ফাইল চিত্র।
তিনি এখন খুবই ব্যস্ত। মাঝেমধ্যেই তাঁকে ছুটতে হচ্ছে সীমান্তপেরিয়ে, মায়ানমারের জঙ্গলে। বাবা-র সঙ্গে তিনিই যে এখন একমাত্র যোগসূত্র!
বাবা, জীবন সিংহ। ব্যস্ত মানুষটি দেবরাজ দিবাকর সিংহ। তিনি ঘোষিত ভাবে জীবনের ধর্মপুত্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘ইচ্ছেতে’ অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা কেএলও প্রধান জীবন সিংহের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছেন। সেই কাজে দিবাকর হলেনমধ্যস্থ। তিনি এক দিকে যোগাযোগ করছেন অসমের প্রশাসনিক প্রধানের সঙ্গে। অন্য দিকে, মায়ানমার জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা জীবনের সঙ্গেও এই মুহূর্তে সব থেকে বিশ্বাসযোগ্য যোগসূত্রটি তিনি। এতটাই যে, বাবার হয়ে প্রাথমিক কথাবার্তাও তিনিই শুরু করেছেন।
সেই দিবাকর জানিয়ে দেন, এখন পর্যন্ত জীবনের সঙ্গে সংবাদমাধ্যম তো দূরের কথা, প্রশাসনিকস্তরেও খুব বেশি কেউ যোগাযোগকরতে পারেননি। কারণ, জীবন খুব সাবধানে পা ফেলতে চাইছেন। গোয়েন্দা সূত্রে বারবার বলা হচ্ছে, জীবনের হাতে এখন রসদ খুবই কম। তা সে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রই হোকবা টাকাপয়সা। লোকজনও কমে গিয়েছে যথেষ্ট। তার একটা বড় কারণ অর্থের অভাব।
জীবনের এখনকার হাল সম্পর্কে যাঁরা কিছুটা অবহিত, তাঁরা বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে বলছেন, এ যেন ডিম আগে না মুরগি, সেই প্রশ্নে এসে আটকে আছে সব কিছু। সেটা কেমন? তাঁদের কথায়, অর্থ নেই বলে জীবনলোকজন জোগাড় করতে পারছেন না। কিনতে পারছেন না অস্ত্রও। আবার লোকজন না থাকায় অপহরণ, খুনজখম, ডাকাতি করে টাকা তোলাও সম্ভব হচ্ছে না। এর জন্য তাই ভিডিয়োয় কখনও আলাদা কোচবিহার রাজ্যের দাবি তুলে, কখনও উত্তরবঙ্গকে ভাগের কথা বলে তিনি নতুন করে জিগির তুলতে চাইছেন। যাতে অন্তত কিছু যুবককে দলে আনা সম্ভব হয়।
এর মধ্যেই দেখা গিয়েছে, জীবন তাঁর লক্ষ্যে কিছুটা হলেও সফল। মায়ানমারের জঙ্গলে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুবকেরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে এমন কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই এলাকায় সক্রিয় অন্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন তিনি। আলফার সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক তো ছিলই। এ বারে এনএসসিএন (কে)-এর সঙ্গে জীবনের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে থাকাকয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গেও নাকি যোগাযোগ করেছেন কেএলও কর্তারা। উদ্দেশ্য, যদি শান্তি আলোচনার আগে আত্মসমর্পণ করতে হয়, তবে তার আগে অস্ত্রভাণ্ডারের বেশিরভাগটাই তাদের কাছে রেখে যাওয়া।
অর্থাৎ, অতীতকে পুরো ধ্বংস করে আলোচনায় যেতে চাইছেন না জীবন। বরং আলোচনায় যাতে তাঁর জোর ও গুরুত্ব যথেষ্ট থাকে, সে জন্য আটঘাট বাঁধতে শুরু করেছেন।
গোটা অপারেশনে ধুরন্ধর মাথাটি অবশ্যই জীবনের নিজের। এ সব কথা খুব বেশি জানেন না তাঁর ধর্মপুত্র দিবাকরও। প্রাচীন অরণ্য প্রবাদের মতো একটা কথা এখানে চালু রয়েছে: নিজের ডান আস্তিনের সব তাস এমনকি নিজের বাঁ আস্তিনকেও দেখিও না।
জীবন সেই পথেই এগোচ্ছেন।
তাঁর সাধের কোচবিহার রাজ্য তিনি পাবেন, নাকি গোটা উত্তরবঙ্গকে ভেঙে আলাদা করা হবে, অথবা গোর্খাল্যান্ডের পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে এরই মধ্যে গঠিত হবে আর একটি ছোট রাজ্য— রাজনীতির এই ভাগের খেলা এখন চলবে উত্তরবঙ্গে। সেখানে জীবন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
তবে তিনি ঘুঁটি হবেন, নাকি ঘুঁটি চালবেন, সেটা সময়ই বলবে। তখন নতুন করে খুলবে জীবন-কাহিনির পরের পর্ব।
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy