Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

চিতাবাঘ টেনে নিয়ে গেল এক তরুণীকে

গত বছর অক্টোবর মাসে মাদারিহাটের চা বলয়ে চিতাবাঘের হানায় একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তার পর ডিসেম্বর মাস থেকে রামঝোরা, ঝুমচিপাড়া, তুলসীপাড়া, গ্যারগেন্দা-সহ নানা চা বাগানে চিতাবাঘ-মানুষের সংঘাতের বাড়তে শুরু করে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
মাদারিহাট শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:৩৫
Share: Save:

বনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম আলিপুরদুয়ার সফর চলাকালীন মাদারিহাটের চা বলয়ে চিতাবাঘের হানায় এক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ গ্যারগেন্দা ও তুলসীপাড়া চা বাগানের মাঝে ওই যুবতীকে কামড়ে ঝোপের মধ্যে টেনে নিয়ে যায় একটি চিতাবাঘ। পরে তুলসীপাড়া চা বাগান থেকে যুবতীর দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনা জানাজানির পরে দেহ আটকে রাখেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। পাশাপাশি তাঁরা পাঁচ ঘণ্টা ধরে বনকর্মীদের ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখান। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যার সময় দেহটি উদ্ধার করে বন দফতর। গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বনমন্ত্রী।

গত বছর অক্টোবর মাসে মাদারিহাটের চা বলয়ে চিতাবাঘের হানায় একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তার পর ডিসেম্বর মাস থেকে রামঝোরা, ঝুমচিপাড়া, তুলসীপাড়া, গ্যারগেন্দা-সহ নানা চা বাগানে চিতাবাঘ-মানুষের সংঘাতের বাড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, গত বছর অক্টোবর মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই বাগানগুলিতে চিতাবাঘের হানায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। জখমও হয়েছেন বেশ কয়েক জন। অন্য দিকে, বিষ মেশানো খাবার খাইয়ে দু’টি চিতাবাঘকে মেরে ফেলারও অভিযোগ ওঠে বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে।

এই পরিস্থিতি এড়াতে ব্যাপকহারে খাঁচা পাতা শুরু করে বন দফতর। যাতে ধরা পড়তে থাকে একের পর এক চিতাবাঘ। বর্তমানেও রামঝোরা ও তুলসিপাড়া চা বাগানে খাঁচা পাতা রয়েছে বলে বন দফতর সূত্রের খবর। এর পাশাপাশি গত ফের্বুয়ারি মাসের পর থেকে চিতাবাঘের হানায় নতুন করে কোন মৃত্যু বা জখমের ঘটনা না হওয়ায় খানিকটা স্বস্তিতে ছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনা ফের একবার চিতা বাঘ নিয়ে নতুন আতঙ্ক তৈরি হল মাদারিহাটের বিভিন্ন চা বাগানের বাসিন্দাদের মনে।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার চিতাবাঘের হানায় মৃত্যু হওয়া তরুণীর নাম গীতা প্রজা (১৯)। তাঁর বাড়ি গ্যারগেন্দা চা বাগানের ১৩ নম্বর লাইনে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে স্থানীয় সুখা নদীর ধারে গিয়েছিলেন গীতা। যে জায়গাটি গ্যারগেন্দা ও তুলসীপাড়া চা বাগানের সীমানা বলেই পরিচিত। অভিযোগ, সেই সময় আচমকাই ঝোপ থেকে একটি চিতাবাঘ বেরিয়ে এসে গীতার গলায় কামড় দিয়ে তাঁকে টেনে নিয়ে ঝোপে ঢুকে যায়। খানিকক্ষণ পর তুলসীপাড়া চা বাগান থেকে গীতার দেহ উদ্ধার হয়।

এই খবর পেয়ে বন দফতরের কর্মীরা দেহ উদ্ধার করতে গেলে তাঁদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বাসিন্দারা। খবর পেয়ে বীরপাড়া ও মাদারিহাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভের পর বাসিন্দাদের বুঝিয়ে দেহটি উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। বনকর্তারা জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের জন্য এ দিনই দেহটি আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বনকর্তারা অবশ্য চা বাগানে থাকা ঝোপঝাড়কেই দায়ী করেছেন। জলদাপাড়ার ডিএফও কুমার বিমল বলেন, ‘‘এ দিনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। মৃতের পরিবার সরকারি ক্ষতিপূরণ পাবে। তবে সমস্ত চা বাগানে ঝোপঝাড় সাফাই করাটা খুবই জরুরি। আমরা এ দিন গ্যারগেন্দা ও তুলসীপাড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষকে সেটা জানিয়েছি।’’ বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনা রুখতে কী কী করা যায়, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা নিতে বলেছি বনকর্তাদের।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Leopard Girl Madarihat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE