‘ঠাকুর ঘরে কে?’’ প্রচলিত প্রবাদের উত্তর যেন বদলে গেল কোচবিহারের সুখধনেরকুঠি গ্রামের তরুণ রায়ের বাড়িতে। মঙ্গলবার বাড়ির ঠাকুর ঘরে ঢুকে পড়ল একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ। খবর পেয়ে পুন্ডিবাড়ি থানার পুলিশকর্মীদের পাশাপাশি কোচবিহার, জলদাপাড়া, চিলাপাতা থেকে বনকর্মীরা সেখানে ছুটে যান। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় বনকর্মীরা ঘুমপাড়ানি গুলিতে চিতাবাঘটি কাবু করেন। সেখান থেকে সেটিকে উদ্ধার করে চিলাপাতায় জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আগে চিতাবাঘটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। দেওয়া হয় স্যালাইন।কোচবিহারের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘরটিকে তার জালির ঘেরাটোপ দিয়ে মুড়ে ফেলে দু’বারের চেষ্টায় চিতাবাঘটিকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করা সম্ভব হয়।’’ জলদাপাড়ার ডিএফও পরভীন কাশোয়ান জানান, স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে ওই চিতাবাঘটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুন্ডিবাড়ি থানা এলাকার সুখধনেরকুঠি গ্রাম থেকে আলিপুরদুয়ারের মথুরা চা বাগানের দূরত্ব সাত থেকে আট কিলোমিটার। চিলাপাতার জঙ্গলও খুব বেশি দূরে নয়। সম্ভবত সেখান থেকেই সোমবার রাতে চিতাবাঘটি সুখধনেরকুঠি গ্রামে ঢুকে পড়ে। রাতের অন্ধকারে গ্রামের ঝোপেও চিতাবাঘটি ঘোরাঘুরি করে। তবে ঘটনা জানাজানি হয় গভীর রাতে। বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে ছাগলের আতর্নাদ শুনতে পান স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ রায়। সন্দেহ হওয়ায় তিনি বেড়ার ফুটো দিয়ে টর্চের আলো ফেলতেই দেখেন চিতাবাঘটি ছাগলের গলায় থাবা বসিয়েছে। আতঙ্কে চিৎকার শুরু করেন তিনি। প্রতিবেশীরাও ছুটে আসেন। ততক্ষণে অবশ্য ওই গোয়াল ঘর সংলগ্ন বাড়ির ঠাকুর ঘরে ঢুকে পড়ে চিতাবাঘটি। পরিস্থিতি দেখে বাড়ির লোকজন, পড়শিরা মিলে ওই ঘরটি দ্রুত বাইরে থেকে বন্ধ করে দেন। ঠাকুর ঘরে বন্দি হয়ে গজরাতে থাকে সেটি।
তরুণ রায় বলেন, ‘‘ছাগলের আতর্নাদ শুনে গোয়ালে একেবারে চিতাবাঘ ঢুকে পড়বে স্বপ্নেও ভাবিনি। চিতাবাঘটি পরে পাশের ঠাকুর ঘরে ঢুকে পড়ে। আতঙ্কে সারা রাত ঘুমোতে পারিনি।ঠাকুর ঘর থেকেই এ দিন চিতাবাঘ উদ্ধার হয়।’’ পাতলাখাওয়া পঞ্চায়েতের প্রধান নাসিরউদ্দিন মিয়াঁ বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের মতো আমরাও এ নিয়ে ভীষণ রকম চিন্তায় ছিলাম। শুনেছি রাতে গ্রামের ভুট্টা খেতেও দেখা গিয়েছিল। জন্তুটি উদ্ধার হওয়ায় সকলেই স্বস্তি পেয়েছেন।’’
তথ্য সহায়তা: পার্থ চক্রবর্তী