প্রতীকী ছবি
তিনটি ‘টি’-এর উপরে বরাবর দাঁড়িয়ে উত্তরবঙ্গ— টি, টিম্বার, টুরিজম। এর মধ্যে টিম্বার বা কাঠের বাজার ইদানীং একটু মন্দা। তবে চা, পর্যটন উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে এখনও প্রধান দুই স্তম্ভ। সেই চা তো বটেই, পর্যটনের বাজারে জোর ধাক্কা দিয়েছে লকডাউন। বাগান তা-ও খুলে গিয়েছে বেশ কিছু দিন হল। কিন্তু পর্যটন?
এই সমস্যা কিন্তু শুধু উত্তরবঙ্গ বা এই রাজ্যে নয়, গোটা বিশ্বেই পর্যটনের বাজার এ বারে মার খেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কিছু দেশে পর্যটন অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। তার মধ্যে ইটালিও রয়েছে, যারা করোনা সংক্রমণে এর মধ্যেই জেরবার। সম্প্রতি তারা কিন্তু পর্যটন বাঁচাতে সেই স্থানগুলি থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। অল্প করে লোক যাচ্ছে। সমস্যা অবশ্য তাতেও রয়েছে। কারণ, বেশির ভাগই লোকই ভাববে, এখন যাওয়া ঠিক নয়। তার উপর ভারতের মতো দেশ, যেখানে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা কম, সেখানে তো বিদেশি পর্যটক আসার সম্ভাবনা কম হবেই। এমনকি, দেশের পর্যটকরাও খুব বেশি বার হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই পর্যটন শিল্পে এখনই রেহাই নেই। এ ক্ষেত্রে কিছু সাহায্য দরকার ছিল। যেমন, পরিবহণ, হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের যদি কিছু ছাড় দেওয়া যেত। এই ক্ষেত্রে প্রচুর সংগঠিত ও অসংগঠিত কর্মী রয়েছেন। তাঁদের চাকরি হারানোর আশঙ্কাও থাকছে।
চায়ের উৎপাদন লকডাউনের ফলে ভাল মতো ধাক্কা খেয়েছে। ফার্স্ট ফ্লাশের উৎপাদন মার খেয়েছে। রফতানির ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়েছে চা। তবে বাগানে বিধিনিষেধ মেনে একশো শতাংশ কর্মীকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। এর সঙ্গে এসেনশিয়াল কমডিটি অ্যাক্ট শিথিল করে কিছু ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তবে সেই সুবিধা ব্যবসায়ীরা কী পাবেন, তা স্পষ্ট নয়। রফতানির বাজার মার খেয়েছে আম-লিচুর ক্ষেত্রেও। তাই উত্তরবঙ্গের এই দুই মরসুমি ফলও দেশের বাজারেই বিক্রি করতে হবে এবার। তাতে আয় মার খাবে। গমের মতো ফসল কেনার জন্য ৭৫ হাজার কোটি টাকা খরচের কথা বলছে কেন্দ্র। এ রাজ্যে গম কম উৎপাদন। বরো ধান উঠেছে। তা কেনার ক্ষেত্রে রাজ্য কেন্দ্রের অর্থ পাবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
উত্তরবঙ্গে এখন অতি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি শিল্পও কম নয়। তারাও লকডাউনে মার খেয়েছে। কেন্দ্র আর্থিক প্যাকেজে বলেছে, ঘুরে দাঁড়াতে ব্যাঙ্ক ঋণ পাবে এমএসএমই সংস্থাগুলি। যাদের ঋণ আছে, তাঁরাও বাড়তি ধার নিতে পারবেন। কিন্তু ব্যাঙ্কগুলি কতটা ঋণ দিতে চাইবে, সেটা বড় প্রশ্ন। অতীতেও দেখা গিয়েছে, সরকার ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেওয়ার কথা বললেও ব্যাঙ্ক সব ক্ষেত্রে তা দেয় না। তার উপর এ বারে ব্যাঙ্কের ব্যবসাও মার খেয়েছে। বরং ঋণ মকুব বা কম সুদে নতুন ঋণ জাতীয় ঘোষণা হলে বেশি ভাল হত। তা না হওয়ায় চাহিদা এবং জোগান, দু’দিক থেকেই সমস্যা হতে পারে। কেন্দ্র যদিও দাবি করছে, উভয়ই চাঙ্গা হবে। তারা বলছে, চাহিদা তিন ধরনের— ভোগ্য সামগ্রী, বিনিয়োগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সামগ্রীর চাহিদা। এগুলি বাড়বে। ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা এর মাধ্যমে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতিতে টাকার জোগানও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
(লেখক উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy