পঞ্চায়েত ভোটের আগে হিংসায় আক্রান্তদের পরিবারের সঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (মাঝে সানগ্লাস চোখে)। —নিজস্ব চিত্র।
বিস্মিত হয়েছেন তিনি। হয়েছেন আশ্চর্য এবং ব্যথিতও। শনিবার প্রায় সারা দিন কোচবিহার ঘুরে রবীন্দ্রনাথের কবিতা উদ্ধৃত করে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস জানালেন, এই বাংলার চিত্তে ভয় এবং শির নত। অবিলম্বে পরিস্থিতি বদলাতে হবে। একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে হিংসা কবলিত সমস্ত এলাকা তিনি ঘুরে দেখতে চান। চান, মানুষ ভয় কাটিয়ে সুষ্ঠু ভাবে ভোট দিক।
শুক্রবার রাতে আচমকাই ‘অশান্ত’ কোচবিহার পরিদর্শনে এসে রাজ্যপাল ঘোষণা করেন, আর হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। ভোটের আগে হিংসার অভিযোগ পেলেই পদক্ষেপ করবেন তিনি। রাজভবনে যেমন ‘শান্তিকক্ষ’ তৈরি হয়েছে, তেমন হেল্প লাইনও থাকবে। তাঁর গাড়ি থামিয়ে দিয়েও অভিযোগ জানাতে পারবেন যে কেউ। এর পর শনিবার সকাল থেকে কোচবিহার সার্কিট হাউসে ভিড় জমে যায়। বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমের প্রতিনিধিরা শাসকদলের বিরুদ্ধে হিংসার অভিযোগ নিয়ে রাজ্যপাল বোসের দ্বারস্থ হন। সকলের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলে ঘোষণামাফিক দিনহাটা যান রাজ্যপাল। রাজনৈতিক সংঘর্ষে আহতদের খোঁজ নিতে হাসপাতালে যান। শাসক-বিরোধী নির্বিশেষে সব পক্ষের আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘সারা দিন যা শুনলাম, যা দেখলাম তা নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা সংক্ষিপ্ত ভাবে বলছি... বিভিন্ন দলের জনপ্রতিনিধি, বিধায়ক, সাংসদ থেকে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীদের কাছ থেকে তাঁদের বক্তব্য শুনেছি। এখন নিজের অভিমত বলতে চাই।’’ এর পর রাজ্যপাল বলেন, ‘‘এই বাংলা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তিনি লিখেছেন, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির’। কিন্তু বিভিন্ন উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শনের পর আমি বিস্মিত হয়েছি। আমি ব্যথিত হয়ে বলছি, এই বাংলার চিত্তে ভয়ে এবং শির নত। কিন্তু গণতান্ত্রিক পরিবেশে এমনটা অভিপ্রেত নয়। এমনটা আমি প্রত্যাশাও করিনি।’’
প্রায় সারা দিন কোচবিহার ঘুরে দেখার পর নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘‘যা দেখলাম, যা শুনলাম, তাতে আমি মর্মাহত। (হিংসায়) সন্তানহারা মাকে দেখলাম। এক স্ত্রীকে দেখলাম, যিনি তাঁর স্বামীকে হারিয়েছেন। অনাথ হয়েছে শিশু। কোচবিহারের সাধারণ মানুষকে আতঙ্ক গ্রাস করেছে। আমরা সবাই সাধারণ মানুষ। আর সাধারণ মানুষ চায় না যে, সমাজে এমন অশান্তি ঘটুক, কোনও রকম হিংসা হোক। এক জন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে আমি চাই, পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠু এবং অবাধ হোক। ভয়ডরহীন ভাবে যেন প্রত্যেক ভোটার ভোট দিতে পারেন। কোচবিহারের মাটিতে সার্বভৌমত্বের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে।’’ রাজ্যপাল বোস জানান, হিংসায় যুক্ত প্রত্যেক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হবে। প্রত্যেক মূলচক্রীকে পাকড়াও করতে হবে। এ নিয়ে প্রশাসনকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে বলেন তিনি।
পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ ইস্তক বাংলার নানা জায়গায় অশান্তির ঘটনা ঘটছে। প্রাণ হারিয়েছেন শাসক, বিরোধী দুই পক্ষের লোকজন। উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে যে দুই জেলায় বার বার হিংসার ঘটনা ঘটেছে, তার একটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা। অন্যটি কোচবিহার। ইতিমধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার হিংসা কবলিত ভাঙড়, ক্যানিং পরিদর্শন করেছেন রাজ্যপাল। শনিবার তিনি কোচবিহার ঘুরে দেখেন। এবার কি উত্তর দিনাজপুরের চোপড়াতেও যাবেন? সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন শুনে রাজ্যপালের জবাব, ‘‘এখনই আমি এটা খোলসা করতে চাই না।’’ পর মুহূর্তেই তাঁর সংযোজন, ‘‘যে সব জায়গায় হিংসার ঘটনা ঘটবে, সর্বত্র আমি যেতে চাই।’’ তিনি আবারও জানান, কোনও অভিযোগ থাকলে তাঁর গাড়ি থামিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন সাধারণ মানুষ। তিনি শুনবেন।
যদিও রাজ্যপালের এই সফরের পিছনে ‘রাজনৈতিক অভিসন্ধি’ দেখছে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘উনি (রাজ্যপাল) তো বিজেপির হয়ে ভোটপ্রচারে এসেছেন। যেখানে যেখানে গেলে বিজেপির পক্ষে সুবিধা হবে বলে মনে করেছেন, সেখানেই গিয়েছেন। কিন্তু যে চেয়ারে উনি বসেছেন, সেই চেয়ারটার আলাদা মর্যাদা আছে। রাজ্যপালের উচিত ছিল সেই চেয়ারটাকে সম্মান জানানো। তিনি বোধ হয় সেটা ভুলে গিয়েছেন।’’ উদয়নের অভিযোগ, যে যে বিজেপি কর্মীর বাড়িতে রাজ্যপাল গিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই সমাজবিরোধী হিসেবে কুখ্যাত এলাকায়। রাজ্যপাল বেছে বেছে শুধু বিজেপি কর্মী এবং বিজেপি-ঘনিষ্ঠদের গিয়েছেন।
উদয়নের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপির জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘বিজেপির লোক আহত এবং নিহত হলে রাজ্যপাল তো তাঁদের বাড়িতেই যাবেন। শাসকদলের কর্মীরা এখানে অত্যাচার করছে।’’ পাশাপাশি, রাজ্যপালের সফরের পর তাঁরা কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছেন বলে জানান ওই বিজেপি নেতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy