বুকভাঙা: ছেলের কথা বলতে গিয়ে চোখে জল মাজিদের মা সালেয়া বেগমের। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
বাড়ি জুড়ে এখন এক বিষণ্ণতার ছায়া। চার বছর পরেও মাজিদের মা সালেয়া বেগম এক নিমেষের জন্য ভুলতে পারেননি ছেলের মুখ। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ছেলেকে যারা প্রকাশ্য দিনের আলোয় গুলি করে খুন করল তারা কি শাস্তি পাবে না?” পাশে দাঁড়ানো মাজিদের নয় মাসের বড় ভাই সাজিদের দিকে তাকিয়ে বলেন, “এখন তো আমার ভয় হয়, না জানি এই ছেলেটার এখন কোনও বিপদ হয়।” মাজিদের বাবা মুস্তাকিন আনসারি ছেলের মৃত্যুশোকে অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। তবুও গলায় জোর এনে বলেন, “আমরা ছাড়ব না, পিছিয়ে যাব না। এখানেই লড়াই শেষ না। উচ্চ আদালতে যাব। ছেলের হত্যাকারীদের শাস্তি দিতেই হবে।” ততক্ষণে বাড়ির সামনে ভিড় করেছেন প্রতিবেশী-আত্মীয়রা। দাবি করছেন, “বিচার চাই।”
বুধবার কোচবিহার জেলা ও দায়রা আদালত মাজিদ আনসারি হত্যাকান্ডে সাত জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ধৃতদের বিরুদ্ধে তেমন কিছু তথ্য পাওয়া যায়নি। বিচারক ২৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। নথিপত্র খতিয়ে দেখার পর ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মাজিদের বাবা বিচার ব্যবস্থার উপরে আস্থা রেখেই বলেন, “বিচার ব্যবস্থার উপর আমাদের ভরসা আছে। কিন্তু আমার ছোট ছেলেকে তো আমার বড় ছেলের সামনে গুলি করে খুন করা হয়েছে। তাই আমরা উচ্চ আদাতলে গিয়ে বিচার চাইব।” সাজিদ চুপ করে থাকে। দাঁতে দাঁত চেপে বাড়ির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাঁর কী বক্তব্য জিজ্ঞেস করলে বলে ওঠে, “ভাইয়ের অভাব প্রতি মুহূর্তে টের পাই। আমরা তো একসঙ্গেই থাকতাম সব সময়। ওকে যারা খুন করল তাদের শাস্তি না হলে তো আমি শান্তি পাব না।”
২০১৮-র ১৩ জুলাই কোচবিহার শহরের স্টেশন মোড় লাগোয়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন মাজিদ। সেখান থেকে বাড়ির দূরত্ব বড়জোর দেড় কিলোমিটার। কোচবিহার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল মাজিদ। কলেজ থেকেই দাদা সাজিদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। অভিযোগ, কয়েক জন দুষ্কৃতী রাস্তা আটকে মাজিদকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ২৫ জুলাই শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে মৃত্যু হয় মাজিদের। মাজিদ তৃণমূলের কোচবিহার কলেজ ইউনিটের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁকে খুন করার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে উঠেছিল, তাঁরাও টিএমসিপি কর্মী-সমর্থক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ২৬ জুলাই মাজিদের দেহ কোচবিহারে আনা হলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জেলা। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরাও আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু সে সব তো অতীত। কান্না-ধরা গলায় সালেয়া বলেন, “এখন তো কেউ খোঁজ নেয় না। ছেলেটাকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নেতারা, তারও কিছু হয়নি’’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy