পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য বন দফতরের ব্যবস্থা জলপাইগুড়িতে।নিজস্ব চিত্র
মহারাজ ঘাটের জঙ্গল লাগোয়া পিচ রাস্তায় মঙ্গলবার সকাল ৭টা নাগাদ এসে দাঁড়াল সরকারি বাস। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা বাসে উঠল। বাস রওনা দিল পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে। বাড়ির দরজার এক পাল্লা খোলা, আর একটা বন্ধ। বন্ধ পাল্লার আড়ালে দাঁড়িয়ে বাসের চলে যাওয়া দেখলেন বিষ্ণু দাস। আশ্বস্ত হলেন। গত মাসে মাধ্যমিক পরীক্ষার শুরুর দিন পরীক্ষার্থী ছেলে অর্জুনকে নিয়ে তিনি মোটরবাইকে রওনা দিয়েছিলেন পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে। দ্রুত পৌঁছতে ধরেন জঙ্গলপথ। আচমকা দাঁতাল হাতি তেড়ে এসে শুঁড়ে আছড়ে, পিষে মারে অর্জুনকে। এর পরেই বনপথ বন্ধ করে জঙ্গল লাগোয়া এলাকার পরীক্ষার্থীদের সরকারি গাড়িতে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষার দিনগুলির মতো মঙ্গলবার, উচ্চ মাধ্যমিক শুরুর দিনেও সে ভাবে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হল।
মহারাজ ঘাটের ১৬ জন পরীক্ষার্থীকে এ দিন বন দফতরের পাহারায় বাসে চাপিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। বাস ছাড়ার পরে, অর্জুনের বাবা বললেন, ‘‘সে দিনও যদি এমন হত, আমার ছেলেটা বাঁচত!’’ চোখ বেয়ে জল নামছে বিষ্ণু দাসের। রাতে ঘুমোতে পারেননি। বুনো হাতির ডাকে এখন রাতে ঘুম আসে না তাঁর। আগে লোকালয়ে হাতি এলে তাড়ানোর ডাক পড়ত। চোখের সামনে ছেলের মৃত্যুর পরে, হাতির ডাক শুনলেই অশান্ত হয়ে ওঠেন ৫০ ছুঁইছুঁই বিষ্ণু।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর আগের রাতেও ১৬টি হাতির দল ছিল মহারাজ ঘাটের জঙ্গলে। বিষ্ণু বলেন, ‘‘গভীর জঙ্গল থেকে ডাক ভেসে এসেছে। ভেবেছি, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা! এত ছেলেমেয়ে যাবে! রাতে আর ঘুম আসেনি!’’ এ দিন জলপাইগুড়ি জেলার জঙ্গল-লাগোয়া এলাকার প্রায় ৫০০ পরীক্ষার্থীকে বন দফতর এবং প্রশাসন বাসে-গাড়িতে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছে।
এ দিন গভীর রাতে জলদাপাড়া জঙ্গল লাগোয়া আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের সিধাবাড়ির মুন্সিপাড়া গ্রামে ঢুকে পড়ে একটি হাতি। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার কিছু কলাগাছ ও ফসলের ক্ষতি করে ভোরের আলো ফুটতেই হাতিটি জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। শিলিগুড়ি মহকুমা এবং পাশের জঙ্গলেও হাতি ঘুরছে বলে বন দফতর সূত্রের খবর। তবে মঙ্গলবার হাতি জঙ্গলের বাইরে আসার খবর মেলেনি।
বাগডোগরা, পানিঘাটা, বামনপোখরি, টুকুরিয়াঝাড় জঙ্গল এলাকা থেকে আড়াইশোরও বেশি পরীক্ষার্থীকে প্রশাসন, বন দফতর গাড়িতে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছে। আলিপুরদুয়ারের বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকায় সকাল-সকালই তৈরি ছিল উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাস। ছিল ছোট গাড়ি। কোথাও কোথাও ছিল ‘ঐরাবত’ গাড়িও। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণ সহায়ক নভোজিৎ দে বলেন, ‘‘জঙ্গল-লাগোয়া এলাকার পরীক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নেই পরীক্ষা দিয়েছে।’’
কোচবিহারে বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকায় পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে ছ’টি নজরদারি দল গড়েছে বন দফতর। এক জন বিট অফিসারের নেতৃত্বে গড়ে আট জন করে কর্মী প্রতিটি দলে রয়েছেন। পাতলাখাওয়া, আটিয়ামোচর, জামালদহ, নাগুরুরহাটের মতো এলাকাকে বিভিন্ন সময় হাতি, বাইসন, চিতাবাঘের মতো বন্যপ্রাণীর আনাগোনার ঘটনার জেরে ‘সংবেদনশীল’ বলে চিহ্নিতকরা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy