কোচবিহারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
উত্তরবঙ্গে ফের একই দিনে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সভায় দু’জনেই একে অপরকে আক্রমণ করলেন। কে কী কাজ করছেন, তার তালিকা তুলেই যেন শুরু হল উত্তর-প্রত্যুত্তর।
রবিবার সকালে কোচবিহারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অভিযোগ করেন, “কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের এক কোটির বেশি দরিদ্র পরিবারের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। এ রাজ্যের ৭০ হাজার লোক আয়ুষ্মান প্রকল্পে যুক্ত হতে চেয়েছেন। কিন্তু স্পিডব্রেকার দিদি তাতেও ব্রেক দিয়েছেন।” মোদীর দাবি, “কোচবিহার সহ বাংলার ৭০ লাখের বেশি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি আর্থিক সাহায্যের প্রকল্প নিয়েছিল। দিদি তাতেও ব্রেক দিয়েছেন।” তার পরেই ফালাকাটায় উত্তরবঙ্গের সার্বিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “নতুন জেলার স্বীকৃতি থেকে শুরু করে, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবই হয়েছে আলিপুরদুয়ারে৷ রাজবংশী অ্যাকাডেমি, কামতাপুরি ভাষা অ্যাকাডেমি হয়েছে। কোচবিহারে পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ও করা হয়েছে।” এর পাশাপাশি তাঁর আমলে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, যুবশ্রী, শিক্ষাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী সহ নানা প্রকল্পের উল্লেখ করে তাতে ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ যে কতটা উপকার পাচ্ছেন তা বলেন তিনি।
এ বারের নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে জিততে চা বলয়ের দিকে তাকিয়ে যুযুধান দুই পক্ষই। গত বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে চা বলয়ের ভোটে বেশ খানিকটা থাবা বসিয়েছিল বিজেপি। মোদী এ দিন মন্তব্য করেন, রাজ্য সরকারের জন্য সেখানে পুরো উন্নয়ন করা যায়নি। এই অবস্থায় রবিবার আলিপুরদুয়ার জেলায় দ্বিতীয় দিনে নির্বাচনী প্রচারে এসে শনিবারের মতোই চা বাগান প্রসঙ্গ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন প্রথমে ময়নাগুড়িতে জনসভা করেন মমতা৷ সেখান থেকে যান ফালাকাটার জনসভায়। দু’টি বাগানেই চা শ্রমিকদের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, বন্ধ বাগান খোলা থেকে শুরু করে চা বাগানের উন্নতিতে কেন্দ্রের মোদী সরকার কিছুই করেনি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শুধু মিথ্যা কথা বলে ভোট চাইছেন। আগে চায়ের প্রতি দরদ দেখিয়ে নিজেকে চা ওয়ালা বলতেন। আর এখন সেই চা ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী চৌকিদার হয়েছেন’’ বলেও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ থাকার পরে এদিনই নাগরাকাটার ক্যারন চা বাগান খুলেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেও সাতটি চা বাগান খোলার কথা বলে মাদারিহাটে ভোট চেয়েছিলেন মোদী। ভোট পেতেই চলে গিয়েছেন। আর বন্ধ বাগান খুলেছে রাজ্য সরকার।” মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “বন্ধ বাগানে আমরাই শ্রমিকদের প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিনা পয়সায় খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জল দিচ্ছি৷ প্রধানমন্ত্রী কিছু দেন না।”
জলপাইগুড়িতে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ তৈরির কৃতিত্ব নিয়ে এ দিনও দুই পক্ষে তরজা হয়েছে। মোদীর দাবি, “জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে আপনারা নতুন সুবিধে পাচ্ছেন। বিজেপি সরকার এখানকার উন্নয়নে অনেক কিছু করতে চেয়েছে। কিন্তু যত দিন গুন্ডাগিরি থাকবে, চোরেদের আতঙ্ক থাকবে, অনুপ্রেবেশকারীদের দৌরাত্ম্য থাকবে আর তাদের উপর দিদির আশীর্বাদ থাকবে, তত দিন এখানে পর্যটনেরও বিকাশ হবে না, বিনিয়োগও হবে না।” মমতার বক্তব্য, ‘‘সার্কিট বেঞ্চের জন্য জমি বা টাকা কিছুই কেন্দ্র দেয়নি। এখন কৃতিত্ব দাবি করছে।’’
প্রধানমন্ত্রী কোচবিহারে দাবি করেছেন, “কোচবিহার সহ এখানকার পুরো এলাকা সম্ভবনাময়। পর্যটনের জন্য ব্যাপক সুযোগ হতে পারে। কেন্দ্র যোগাযোগ চাঙা করতে অনেক চেষ্টা করেছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘চ্যাংরাবান্ধা থেকে নিউ কোচবিহার রেললাইন হোক বা ময়নাগুড়ি থেকে যোগীঘোপা লাইন হোক, রেলের অনেক প্রকল্প হয়েছে বা সম্পন্ন হতে চলেছে। মনে রাখবেন দিদি কিন্তু রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন আপনাদের জন্য কিছু করেননি।”
তৃণমূলের পাল্টা দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময়েই যোগীঘোপা-সহ নানা প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “মোদীর বিনাশ কালে বুদ্ধিনাশ হয়েছে। রাজ্য সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই উন্নয়নের জোয়ার বইছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy