Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

হাতবদল গড়ের, রোজ বাড়ছে তাপ

দলের কর্মীরাই অনেকে একান্তে বলছেন, ‘‘একেই বোধহয় বলে, ভোট যার জনতা তাঁর।’’ তাঁরা জানাচ্ছেন, রবির নামে ধ্বনি দেওয়া পরিচিত মুখের অনেকেই এখন গেরুয়া শিবিরে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার ও তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৯ ০৭:০৪
Share: Save:

তখন লোকসভা নির্বাচনের প্রচার চলছে। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে এগিয়ে চলেছে তৃণমূল নেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথের ঘোষের গাড়ি। যেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ছে, পিলপিল করছে মানুষ। মুখের সেই চিরপরিচিত হাসি নিয়ে রবি বলছেন, “কী রে, সব ঠিক আছে তো।” সবাই হেসে উঠছেন তাঁর সঙ্গে। ভোটের ফল প্রকাশের পরে সেই চির পরিচিত মুখগুলোই যেন কেমন বদলে গিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কনভয় ঢুকতেই আওয়াজ উঠছে, “গো ব্যাক রবীন্দ্রনাথ।” এলাকার এই ‘হাতবদলেই’ রোজই যেন বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ।

দলের কর্মীরাই অনেকে একান্তে বলছেন, ‘‘একেই বোধহয় বলে, ভোট যার জনতা তাঁর।’’ তাঁরা জানাচ্ছেন, রবির নামে ধ্বনি দেওয়া পরিচিত মুখের অনেকেই এখন গেরুয়া শিবিরে। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতেই পিলপিল করছে মানুষ। সেই মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করে তুফানগঞ্জ নিজেদের গড়ে পরিণত করেছে বিজেপি। নিজেদের গড় পুনরুদ্ধারে মরিয়া তৃণমূলও। আর তাতেই দ্বন্দ্ব বাড়ছে তুফানগঞ্জে। রবীন্দ্রনাথের কথায়, “মানুষ আমাদের পক্ষেই আছেন। সে জন্যেই সন্ত্রাস করে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে বিজেপি।” বিজেপির কোচবিহার জেলার সভানেত্রী মালতী রাভা পাল্টা বলছেন, “মানুষ তো রায় জানিয়ে দিয়েছেন। তৃণমূলের সঙ্গে কেউ নেই। কিছু দুষ্কৃতী রয়েছে।”

কোচবিহারের তুফানগঞ্জ এলাকার বেশিরভাগ মানুষ বরাবর এক পক্ষেই থেকেছেন। বাম আমলে সিপিএম নেতাদের দাপটে তটস্থ থাকত মহকুমা, এখনও সেই কথা মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। বাম জমানায় দীর্ঘসময় সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক হিসেবে থাকা চণ্ডী পালের বাড়িও ছিল তুফানগঞ্জে। রাজ্যে শাসন ক্ষমতা পাল্টাতেই তৃণমূলের রবীন্দ্রনাথ ঘোষের গড় হয়ে ওঠে ওই এলাকা। এ বারে ফের তা হাতবদল হওয়াতেই সংঘর্ষ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার, স্বাধীনতার দিবসের দিনও উত্তেজনা ছড়ায় তুফানগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। ধলপল ২ পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের অভিযোগ তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে আসলে বিজেপি কর্মীরা বাধা দেয় এবং তাদের আট জন কর্মী গুরুতর আহত হয়। বিজেপির পাল্টা দাবি, জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নামে তৃণমূলের লাঠিয়াল বাহিনী তাদের এক দলীয় কর্মী বাড়িতে ভাঙচুর করে। এ ছাড়া, বক্সিরহাট, নাককাটিগছ ও বালাভূতেও নানা অভিযোগে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

তৃণমূল সূত্রে খবর, দল রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় থাকায় সেই সুযোগে হাতছাড়া হয়ে যাওয়া তুফানগঞ্জ পুনরুদ্ধারে চেষ্টার কোনও খামতি রাখছেন না দলের নেতৃত্ব। প্রতিনিধি দল থেকে শুরু করে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি সবাইকে নিয়ে এসেছে তৃণমূল। প্রত্যেককে ঘিরেই বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি। এই অবস্থায় কিছুদিন যাওয়ার পরে এবারে ফের সংগঠিত হতে শুরু করেছে তৃণমূল। তুফানগঞ্জ ১ নম্বর ব্লকের নাটবাড়ি, চিলাখানা, মারুগঞ্জ, বলরামপুরের মতো এলাকাতে ইতিমধ্যেই নিজেদের প্রভাবে বাড়িয়ে নিয়েছে তৃণমূল। এবারে তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের নাককাটিগছ, ধলপলেও রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেছে তারা।

ফুলে ফুলে লড়াই • ২৭ জুলাই: তুফানগঞ্জের নাককাটিগছের দ্বিপড়পাড়ে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ। বক্সিরহাট থানার মানসাইয়ে অস্ত্র উদ্ধার। • ৩ অগস্ট: রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির পরেই নাটাবাড়ি এবং বলরামপুর ১-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, তাদের মণ্ডল সভাপতি বাড়িতে বোমা। • ৫ অগস্ট: রবীন্দ্রনাথ ঘোষের জনসংযোগ যাত্রায় টোটোতে অস্ত্র নিয়ে মিছিলের অভিযোগ। মন্ত্রীর অস্বীকার। পুলিশ জানায়, এলাকার মানুষ একজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। • ৬ অগস্ট: তুফানগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকে দু’জন গ্রেফতার। তুফানগঞ্জ শহরে তৃণমূল কার্যালয় ভাঙচুর। বিজেপির বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জ। • ১০ অগস্ট: তুফানগঞ্জ থানার এক সিভিক ভলেন্টিয়ার ও দুই ব্যক্তিকে মারধর দ্বিপরপাড়ে। • ১৪ অগস্ট: নাককাটিগছ পঞ্চায়েত বিজেপির হাত থেকে পুনরুদ্ধারের দাবি তৃণমূলের। তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে জখম এক ভিলেজ পুলিশ, এক স্কুলছাত্র। • ১৫ অগস্ট: ছাটরামপুর, বালাভুত, বক্সিরহাটে দফায় দফায় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ। জখম সব মিলিয়ে ১৪। • ১৬ অগস্ট: তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ ফের উত্তেজনা ছড়ায় নাককাটিগছের ব্যাপারীপাড়ায়।

এই অবস্থার মধ্যে বিজেপি কোনও ভাবেই এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে রাজি নয়। নিয়মিত নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বিজেপি সংগঠন মজবুত করার দিকে এগোচ্ছে। তাতে নতুন করে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের দিনও তুফানগঞ্জের তিন জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে। ১০ জন জখম হয়েছে। পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। বাম নেতা আব্দুর রউফ বলেন, “পুলিশ কড়া হাতে ব্যবস্থা না নিলে উত্তেজনা বাড়তেই থাকবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch Behar Clash TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy