Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫

ভোটেই মৃত্যু বাবার, ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যেতে চায় পড়ুয়া

সুফিয়ার স্বামী আতাবুর ছিলেন ক্ষুদ্র চাষি। কষ্ট করে হলেও ছেলেমেয়েদের পড়াতেন।

বাপি মজুমদার
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ১০:০৮
Share: Save:

গোয়ালে তিনটে গরু ছিল, দু’টো খাসি। ঘরে কয়েকটা কাঁসা-পিতলের বাসন। খাবার জোগাড় করতে সব বেচতে হয়েছে। উনুনে হাঁড়ি চড়ে না রোজ! ক্লাস টেন-এর ছেলেটা আর স্কুলে যাচ্ছে না। মায়ের কষ্ট দেখে ঠিক করেছে, ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাবে। এটুকু বলতেই চোখ দু’টো আবছা হয়ে যায় সুফিয়া বেওয়ার। কাপড়ের খুঁটে চোখ মুছে সুফিয়া বলেন, ‘‘ছেলেটা ছোট। দু’টো মেয়ে বাড়িতে। ওদেরও পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার পথে। এই ভোটই তো জীবনটাকে তছনছ করে দিল। ভোটের জন্য স্বামী গেল। এখন খেতে পাই না। কিন্তু কেউ খোঁজও নেয় না। ভোট দিয়ে কী হবে। খেতে দেবে?’’

সুফিয়ার পরিবারের মতো একই রকম ছবি মালদহের চাঁচলের খানপুর ঘাটের আরও তিনটি পরিবারের। পঞ্চায়েত ভোটের গণনার দিন ট্রাকে চেপে গণনাকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন গ্রামের প্রায় চল্লিশ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। লস্করপুরে জাতীয় সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি উল্টে যায়। মারা যান তিন জন। আহত হন অনেকেই। মৃতদের মধ্যে এক জন সুফিয়ার স্বামী বছর পঁয়তাল্লিশের আতাবুর রহমান। অন্য দু’জনের এক জন প্রৌঢ় মহম্মদ এজদানি ও অন্য জন বছর আঠারোর লতিফুর রহমান। তাই ভোট দোরগোড়ায় এলেও কোনও উত্তাপ নেই ওই গ্রামে। বরং ভোটের বাদ্যি আবার গত পঞ্চায়েত ভোটের বিষাদের স্মৃতিটাকেই ফের উস্কে দিয়েছে।

ওই ঘটনার পরে সুফিয়ার পাশাপাশি বাকি দুই মৃতের বাড়িতেও সহানুভূতি আর আশ্বাসের ঝড় আছড়ে পড়েছিল। শুধু তৃণমূল নয়, সব দলের তরফেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল পাশে থাকার। সুফিয়ার কলেজে পড়া মেয়েকে একটা কাজের বন্দোবস্ত করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস মিলেছিল। সুফিয়ার বাড়ি থেকে ঢিল ছুড়লে তা লাগোয়া মহানন্দায় গিয়ে পড়ে। সময় গড়াতেই সব আশ্বাসও মহানন্দার জলে ধুয়েমুছে গিয়েছে। কারও কোনও সাহায্যই মেলেনি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সুফিয়ার স্বামী আতাবুর ছিলেন ক্ষুদ্র চাষি। কষ্ট করে হলেও ছেলেমেয়েদের পড়াতেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বাকি দুই মেয়ের মধ্যে বড় বুলবুলি খাতুন সামসি কলেজে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছোট আফসারি মাধ্যমিক দিয়েছে। আর ছেলে আলি হোসেন দশম শ্রেণির ছাত্র। বুলবুলি জানান, ঘরে যা ছিল সব বিক্রি করে এত দিন কাটল। পড়াশোনাটাও আর হয়তো হবে না। ভাইটা স্কুলে যাওয়া ছেড়েছে। আলি বলে, ‘‘মা, দিদিদের কষ্ট আর চোখে দেখতে পারছি না। টাকা জোগাড় হলেই ভিন্ রাজ্যে যাব।’’

একই অবস্থা ফতেমা বেওয়ার। গত পঞ্চায়েত ভোটের পর বিবি থেকে বেওয়া হয়ে যাওয়া ফতেমারও শোক এখনও কাটেনি। আর লতিফুরের বাবা হায়াত আলি দিনমজুর। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পরে মা লতেফা বিবি আজও স্বাভাবিক হতে পারেননি। লতেফা বলেন, ‘‘সেই যে ছেলেটা আনন্দ করতে করতে বাড়ি থেকে বার হল, আর ফিরল না। কোথায় যে হারিয়ে গেল।’’ চৈত্রের রোদে পাশের মহানন্দার জল প্রায় শুকিয়েছে। কিন্তু সুফিয়া, লতেফাদের চোখের জল আজও ঝরছেই।

প্রতিবেশী শেখ সিদ্দিক, রহিমা বিবিরা বলেন, ‘‘এখনও এখানে কারও ভোট চাইতে ঢোকার সাহস হয়নি। ঢুকবে যে, সেই মুখ আছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy