আট বছর ধরে শিলিগুড়ি হাসপাতালের ল্যাপরোস্কপিক মেশিন খারাপ হয়ে রয়েছে। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে এই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। মেশিন মেরামত করা যাবে, না নতুন মেশিন কেনা হবে তা নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক এবং সুপারের ভিন্ন মত। অথচ এ বিষয়ে জানেনই না শিলিগুড়ি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানলেও কোনও উদ্যোগ নেননি এত দিন। জিজ্ঞাসা করা হলে জানান, স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে। ওঁরাই যা করার করবেন। শহরের চিকিৎসকেরা মনে করছেন এই ধরনের পরিষেবা আরও আগে উদ্যোগ নিয়ে চালু করা উচিত কথা ছিল।
শিলিগুড়ি হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথবাবু এর আগে রাজ্য স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। তাঁকে জিজ্যাসা করা হলে, তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয় আমাকে গত পাঁচ বছরে কেউ জানাননি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ দার্জিলিং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন জানিয়েছি। দ্রুত ওই মেশিন পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে।’’ আট বছর ধরে মেশিনটি খারাপ হয়ে থাকলেও বিকল্প ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘জানতে পেরেই দফতরকে জানিয়েছি।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় দশ বছর আগে ২০০৬ সালে বাম আমলে লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে বসানো হয়েছিল ল্যাপরোস্কপিক মেশিনটি। সেটা দিয়ে বছর দুয়েক গলব্লাডার স্টোন, অ্যাপেনডিক্সের মতো অপারেশনগুলি করা হয়েছে। মাঝে মধ্যেই মেশিনটি খারাপ হয়ে যেত বলে হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক জানান। তাঁর দাবি, বেশি সময় লাগে বলে এই মেশিনটি যাতে ঠিক মতো কাজ না করে তার জন্য কয়েকজন কর্মীর যোগসাজশ থাকতে পারে বলে তাঁর দাবি। দু’বছর মত চলার পর ২০০৮ সাল নাগাদ মেশিনটি একেবারেই অচল হয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। সেই সময় থেকেই শিলিগুড়ি হাসপাতালে শল্য চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত রাজর্ষি গুহকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সমস্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি নতুন মেশিন বসানো থেকে কাজ করছি। দু’বছর এই মেশিনটি অস্ত্রোপচারের কাজে দারুণ সহায়ক হয়েছিল। তার পরে মেশিনটি খারাপ হয়ে গেলে আর চালু করা হয়নি।’’ এটি চালু হলে রোগীদের সুবিধা হবে। সব ক্ষেত্রেই ওপেন সার্জারি করার দরকার পড়বে না বলে তাঁর মত। তিনি আরও জানান, সামান্য মেরামত করে নিলেই মেশিনটি সক্রিয় হতে পারে। যদিও তাঁর দাবি মানতে নারাজ শিলিগুড়ি হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘ওই মেশিনটি মেরামত সম্ভব নয়। নতুন মেশিন কিনতে হবে। তার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই মেশিন সারানো সম্ভব হলে যিনি এই দাবি করেছেন ওই চিকিৎসক নিজে মেরামত করে দিন। আমার কাছে বিল জমা করলে আমি তা মঞ্জুর করিয়ে দেব।’’ যদিও সুপারের দাবি ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের এক কর্মীও। তাঁর মতে, ‘‘সমস্ত মেশিনে অ্যানুয়াল মেনটিনেন্স কন্ট্র্যাক্ট বা এএমসি করানো থাকে। সেই চুক্তির মাধ্যমেই মেরামত করানো যায়। সুপার কেন এমন বলছেন বুঝতে পারছি না।’’
হাসপাতালের গাফিলতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিলিগুড়ির অন্য চিকিৎসকরাও। চিকিৎসক মনোরঞ্জন সাহার দাবি, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের রোগী পরিষেবা দেওয়ার ব্যপারে আরও একটু উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল। দ্রুত সমস্যার সমাধান করুন।’’ পশ্চিমবঙ্গ ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সম্পাদক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘মেশিন নিয়ে সাধারণ মানুষের মাথাব্যথা নেই। মানুষ চায় পরিষেবা। বিষয়টি যত দ্রুত স্বাস্থ্য কর্তারা বুঝতে পারবেন ততই মঙ্গল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy