ঘণ্টা চারেক আগে হঠাৎ সেচ দফতরের বাস্তুকারদের কাছে আসত এনএইচপিসি কর্তৃপক্ষের এসএমএস। কখনও কখনও টেলিফোন। আর আগাম কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই পাহাড় থেকে প্রচণ্ড বেগে নেমে আসা জলে ভেসে যেত তিস্তা নদী সংলগ্ন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা।
বর্ষার মরশুমে প্রতি বছরের এই ছবিটা এবার বদলাতে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার। তাই বন্যা পরিস্থিতি ঠেকাতে চার ঘণ্টা আগে এসএমএস বা টেলিফোন নয়, অন্তত ২৪ ঘন্টা আগে সরকার, স্থানীয় প্রশাসনকে জল ছাড়ার আগাম খবর দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এনএইচপিসি কতৃর্পক্ষকে জানিয়ে দিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার দুপুরে শিলিগুড়ির তিস্তা সেচ ভবনে প্রাক বর্ষা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন মন্ত্রী। সেখানে সেচ, বিপর্যয় মোকাবিলা, আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকরা ছাড়াও এনএইচপিসি-র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই সেচমন্ত্রী ওই কথা জানিয়ে দেন এনএইচপিসি-র আধিকারিকদের। এনএইচপিসি-র তরফেও আশ্বাস দেওয়া হয় তাঁদের পদক্ষেপের কথা, রাজ্য সরকারকে দ্রুত জানানো হবে।
সরকারি সূত্রের খবর, প্রতি বছর বর্ষার মরশুমে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদী লাগোয়া এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। বর্ষায় স্বাভাবিক নিয়মে নদীতে জল বেড়ে যায়। কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে জল ঢোকে। কিন্তু এনএইচপিসি কর্তৃপক্ষ পাহাড় থেকে জল ছেড়ে দেওয়ায় তিস্তা নদী সংলগ্ন দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। ফসলি জমি, বনভূমি জলমগ্ন হওয়া ছাড়াও প্রচুর মানুষকে বন্যার ত্রাণ শিবিরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। রাজ্য সরকারের তরফে বারবার এনএইচপিসি কর্তৃপক্ষকে আগাম খবর দিতে বলা হলেও তা ঠিকঠাক হয় না বলে সেচ দফতরের বাস্তুকারদের অভিযোগ। ওই অফিসারেরা জানান, কখনও কয়েক ঘন্টা আগে এসএমএস করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। কখনও শেষ সময়ে ফোন করে আগে লাইন মেলেনি বলেও অজুহাত আসে। কিন্তু জল ছেড়ে দিতেই চর লাগোয়া বাসিন্দারা তো বটেই সেচ দফতরও বিপাকে পড়ে যায়।
সেচমন্ত্রী রাজীববাবু বলেন,‘‘কয়েক ঘন্টা আগের এসএমএস বা ফোন নিয়ে আর কিছু শুনতে চাই না। অনেক হয়েছে, এবার নিয়ম পাল্টাতেই হবে। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। হঠাৎ করে লোকজন, এলাকা প্লাবিত হবে আর আমাদের অফিসারেরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করবেন এটা চলবে না। এনএইচপিসি-র অফিসারদের পরিষ্কারভাবে ২৪ ঘন্টা আগে জল ছাড়ার খবর জানাতে বলা হয়েছে।’’ মন্ত্রী জানান, তাঁরা আগাম খবর পেলে, ক্যানেল বা ব্যারেজগুলির জলের স্তর নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে পারবেন। তেমনিই, বাসিন্দাদের আগেভাগে সরিয়ে নিরাপদে রাখা যাবে।
মন্ত্রীর নির্দেশ প্রসঙ্গে এনএইচপিসি-র আঞ্চলিক দফতরের মুখপাত্র ভারতেন্দু শর্মা বলেন, ‘‘কাউকে জলে ভাসিয়ে দেওয়াটা এনএইচপিসি উদ্দেশ্য নয়। সেই জন্য আমরা নানা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এলাকায় এলাকায় সাইরেন বাজানো। জল বাড়ার সময় কী কী করণীয় সে সম্পর্কে তার সচেতনতা বাড়াতে কাজ চলছে। রাজ্যের সেচমন্ত্রী যা বলেছেন, তা নিয়েই উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হবে। নিশ্চয়ই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ হবে।’’
সিকিম, দার্জিলিং জেলা মিলিয়ে গত কয়েক দশক ধরে তিস্তা নদীর জলকে ঘিরে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে। সিকিমেই ছোটবড় মিলিয়ে অন্তত ৪০টি প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের অংশ রয়েছে ৭টি। ১৭২ কিলোমিটার তিস্তা নদী সিকিম এবং দার্জিলিঙের পাহাড়ি এলাকা দিয়ে বইছে। আরও ৯৮ কিলোমিটার রাজ্যের সমতল এলাকায় রয়েছে। পাহাড়ে চারটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার, বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি এবং এনএইচপিসি-র মধ্যে সমঝোতাপত্র সই হয়েছে। গত বছর তিস্তা এবং রঙ্গিত নদীর উপর মোট ২৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য ওই সমঝোতাপত্র সই হয়। এ ছাড়া রম্ভি (১৩২ মেগাওয়াট) এবং কালীঝোরাতে (১৬০ মেগাওয়াট) জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এই দুটি কেন্দ্র থেকেই জল বাড়লেই তা ছাড়া হয়। তখন গজলডোবা ব্যারেজ থেকে জল ছাড়তে হয় সেচ দফতরকে। তাতে সেবক, কালীঝোরা, তিস্তাবাজার, রম্ভি, জলপাইগুড়ি, রাজগঞ্জ, ময়নাগুড়ি-সহ ডুয়ার্সের কিছু কিছু এলাকায় প্লাবিত হয়ে পড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy