শোক: মাজিদের দেহ আসার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার কোচবিহারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
সকাল থেকেই থমথমে ছিল গোটা এলাকা। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাজিদ আনসারির দেহ ফিরতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। কেন এখনও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়নি, সে প্রশ্নে পুলিশকে ঘিরে ধরে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলে। একই সঙ্গে অভিযোগ করা হয়, তৃণমূলের কোচবিহার জেলা কোর কমিটির নেতা মুন্না খানের মদত রয়েছে আততায়ীদের পিছনে। পরে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ মুন্না খানের বাড়িতেও হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তাঁর বাড়ির পাশেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বাড়ি। সেই বাড়ির সামনেও ঢিল পড়ে বলে অভিযোগ। বিকেলে এসপি-র বদলির দাবিতে তাঁর অফিসের সামনে অবরোধ, এমনকী বিক্ষোভও হয়।
গত ১৩ জুলাই বিকেল বেলা গুলিবিদ্ধ হন মাজিদ। চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় শিলিগুড়ির কাছে মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোমে। তার পর থেকে দু’সপ্তাহ ধরে আশঙ্কাজনক ছিলেন তিনি। কিন্তু কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ একবারও তাঁর খোঁজ নিতে যাননি, না হাসপাতালে, না বাড়িতে— বুধবার রাত থেকেই এই ক্ষোভ মাজিদের পরিবারের গলায়। বৃহস্পতিবার মাজিদের দাবা মুস্তাফি আনসারি বলেন, “আমার বাড়ি থেকে দু’শো মিটার দূরে মন্ত্রী থাকেন। তিনি এক দিনও আমাদের খোঁজ নিলেন না।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাব। আশা করি তিনি ঠিক বিচার করবেন।”
অভিযুক্তরা কেউ এখনও ধরা পড়েনি। তাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুস্তাফি বলেন, “একসময় ওই সবাইকে একসঙ্গে আড্ডা দিতে দেখেছি। তাদের মধ্যেই কয়েক জন আমার ছেলেকে রাস্তায় আটকে গুলি করল।” তাঁর কাকা তসলিম আনসারি বলেন, “ওই ঘটনার পিছনে অনেক বড় বড় মাথা রয়েছে। তাই পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে।’’
বিক্ষোভকারীদের কয়েক জনও একই প্রশ্ন তোলেন। এক সময়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ঘটনাস্থলে পুলিশবাহিনী আসে। তাঁদের সঙ্গেও বিক্ষোভকারীদের বচসা শুরু হয়। তখন মুস্তাফি বিক্ষোভকারীদের ফিরে যাওয়ার আবেদন করেন। এর পরে বিক্ষোভ কমে আসে।
রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “মাজিদের মৃত্যু দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। এমন হওয়া কখনও উচিত নয়। আমি বিধানসভায় আছি। অন্য ঘটনার কথা জানি না।” কেন তিনি মাজিদের বাড়িতে কিংবা নার্সিংহোমে যাননি? মন্ত্রীর দাবি, তিনি নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব মাজিদের চিকিৎসার তদারকি করেছেন।’’ মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ অনুগামী বলে পরিচিত মুন্না খানের দাবি, “আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। দল, দলের জেলা সভাপতি ও আমাকে হেয় করার চেষ্টা হচ্ছে। যদি ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও যোগ থাকে, তা হলে পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করুক।” তিনি দাবি করেন, এ দিন তাঁর বাড়ি লক্ষ করে ঢিল ছোড়া হলে তাঁর দাদা সেলিম খান জখম হয়েছেন। তাঁর আরও অভিযোগ, বাড়ি লক্ষ করে দু’রাউন্ড গুলিও চলেছে। পুলিশ অবশ্য সে কথা মানতে চায়নি।
তৃণমূলের একটি অংশই কিন্তু মনে করছে, এ দিন পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত ছিল। তাঁদের বক্তব্য, একে তো যুবর সঙ্গে মূল তৃণমূলের দ্বন্দ্ব চলছে জেলায়। তার উপরে টিএমসিপি-র সঙ্গেও এই ধরনের গোলমালে জড়িয়ে পড়াটা ঠিক নয়। এই সমস্যা আগেই সামাল দেওয়া যেত বলে তৃণমূলের ওই অংশের ধারণা।
মুন্না এ দিন যে যুব তৃণমূল নেতার দিকে পাল্টা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন, সেই অভিজিৎ দে ভৌমিকের বক্তব্য, “ছাত্র রাজনীতির এমন পরিণতি হবে জানলে নিজেও রাজনীতি করতাম না। অন্যদেরও আসতে দিতাম না।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে। খুব দ্রুত তাঁদের ধরা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy