবে। বাবার পাশে দাঁড়ানোই ছিল ওর প্রধান লক্ষ্য। মাঝে মাঝেই বলত সে কথা। কিছুই আর হল না। বাবা-মায়ের বুক খালি করে চলে গেল মাজিদ। আমাদের মধ্যেও রেখে গেল একটা শূন্যস্থান।

ঘটনার আগে আমার কাছে একটা প্রজেক্ট রাখতে দিয়েছিল মাজিদ। পরিবেশবিদ্যা তার একটি বিষয় ছিল। সেই পরিবেশবিদ্যার উপরেই প্রজেক্ট তৈরি করেছিল সে। এক দিন পরে সেটি কলেজে জমা দেবে বলে আমাকে জানিয়েছিল। এখনও তা আমার কাছে রয়েছে। গত রাতে সেই প্রজেক্ট ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখেছি বারবার। মাজিদ আর কোনও দিন সেটা নিতে আসবে না।

(কোচবিহার কলেজের ছাত্র ও মাজিদের সহপাঠী)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE