ত্রিপাক্ষিক চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। — ফাইল ছবি।
জিটিএ গঠনের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। পাহাড়ে উন্নয়নের জন্য ওই চুক্তি হয়েছিল। তৃণমূল এ সবের পিছনে ‘বড় পরিকল্পনা’ দেখছে। বিজেপি যদিও জানিয়েছে, এটা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নিজস্ব বিষয়।
২০১১ সালের ১৭ জুলাই জিটিএ (গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) তৈরির সময় কেন্দ্র, রাজ্য এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। এ বার সেই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। আরও জোরালো ভাবে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিও জানাল। এই দাবি নিয়ে তারা দিল্লি যাবেও।
শুক্রবার শিলিগুড়ির দাগাপুরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সম্পাদক রোশন গিরি। তিনি বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট, কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। জিটিএকে কেন্দ্র করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার যে সমর্থন ছিল, ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে তা প্রত্যাহার করা হল। ২০১৫ সালে সুভাষ ঘিসিংয়ের মৃত্যুর দিন শেষ ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছিল, তার পর থেকে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক বা রিভিউ মিটিং নিয়ে হেলদোল নেই কোনও সরকারের। আমরা জিটিএকে সমর্থন করছি না।’’
রোশন একহাত নিয়েছেন বিজেপিকেও। তিনি বলেন, ‘‘জিটিএ চুক্তি অনুযায়ী কোনও কিছুই হয়নি। পাহাড়-সহ সমতল মিলিয়ে জিটিএ তৈরির আর্জি জানালেও সেটা হয়নি। বিজেপি অন্তত বলছে রাজনৈতিক সমাধানের কথা। দেখা যাক কী হয়। পাহাড়ের রাজনৈতিক সমাধান কোনটা ভাল হবে, সেটা বিজেপি ভেবে দেখুক। ২০০৯ থেকে আজকের তারিখ পর্যন্ত বিজেপিকে সমর্থন করেছে পাহাড়বাসী। তারা অনেক কিছুই আশা দেখিয়েছে, কিন্তু কিছুই হয়নি।’’
আগামী দিনে কী ভাবে এগোবে আন্দোলন, তাও জানিয়েছেন রোশন। তাঁর কথায়, ‘‘সেন্ট্রাল কমিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। সেখানে যেমন রয়েছেন হামরো পার্টির সুপ্রিমো অজয় এডওয়ার্ড, তেমনি সমর্থন রয়েছে বিনয় তামাংয়েরও। আমাদের দাবি গোর্খাল্যান্ড। তবে এ বার পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্সে আন্দোলন হবে না, আন্দোলন হবে দিল্লিতে।’’
শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পাহাড় স্বাভাবিক রয়েছে, উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে। কিন্তু যখনই কোনও নির্বাচন আসে, বিধানসভা বা লোকসভা, তখনই কেন্দ্র থেকে এমন ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হয়। ফলে যে উন্নয়ন হয়, তাতে বাধা সৃষ্টি হয়। ২০২৪ এর নির্বাচনকে মাথায় রেখে অনেকেই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে।’’ এর পরেই গৌতম সব কিছুর জন্য ঠারেঠোরে বিজেপিকেই দায়ী করেছেন। তিনি দাবি করেন, গোটা পরিকল্পনা আসলে বিজেপিরই। তাঁর কথায়, ‘‘এগুলো একটা বড় গেম প্ল্যানের অংশ। তাতে কিছু আসে যায় না। মানুষ স্থিতিশীলতার পক্ষে। কেন্দ্রের এমপি থেকে বিধায়কেরা বিভাজনের কথা বলেন, এরা ঘুরিয়ে অন্য ভাবে বলছেন। বড় গেম প্ল্যানের অংশ এটা।’’
সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, চুক্তি থেকে এ ভাবে সরে আসা যায় না। তিনি বলেন, ‘‘এমন কখনও হয় না। কেন্দ্র, রাজ্য ও বিমল বা রোশনদের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল। স্বাক্ষর হওয়ার পর সেটা সরকারি নথি হয়ে যায়। সেখান থেকে এ ভাবে সরে যাওয়া যায় না। চুক্তির মূল বক্তব্যে মতের অমিল হতে পারে, কিন্তু সই প্রত্যাহার করা যায় না।’’
শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এ বিষয়ে জানান, ‘‘পাহাড়ের ঘটনা প্রবাহের উপর আমাদের নজর রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে রাজ্য থেকেও তা জানানো হবে। সাংসদ রাজু বিস্টও এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে আলোচনা করেছেন।’’ শঙ্করের দাবি, পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমেই এই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। তবে জিটিএ তৈরি হওয়ার সময় সাংবিধানিক স্বীকৃতির কথা বলা হয়েছিল। তা হয়নি। বাকি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তাদের দলের বক্তব্য রেখেছেন, এটা তাদের বিষয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy